বাজার নিয়ন্ত্রণে চলতি মাসের শুরুতে চিনির আমদানির শুল্ক অর্ধেকে কমিয়ে আনে সরকার। পাইকারী ও খুচরায় শুল্ক কমানোর পর দাম কমার পরিবর্তে উল্টো বাড়তে থাকে। গত দুই দিনের ব্যবধানে পাইকারীতে প্রতি মণে (৩৭.২৩৭ কেজি) চিনির দাম ১০০ টাকা কমলেও খুচরা বাজারে বাড়ছে।
পাইকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার শুল্ক কমালেও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাজারে প্রভাব পড়ছে না। তবে ভোক্তারা বলছেন, চিনির বাজারে প্রশাসনের কোনো ধরণের নজরদারি নেই। যার ফলে ব্যবসায়ীরা কিছুদিন পর পর ইচ্ছেমতো দাম বাড়ান। খাতুনগঞ্জের পাইকারী বাজারে গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকারীতে প্রতি মণ চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৮৫০ টাকা। গত দুই দিন আগে বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৯৫০ টাকায়। অন্যদিকে কাজীর দেউরির খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। গত এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকায়। খাতুনগঞ্জের পাইকারী ব্যবসায়ী জানান, খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে যুগ যুগ ধরে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার অনেক প্রথা আছে যেগুলো আবার আইনগতভাবেও স্বীকৃত নয়। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ’। চিনি কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে বিভিন্ন আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই ওই স্লিপটিই বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয়, তার বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এক্ষেত্রে চিনির ডিও বেচাকেনা বেশি হয়। চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, বাজারে চিনির সরবরাহ ঘাটতি রয়েছে। আবার চাহিদা বেড়ে গেছে। তাই দামও বাড়ছে।
উল্লেখ্য, গত পহেলা নভেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রতি টন অপরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে। আগে সেটি ছিল ৩ হাজার টাকা। পরিশোধিত চিনি আমদানির শুল্ক ছিল টনপ্রতি ৬ হাজার টাকা, সেটিও কমিয়ে ৩ হাজার টাকা করা হয়েছে। আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই শুল্ক বহাল থাকবে বলা জাাননো হয়েছে। এনবিআরের তথ্যমতে, বর্তমানে চিনি আমদানিকারকদের ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক ও ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর ছাড়াও প্রতি টন চিনিতে নির্দিষ্ট ৩ হাজার টাকা শুল্ক দিতে হয়। সেটা কমিয়ে এবার ১ হাজার ৫০০ টাকা করা হলো।