বান্দরবানে রোয়াংছড়ি-রুমা অভ্যন্তরীণ সড়কটি চালু হলে বাঁচবে সময়, কমবে দূরত্ব। খুলবে এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। মাত্র বিশ কিলোমিটার সড়কে রোয়াংছড়ি-রুমা দুটি উপজেলার মধ্যে রচিত হবে নতুন সেতুবন্ধন।
প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে রোয়াংছড়ি উপজেলা সদর থেকে রুমা উপজেলা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজের টেন্ডার আহবান করা হয়। ছয়টি গ্রুপে উন্নয়ন কাজগুলো বাস্তবায়নের কার্যাদেশ পায় বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে ছ’জন ঠিকাদার। কার্যাদেশ মোতাবেক ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর অভ্যন্তরীণ সড়কটি নির্মাণের কাজও শুরু হয়। চার বছর মেয়াদি সড়ক নির্মাণ কাজটি ২০২২ সালে শেষ হওয়ার কথা। ইতিমধ্যে বিশ কিলোমিটারের মধ্যে ষোল কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ কাজ অনেকটায় শেষ হয়েছে। বাকি চার কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজও চলমান রয়েছে। তবে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে লকডাউন এবং বরাদ্দ সংকটে উন্নয়ন কাজটি সঠিক সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্টরা। প্রকৌশলী ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, রুমা উপজেলার সাথে বান্দরবান জেলা শহরের দূরত্ব হচ্ছে ৫৪ কিলোমিটার। আর রোয়াংছড়ি উপজেলা থেকে বান্দরবান জেলা শহর হয়ে রুমা উপজেলার দূরত্ব হচ্ছে প্রায় ৭৬ কিলোমিটার। তারমধ্যে বান্দরবান-রোয়াংছড়ি ২২ কিলোমিটার এবং রুমা-বান্দরবান ৫৪ কিলোমিটার সড়কপথ। এছাড়াও সড়কটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিপজ্জনক। বর্ষায় পাহাড়ে ধসে সড়কটি প্রায় সময় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পাহাড় ধসে প্রাণহাণির ঘটনাও ঘটেছে সড়কটিতে। কিন্তু নির্মাণাধীন রোয়াংছড়ি-রুমা সড়কটি চালু হলে সড়কের দূরত্ব কমবে প্রায় ১২ কিলোমিটার। বাঁচবে এক ঘণ্টারও অধিক সময়।
রুমা উপজেলার বাসিন্দা গণমাধ্যমকর্মী চনুমং মারমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার বাসিন্দার গণমাধ্যমকর্মী চাথোয়াই মারমা বলেন, রোয়াংছড়ি-রুমা অভ্যন্তরীণ সড়কটি শুধুমাত্র দুটি উপজেলার দূরত্ব গোছাবে না, সময়ও বাঁচবে। বান্দরবান-রুমা ৫৪ কিলোমিটার সড়কটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিপজ্জনক। বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে সড়কটিতে। বৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও। এতে রোয়াংছড়ি-রুমা নির্মাণাধীন অভ্যন্তরীণ সড়কটি নিরাপদ বিকল্প রাস্তা হিসাবে ব্যবহৃত হবে। কমবে প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়কের দূরত্বও। সড়কটি দু’পাশে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীদের অসংখ্য গ্রাম এবং কাজু বাদাম, আম, কমলা, লিচুসহ বিভিন্ন ধরণের মিশ্র ফলের বাগান রয়েছে। সড়কটি চালু হলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য চাষীরা সহজে বাজারজাত করণের সুযোগ পাবে।
ঠিকাদার আনিসুর রহমান সুজন ও মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, সড়কটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি ব্রীজ ও কালভার্ট নির্মাণের কাজ বাকি রয়েছে। বরাদ্দ না থাকায় দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করে বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। নির্মাণাধীন সড়কটি ইতিমধ্যে রুমা-রোয়াংছড়ি উপজেলাবাসীরা যাতায়াতের প্রয়োজনে ব্যবহার করছেন।
এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবানে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আব্দুল আজিজ বলেন, সড়কটি বান্দরবান সদর, রুমা ও রোয়াংছড়ি তিনটি উপজেলার মধ্যে সড়কের দুরত্ব কমাবে। সড়কে চলাচলকারীদের সময়ও বাঁচবে অনেক। রুমায় যেতে এতদিন সদর ও রোয়াংছড়ি উপজেলার মানুষদের বান্দরবান-চিম্বুক সড়ক হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ চুয়ান্ন কিলোমিটার রুমা সড়কপথে যেতে হত। তবে এখন রোয়াংছড়ি হয়ে নতুন সড়কে যেতে পারবে দ্রুত। সড়কটি শতভাগ নির্মাণ শেষ হলে পর্যটকরাও রোয়াংছড়ি হয়ে রুমা উপজেলা ভ্রমণ করতে পারবে। দুটি উপজেলার উৎপাদিত কৃষি পণ্য সহজে বাজারজাত করণের পথ তৈরি হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, রোয়াংছড়ি-রুমা সড়কটি দুটি উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। এটি জেলার কানেক্টিং রোড। নাইক্ষ্যংছড়ি-আলীকদম কানেক্টিং রোডেও কাজও চলমান রয়েছে। দুটি সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হলে বান্দরবান জেলা সদর হয়ে রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি সবগুলো উপজেলার মধ্যে অভ্যন্তরিন সংযোগ সড়ক তৈরি হবে।
বান্দরবান থেকে সরাসরি পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের জেলা কক্সবাজার যাওয়া যাবে। অন্যদিকে রোয়াংছড়ি-রুমা সড়কটি চালু হলে খুলে যাবে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন দুয়ারও। উন্মোচিত হবে পর্যটন শিল্পে নতুন দ্বার। রোয়াংছড়ির দর্শণীয় ট্যুরিস্ট স্পট দেবতাখুম, শিলবান্ধা ঝর্ণা দেখে পর্যটকেরা রুমার বগালেক, রিজুক ঝর্ণা, ক্যাওক্রাডং পাহাড়, জাদীপাই ঝর্ণা, তিনাপ সাইতার, রাইখ্যংপুকুর লেক ভ্রমণ করতে পারবে সহজে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছায় দুর্গম জনপদে পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথে সড়কটি নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে।











