খাদ্যপণ্যের অবৈধ মজুদে সাজা যাবজ্জীবন

বিল পাস ।। ‘কাল্পনিক নামে’ খাদ্য বিক্রি করলেও দণ্ড

| বৃহস্পতিবার , ৬ জুলাই, ২০২৩ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

খাদ্যপণ্য সরকার নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি মজুদ করলে যাবজ্জীবন বা সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রেখে নতুন আইন হয়েছে। গতকাল বুধবার সংসদে ‘খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) বিল, ২০২৩’ পাস হয়। নতুন আইনে খাদ্য বাজারজাত করার ক্ষেত্রে প্রকৃত নাম পরিবর্তন করে কোনো ‘কাল্পনিক নামে’ বিক্রি করলেও দুই বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড হবে। খবর বিডিনিউজের।

মূলত ১৯৫৬ সালের ফুড (স্পেশাল কোর্ট) অ্যাক্ট এবং ১৯৭৯ সালের ফুডগ্রেইনস সাপ্লাই (প্রিভেনশন অব প্রিজুডিশিয়াল অ্যাকটিভিটি) অর্ডিন্যান্স বাতিল করে নতুন এ আইন হল। গত এপ্রিলে মন্ত্রিসভায় পাস হওয়া প্রস্তাবিত আইনটি গতকাল সংসদে পাসের জন্য উত্থাপন করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। এরপর কণ্ঠভোটে তা পাস হয়। আইনসভায় অনুমোদিত এই বিল এখন রাষ্ট্রপতির অনুমোদনে আইন হিসেবে কার্যকর হবে।

সংসদে বিলের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, এই বিলের মাধ্যমে চালের ‘পলিশিং’ বন্ধ করতে পারলে ৪ লাখ মেট্রিক টন চালের অপচয় রোধ করা যাবে। গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, খাদ্যে উদ্বৃত্ত নিয়ে আমরা গর্ববোধ করলেও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে পারেনি। ফলে যে কারণে দেশের প্রায় সকল মানুষ কোনো না কোনো ব্যধিতে আক্রান্ত। এজন্য রাষ্ট্রের নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বিলের সাজা সংক্রান্ত ধারার সমালোচনা করে বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি প্রমাণ করতে পারেন যে তিনি আর্থিক বা অন্য কোনো প্রকার লাভের উদ্দেশ্য ছাড়া মজুদ করেছিলেন, তাহলে তিনি সর্বোচ্চ তিন মাস কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দন্তিত হবেন। এই ধরনের আইন কোথাও শোনা যায়নি। অপরাধ না করলেও তাকে সাজা ভোগ করতে হবে। জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ আইনটির অপব্যবহারের সুযোগ থাকা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এটা একটা ভয়াবহ আইন। এই আইনের আওতায় যে কাউকে যে কোনো সময়ে ধরা যাবে। ঘুষের একটা মহোৎসব শুরু হবে দেশে। যে কাউকে ধরে যাবজ্জীবন দণ্ড দিয়ে দেওয়া যাবে। এই আইনের ফলে দেশের কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াবে।

এসব সমালোচনার জবাবে খাদ্যমন্ত্রী সাধন মজুমদার বলেন, প্রকৃত মজুতদারদের চিহ্নিত করা সহজ বিষয়। কৃষকদের উপর এই আইন প্রয়োগের কোনো আশঙ্কা নেই। এই আইনের অধীনে প্রণীত বিধিমালায় এ বিষয়ে আরও পরিষ্কার করা হবে।

বিলে খাদ্যদ্রব্যের সংজ্ঞায় বলা হয়েছেযে কোনো প্রকার দানাদার খাদ্যদ্রব্য, যথা চাল, ধান, গম, আটা, ভুট্টা ইত্যাদি। শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি সরকার নির্ধারিত পরিমাণের বেশি পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য মজুদ করলে বা মজুতসংক্রান্ত সরকারের কোনো নির্দেশনা অমান্য করলে তা হবে অপরাধ। এর শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড। তবে এ ধরনের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি প্রমাণ করতে পারেন যে তিনি আর্থিক বা অন্য কোনো প্রকার লাভের উদ্দেশ্য ছাড়া মজুদ করেছিলেন, তাহলে তিনি সর্বোচ্চ তিন মাস কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই অপরাধ হবে অজামিনযোগ্য।

বিলে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন ও বিপণন সংক্রান্ত কিছু অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো অনুমোদিত জাতের খাদ্যশস্য থেকে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যকে ওই রূপ জাতের উপজাত পণ্য হিসেবে উল্লেখ না করে ভিন্ন বা কাল্পনিক নামে বিপণন করলে তা হবে অপরাধ। খাদ্যদ্রব্যের মধ্য থেকে স্বাভাবিক উপাদানকে সম্পূর্ণ বা আংশিক অপসারণ বা পরিবর্তন করে উৎপাদন বা বিপণন করলে সেটিও অপরাধ হবে। এছাড়া খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কৃত্রিম উপাদান মিশ্রণ করে উৎপাদন ও বিপণন করলে সেটিও হবে অপরাধ। লাইসেন্স ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স দিয়ে ব্যবসা চললেও তা অপরাধ হবে। আর এসব অপরাধের জন্য ২ বছর কারাদণ্ড অথবা অন্যূন ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।

বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণনসম্পর্কিত কোনো মিথ্যা তথ্য বা বিবৃতি তৈরি, মুদ্রণ, প্রকাশ, প্রচার বা বিতরণ করলে, তা হবে একটি অপরাধ। এর সাজা হবে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।

নতুন আইন বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আদালত থাকবে। এই আদালত ‘খাদ্যদ্রব্য বিশেষ আদালত’ নামে চিহ্নিত হবে। এই আইনের অধীন কিছু অপরাধের বিচার ভ্রাম্যমাণ আদালতেও করা যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধক্রাশ প্রোগ্রাম কি আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ, প্রশ্ন নগরবাসীর
পরবর্তী নিবন্ধচিকিৎসার সময়ও দিল না শ্রাবন্তী