চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে প্রায়শই হেলিকপ্টার নামে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম থেকে কোনো রোগীকে ঢাকা নিয়ে যাওয়া কিংবা ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আনতে হেলিকপ্টার নামে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে। আবার মাঝে মধ্যে কোনও ভিআইপি আসেন হেলিকপ্টারে করে। তখনো এই হেলিকপ্টার নামে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে। তবে তার আগে জেলা ক্রীড়া সংস্থার অনুমতি নিতে হয় কিংবা তাদের অবহিত করতে হয়। আর সেটাই করে সবাই। আর সচরাচর হেলিকপ্টার নামে স্টেডিয়ামের ভেতরে। কিন্তু গতকাল সকালে হঠাৎ করেই হেলিকপ্টার নেমে গেল স্টেডিয়ামের বাইরে অনুশীলন মাঠে। যেখানে সচরাচর বাচ্চারা ক্রিকেট কিংবা ফুটবল অনুশীলন করে থাকে। মুহূর্তেই পুরো স্টেডিয়াম এলাকা ধূলোয় অন্ধকার হয়ে যায়। কারণ এই মাঠটি যে বালিতে ভরা। কিন্তু এই মাঠে কেন হেলিকপ্টার নামল সেটা জানে না কেউই। জেলা ক্রীড়া সংস্থার একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার সাথে কথা বললেও তারা জানেন না কেন সেখানে হেলিকপ্টার নামছে। তবে পরে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া গেছে যখন মাঠের দক্ষিণ পাশে তৈরি করা হয় মঞ্চ আর অস্থায়ী বিশ্রামাগার। জানা যায়, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার হেলিকপ্টার সার্ভিস চালু করতে যাচ্ছে। আর তার সাথে ছোট ছোট ট্রিপও দেওয়া যাবে। যেটা হয়তো ১০ মিনিট কিংবা ২০ মিনিটের। আর সে কাজটি গতকাল শুরু করেছে স্টেডিয়ামের সামনের প্রশিক্ষণ মাঠ থেকে। প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন গতকাল তারা ৭টি ট্রিপ দিয়েছে। প্রতি ট্রিপে ৬ জন। আর জনপ্রতি ভাড়া ৫০০০ টাকা।
গতকাল সকালে যখন হেলিকপ্টারটি নামে মাঠে তখনো খেলা করছিল অনেক বাচ্চা। যেহেতু শুক্রবার স্কুল বন্ধ থাকে তাই এদিন সকালে প্রায় পাঁচ শতাধিক বাচ্চা সে মাঠে অনুশীলন করে। গতকাল কয় মিনিট পরপর হেলিকপ্টার নামাতে তাদের অনুশীলন করা আর হয়নি। অথচ বর্তমান জেলা প্রশাসক যিনি চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের খেলার মাঠগুলোর উন্নয়নে। যার অংশ হিসেবে তিনি আউটার স্টেডিয়াম সংস্কারের কার্যক্রম শুরু করেছেন। অথচ আরেকটি খেলার মাঠেই কিনা হেলিকপ্টার রাইড করা হয়েছে গতকাল। অবশ্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ সভাপতি রাকিব হাসান জানান, তারা এই রাইডের অনুমতি দিয়েছেন। সেটা অবশ্য ভিন্ন কারণে। দেশের পর্যটনের উন্নয়নে নতুন একটি ইভেন্ট হিসেবে এই হেলিকপ্টার রাইড চালু করতে চায় একটি প্রতিষ্ঠান। যা দেশের পর্যটনে নতুন একটি মাত্রা যোগ করবে। আর সেটা পরীক্ষা করতেই কেবল এই রাইড উদ্বোধনের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, তাও জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাদের প্রদত্ত রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে। তারা জানিয়েছিলেন এই মাঠে কোনও খেলা নাই। স্টেডিয়ামের ভেতরে খেলা আছে। কিন্তু এই মাঠে যে বাচ্চারা অনুশীলন করে সেটা তাদের জানানো হয়নি বলেও জানান রাকিব হাসান। তিনি বলেন, আমরা কখনোই খেলাধুলার মাঠে অন্য কিছু চাই না। আমরা চট্টগ্রামে আরো মাঠ সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখানে যেটা হয়েছে সেটা জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে। তিনি বলেন, খেলার মাঠে কখনোই এই কাজ করা হবে না। তাছাড়া গত ১৫ মে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। যাতে বলা হয়েছে, খেলার মাঠ আর স্টেডিয়ামগুলোতে খেলা ছাড়া অন্য কোনও কার্যক্রম যেমন –মেলা, কনসার্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ অন্য কোনও অনুষ্ঠান করা যাবে না। সে জায়গায় এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের অনুশীলন মাঠে এ ধরনের হেলিকপ্টার রাইড হতাশ করেছে ক্রীড়াঙ্গন সংশ্লিষ্টদের।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা কখনোই খেলার মাঠে কোনও কিছু করার পক্ষে না। যেহেতু এটা একটা পরীক্ষামূলক ইভেন্ট ছিল তাই স্বল্প সময়ের জন্য এর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে এই হেলিকপ্টার রাইড পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রাজিব মাহমুদ বলেন, প্রতি মাসে একদিন এই হেলিকপ্টার রাইড পরিচালনা করার কথা তাদের। তবে প্রথম দিনে তাদের অভিজ্ঞতা সুখকর নয় মোটেও। কারণ মাঠের প্রচণ্ড ধূলার জন্য যাত্রীরা অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তাই তারা এই মাঠ থেকে এই হেলিকপ্টার রাইড পরিচালনা করবেন কিনা সেটা ভেবে দেখবেন।












