করোনা পরিস্থিতিতে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন শিক্ষক-অভিভাবকদের একাংশ। এর প্রেক্ষিতে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় আগামী ৩০ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল-কলেজ) খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে সরকার। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলবে আরো পরে। এর আগেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে কিছু গাইডলাইন জারি করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন, ক্লাসরুমে দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থী বসানো এবং শিক্ষার্থীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহসহ বেশ কয়েক দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যদিও এসব নির্দেশনা মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে পুরোপুরি প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা। এদিকে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মত-দ্বিমতও রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী
জসিম উদ্দিন খাঁন
অধ্যক্ষ
বাকলিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন খাঁন বলেন, মার্চ মাসের শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। এটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। আমাদের জানামতে শিক্ষক-কর্মচারীদের অধিকাংশই এর মধ্যে করোনা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। সংক্রমণের হারও পর্যায়ক্রমে কমে আসছে। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে মাউশির যে নির্দেশনা, সে প্রস্তুতিও আমাদের রয়েছে।
আমরা ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কলেজ খুললে সকলকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান করে আসতে হবে। মাস্ক ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী-অভিভাবককে কলেজে আসার সুযোগ দেয়া হবে না। গেটে দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা রক্ষীদের এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেয়া থাকবে। মোট কথা, সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করে হলেও শিক্ষার্থীরা যাতে পড়ালেখায় যুক্ত হতে পারে। কলেজের শিক্ষকরাও সেটাই চান।
আমরা প্রস্তুত আছি
শাহিদা নাসরিন শিউলি
প্রধান শিক্ষক
চিটাগাং আইডিয়াল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহিদা নাসরিন শিউলি বলেন, দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এ সময়ে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে বাস্তবিক একটা দূরত্ব রয়ে গেছে। তবে এ মাসের শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। সরকারের সব ধরনের নির্দেশনা মেনেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে আমরা প্রস্তুত আছি। শিক্ষার্থীরাও স্কুলে ফিরতে উদগ্রীব। আমরা চাই, শিক্ষার্থীদের যাতে ক্ষতি না হয়, সেভাবে পদক্ষেপ নিয়েই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চালু হোক।
এখন আর বাসায় পড়তে ইচ্ছে করে না
ঐশী, শিক্ষার্থী
চট্টগ্রাম সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ঐশী বলেন, প্রায় এক বছর ধরে কলেজ বন্ধ। কলেজ-ক্লাস চালু থাকলে পড়ায় ঝোঁক থাকে। কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর প্রথম প্রথম বাসায়ও পড়ার আগ্রহ ছিল। কিন্তু এখন আর বাসায় পড়তে ইচ্ছে করে না। আমার মতো বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর একই অবস্থা। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও পরিস্থিতি বিবেচনা করে খোলা উচিত বলে আমি মনে করি।
কারণ, শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করেই সরকার দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। প্রায় এক বছর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা শুনছি। বিশ্বের অনেক দেশ মাঝখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। খোলার পর শিক্ষার্থীরাও আক্রান্ত হওয়ায় আবার বন্ধ করে দিতে হয়েছে। তাই আমাদের দেশেও পরিস্থিতি দেখে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
ধাপে ধাপে স্কুল খুলে দেয়া উচিত
প্রহর নন্দী, শিক্ষার্থী
ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রহর নন্দী বলে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল খুলে দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। গত এক বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এ সময়ে শহরের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করার সুযোগ পেয়েছে। তবে গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ শিক্ষার্থী সুযোগের অভাবে অনলাইন ক্লাসে সংযুক্ত হতে পারেনি। এতে করে তাদের পড়ালেখার বিপুল ক্ষতি হয়েছে। আমরা জেএসসি পরীক্ষায়ও অংশ নিতে পারিনি। এর নেতিবাচক প্রভাব কম-বেশি আমাদের সকলের ওপরই পড়ছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিকল্প নেই। তাই আমার অভিমত যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধাপে ধাপে স্কুলগুলো খুলে দেয়া উচিত।