খুরুশকুল বেইলি সেতু যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়ার শঙ্কা

ভেঙে গেছে রেলিং, উঠে গেছে পাটাতন

এম এ আজিজ রাসেল, কক্সবাজার | শুক্রবার , ২২ মার্চ, ২০২৪ at ৫:০১ পূর্বাহ্ণ

বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মিত কঙবাজারখুরুশকুল বেইলি সেতুর অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে। সেতুর প্রবেশমুখে দেবে গেছে একটি অংশ। ভেঙে গেছে সেতুর রেলিং। পাটাতনের বিভিন্ন অংশ উঠে গিয়ে ফুটো হয়ে গেছে। সেই সাথে খোলে পড়েছে নাটবল্টু। ভারী কোনো যানবাহন সেতুতে উঠলেই কাঁপন সৃষ্টি হয়। অনেকটাই বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেতু দিয়ে চলাচল করছে ৮টি ইউনিয়নের প্রায় দেড়লাখ মানুষ।

জানা যায়, ১৯৯৬ সালে বাঁকখালী নদীর উপর খুরুশকুলকঙবাজার সংযোগ সেতুটি নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। ২১৮ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৩ দশমিক ৭ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট সেতুটি নির্মাণের প্রায় ২৮ বছর পার হয়েছে। এই সেতু দিয়ে ঈদগাহ উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন, খুরুশকুল, চৌফলদন্ডী, ভারুয়াখালী ও পিএমখালী ইউনিয়নের প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ দৈনিক পারাপার করে। সংস্কারবিহীন এই সেতুটি যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে বলে শঙ্কা স্থানীয়দের।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহর থেকে সেতুর প্রবেশ মুখে উত্তরদক্ষিণ দুই পাশের গাইড ওয়ালগুলো ভেঙে গেছে। অনেক পাটাতন ভেঙে ফাঁকা ফাঁকা হয়ে গেছে। কিছু পাটাতন দেবে গেছে। আর কিছু কিছু পাটাতন ক্ষয়ে ভেতরের রড বেরিয়ে এসেছে। এরপরও সেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে এলাকাবাসী চলাচল করছে।

সেতুর নিচে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি পিলারের প্রলেপ উঠে ঝুলে পড়েছে। পানির উপরের অংশ বড় বড় গর্ত হয়ে গেছে। সেখানে শামুকঝিনুকসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণী বাসা বেঁধেছে। চারটি পিলারের ইট খুলে পড়েছে। পিলারের সঙ্গে পাটাতনের নাট নেই অধিকাংশ স্থানে। ফলে যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। সেতুর প্রবেশ মুখে ঝুঁকি এড়াতে দেয়া হয়েছে ব্যারিকেড। মালবোঝাই গাড়ির ধাক্কায় ব্যারিকেডের লোহার অংশ বাঁকা হয়ে গেছে। অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট।

চৌফলদন্ডি ইউনিয়নের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জসিম উদ্দিন জানান, দীর্ঘদিন ধরে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে শিশুরা সেতু পেরিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। গ্রামবাসীও এই সেতু পার হয়ে জেলা ও উপজেলা শহরে যাতায়াত করছেন।

সিএনজি টেঙিচালক নুরুল আমিন জানান, প্রতিদিন অন্তত চারপাঁচ বার যাত্রী নিয়ে সেতুটি পার হতে হয়। অনেক সময় মাঝ বরাবর গিয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত যানবাহনের ভারে সেতু নড়েচড়ে উঠে। ভয় লাগে। পাটাতনগুলো বাঁকা হয়ে গেছে। ছোট গাড়ির চাকা ফাটলে আটকে যায়। সপ্তাহে দুতিনটা ছোটখাটো দুর্ঘটনা এখানে ঘটছেই।

সেতুর পাশের দোকানদার রবিউল আলম বলেন, সেতু দিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত গাড়ি চলাচল করে। মালবোঝাই পিকআপ ব্রিজে উঠলেই ঝনঝনানি শুরু হয়। অনেকেই সেতুতে উঠার আগেই দোয়াদরূদ পড়ে নেয়।

খুরুশকুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ছিদ্দিকি বলেন, সেতুটি বর্তমানে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। খুরুশকুল এলাকার এক লাখ ৪০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা এই বেইলি ব্রিজ। কিন্তু সেতুটির এখন নড়বড়ে অবস্থা। এর মেয়াদ চলে গেছে অনেক আগে। এছাড়া আজকাল এমন সেতু দেশে খুব কমই আছে। দুর্ঘটনা এড়াতে মানুষের যাতায়াতের অন্যতম এই সেতু ভেঙে স্থায়ীভাবে একটি করার দাবি জানান তিনি।

কঙবাজার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর জানায়, কঙবাজারখুরুশকুল সংযোগ সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে অনেক আগেই চিহ্নিত করা হয়েছে। ভারী যানবাহন চলাচল না করার জন্য সেতুটির সম্মুখভাগে লোহার পাটাতন দিয়ে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে কঙবাজার সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহ আরেফীন বলেন, ১৮টি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণের জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ব্রিজ ডিজাইন উইং থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব ব্রিজের মধ্যে এই সেতুর নামও আছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডা. মিনহাজ ও এমপি মোতালেবের বিরুদ্ধে নদভীর যত অভিযোগ
পরবর্তী নিবন্ধআনজুমানের আলমগীর খানকায় হাজার হাজার মানুষের ইফতার