নগরীর দেড়শ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ বিক্রির অভিযোগ তদন্তে মাঠে নেমেছে দুদক। গতকাল দুপুরে স্কুলটিতে অভিযান চালিয়ে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ পরিদর্শন করেছেন দুদক কর্মকর্তারা। পাশাপাশি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিদ্যালয় মাঠের জায়গার মালিকানা সংক্রান্ত আংশিক রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম–১ এর সহকারী পরিচালক সায়েদ আলমের নেতৃত্বে এনফোর্সমেন্টের অভিযানটি পরিচালিত হয়। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের জায়গা কেনা–বেচা নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এটি তদন্তে আমরা বিদ্যালয়ে গিয়েছি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে থাকা নথিপত্র যাচাই–বাছাই করা হয়েছে। ভূমি অফিস, সাব–রেজিস্ট্রার অফিসেও আমরা যাব। সেখান থেকেও যাবতীয় রেকর্ডপত্রাদি সংগ্রহপূর্বক পর্যালোচনা করা হবে। এরপর দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিশন বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহেদা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, খেলার মাঠটির মালিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মাঠটি আমাদের বিদ্যালয়ের ভোগ–দখলে আছে। কে বা কারা এটি বিক্রি করা হয়েছে মর্মে নামজারির আবেদন করেছে। আমরা প্রশাসনের সহায়তা প্রত্যাশা করছি। বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে অবগত আছেন।
জানা গেছে, ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সীমানার ভেতরে খেলার মাঠটির আয়তন প্রায় সাড়ে ১৫ কাঠা। সমপ্রতি ভূমি অফিসে মাঠটি ক্রয়সূত্রে নামজারির আবেদন করে একটি পক্ষ। এর পরই মূলত বিদ্যালয়ের মাঠ বিক্রির বিষয়টি প্রকাশ পায়। পরে এটি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। নথিপত্রে উঠে আসে, ২০০৬ সালে মাঠটি ৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অভিযোগ হচ্ছে, জালিয়াতির মাধ্যমে নথি সৃজন করে সরকারি বিদ্যালয়ের মাঠটি দখলের চেষ্টা হচ্ছে। এতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, ভূমি অফিস ও সাবরেজিস্ট্রি অফিসের একাধিক কর্মকর্তা জড়িত।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম–১ এর উপপরিচালক সুবেল আহমেদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সরকারি বিদ্যালয়ের জমি অবৈধভাবে ব্যক্তি মালিকানায় বিক্রি করে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতিসাধনের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় স্কুলটিতে অভিযান চালিয়ে মাঠ পরিদর্শন করা হয়েছে। এবং তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। আরো তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। সব তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা শেষে কমিশন বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উনিশ শতকের ব্রাহ্ম আন্দোলনের অন্যতম নেতা অন্নদাচরণ খাস্তগীর ১৮৭৮ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৭ সালে স্কুলটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল হিসাবে উন্নীত করা হয়। অন্নদাচরণের জামাতা, চট্টগ্রামের সামাজিক আন্দোলনের পথিকৃৎ যাত্রামোহন সেন বিদ্যালয়কে জমি ও ভবন দান করেন। একই বছর স্কুলটি সরকারিকরণ করা হয় এবং পরবর্তীতে বাংলা মাধ্যম স্কুল হিসাবে পাঠ্য কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৬ সালে জনৈক সমীর সেন শত কোটি টাকার ৩৩ শতকের মাঠটি জনৈক ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলামের কাছে ৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। খেলার মাঠের ওই ক্রেতা সমপ্রতি চট্টগ্রামে ভূমি অফিসে নাম জারির আবেদন জানালে মাঠ বিক্রির তথ্য বেরিয়ে আসে।
উল্লেখ্য, ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এ অঞ্চলের নারী শিক্ষার অন্যতম প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ স্কুলে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন তথা অগ্নিযুগের বিপ্লবী পটিয়ার প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারসহ দেশবরেণ্য অনেকে এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী ছিলেন।