খুরুশকুলবাসীর দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন এখন দৃশ্যমান। নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত খুরুশকুল সেতু। আগামী ১১ নভেম্বর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। সড়কবাতি আর রঙ পালিশের কাজ শেষ হলে পূর্ণতা পাবে সেতুটি। কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র তিন মিনিটের দূরত্বে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন সেতু ও সড়ক। সেতু–সড়কের পাশেই বাঁকখালী নদী আর কয়েকটি জলাভূমি। যা ঘিরে পরিযায়ী পাখিদের বিচরণে মুখর হয়ে উঠে পুরো এলাকা। সেতু নির্মিত হওয়ায় অর্থনীতিতে ধারুণ এক সম্ভাবনা দেখছে সংশ্লিষ্টরা। এই সেতু শুধুমাত্র দুই পাড়ের সংযোগ ঘটায়নি, নতুন করে সংযোগ স্থাপন করবে খুরুশকুলের অর্থনীতিতে। বিশিষ্টজনরা বলছেন, উদ্বোধন হলে এই সেতু আর বাঁকখালী নদীর প্রকৃতি ঘিরে হবে কক্সবাজারের নতুন পর্যটন জোন। ১১ নভেম্বর উদ্বোধনের পর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে জেলার সর্বপ্রথম ব্যয়বহুল ও আধুনিক এই সেতু।
কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের মূখপাত্র এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, খুরুশকুলের সঙ্গে শহরের দূরত্ব আগে ছিল প্রায় ৩০–৪০ মিনিটের। সেতু নির্মাণ হওয়ায় এ দূরত্ব কমে হয়েছে মাত্র তিন মিনিট। সেতু ও এর আশেপাশের এলাকা ঘিরে স্বপ্ন দেখাচ্ছে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার। এছাড়াও আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ বেশকিছু সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে।
কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস. এম সাদ্দাম হোসেন বলেন, জায়গাটিতে পৌরসভার ময়লা–আবর্জনা ছিল। সেখান থেকে সরকার উন্নয়ন করেছে। যে সেতুটি নির্মাণ করেছে তা শুধু দুই পাড়ের মানুষের যাতায়তের সংযোগ ঘটাবে না, দুই পাড়ে তৈরি হবে পর্যটনের নতুন হাব। এছাড়াও খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প হওয়ায় একটি অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
খুরুশকুল মনুপাড়ার বাসিন্দা নজরুল হুদা খোকন বলেন, সেতুটি নির্মাণের ফলে দূরত্ব যেমন কমেছে তেমনি এ অঞ্চলের শাক–সবজি, লবণ, মাছসহ নানা কিছু দ্রুত কক্সবাজার শহরে পৌঁছাতে পারবে। এছাড়াও পর্যটন বা অর্থনৈতিক অঞ্চলের যে স্বপ্ন দেখেছে খুরুশকুলবাসী তা বাস্তবায়নের পথে আরও একধাপ এগিয়ে গেছে বর্তমান সরকার।
এলজিইডি বলছে, ২০১৯ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজে বিঘ্নতা ঘটাতে পারেনি কোন কিছুই। প্রায় কাজ শেষ হয়েছে, তাই সময়সীমার আগেই চূড়ান্ত করে বুঝিয়ে দিতে পারবে বলে সন্তুষ প্রকাশ করছে এলজিইডি কর্মকর্তারা। ২৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৫৯৫ মিটার দীর্ঘ এই সেতুতে ৩টি ৬৫ মিটার গভীরের স্প্যান এবং ৫০ মিটারের ১০টি স্প্যান রয়েছে। এতো দীর্ঘ সেতু আগে কখনো দেশীয় নকশায় তৈরি হয়নি দাবি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের।
এলজিইডি কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন খান বলেন, এলজিইডি দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকে নিরলসভাবে কাজ করেছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজটি বুঝিয়ে দিতে পারার আশা তাদের। দুইপাড়ে আরও সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ চলমান বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, একটি সম্ভাব্য সময় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ১১ নভেম্বর উদ্বোধনের পর জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণের উদ্যোগের ফলে পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পরিবারকে খুরুশকুল আশ্রয়ন প্রকল্পে স্থানান্তরিত করছে সরকার। এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীসহ খুরুশকুলবাসীর চলাচলের সুবিধার্থে কস্তুরাঘাটস্থ বিআইডাব্লিউ ভবনের পশ্চিম পাশে নির্মিত হয়েছে খুরুশকুল সেতু। শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সবাই, সড়কবাতি আর রঙ পালিশের কাজ শেষ হলে পূর্ণতা পাবে সেতুটি।