খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় সঞ্চয় বাড়াতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ১৩ মার্চ, ২০২৫ at ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তাবিষয়ক বিভাগের প্রধান ফ্রান্সেসকো ব্রাঙ্কা সম্প্রতি জানিয়েছেন, অনিরাপদ খাবারের কারণে প্রতিদিন বিশ্বে অন্তত ১৬ লাখ মানুষ অসুস্থ হচ্ছে। এ ধরনের অনিরাপদ খাদ্য খাওয়ার কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়। তিনি জানান, খাদ্যসংক্রান্ত রোগে আক্রান্তদের মধ্যে ৪০ শতাংশই পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু। খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি সীমানা চেনে না উল্লেখ করে ব্রাঙ্কা জোর দিয়ে বলেন, ক্রমবর্ধমান হারে আন্তঃসংযুক্ত বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলে অনিরাপদ খাদ্যের কারণে সৃষ্ট ঝুঁকিগুলো স্থানীয় সমস্যা থেকে দ্রুত আন্তর্জাতিক জরুরি অবস্থায় পরিণত হতে পারে। তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক অংশেই মানবিক সংকট খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বিশ্বের সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা শিগগির তাদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘পভার্টি ম্যাপ অব বাংলাদেশ’ এর ফলাফলে দেখা গেছে, দেশে দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ২ শতাংশে জেলা ও উপজেলার হিসাবের ভিত্তিতে (জাতীয় হিসাব)। তবে গ্রামে দারিদ্র্য কমেছে। হাউজ হোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এঙপেনডিচার সার্ভেতে গ্রামে দারিদ্র্য ছিল ২০ দশমিক ৫ শতাংশ, যা পভার্টি ম্যাপে কমে হয়েছে ২০ দশমিক ৩ শতাংশ। এদিকে শহর এলাকায় দারিদ্র্য বেড়েছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ। আগে শহরে দারিদ্র্য ছিল ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এখন বেড়ে হয়েছে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। দারিদ্র্য ম্যাপে আরও দেখা যায়, দেশের সবচেয়ে দরিদ্র উপজেলা মাদারীপুরের দাসার উপজেলা ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১০ সালের সার্ভেতে এ উপজেলার দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৬ দশমিক ৬ শতাংশ। ঢাকার পল্টনে দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে কম ১ শতাংশ। এছাড়া নোয়াখালীতে সবচেয়ে গরিব কম বসবাস করে। এ জেলায় দারিদ্র্যের হার ৬ দশমিক ১ শতাংশ।

এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, দারিদ্র্য সম্পর্কে বিবিএস যে তথ্য দিয়েছে তা উদ্বেগজনক। তারা যে দারিদ্র্যের ম্যাপিং করেছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, মাদারীপুর জেলায় বাংলাদেশের সর্বাধিক দারিদ্র্য, সেখানে ৫৩ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। এ রকম আরো অনেক জেলা রয়েছে যেখানে দারিদ্র্যের হার বড়। দেখা যাচ্ছে, আমাদের দেশে দারিদ্র্য একটি বড় সমস্যা। দারিদ্র্য সমস্যা সমাধানের জন্য ভাতা প্রদান কোনো সমাধান হতে পারে না। তবে এ ধরনের ভাতা মানুষকে বেঁচে থাকার ন্যূনতম সহায়তা দিতে পারে, কিন্তু টেকসই সমাধান নয়। আমাদের টেকসই সমাধানের পথ খুঁজতে হবে, আমাদের জাতীয় সঞ্চয় বাড়াতে হবে। তার ওপর ভিত্তি করে জাতীয় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সেই বিনিয়োগের ওপর ভিত্তি করে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। কর্মসংস্থান বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের হাতে ক্রয়ক্ষমতা দেয়ার বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ধরনের উদ্যোগ যত দ্রুত নেই বা উপলব্ধি করি তত ভালো।

. জাহাঙ্গীর আলম তাঁর এক নিবন্ধে বলেছেন, প্রায়ই বলা হয়েছে যে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ রয়েছে। অথচ প্রায় প্রতি বছরই গড়পড়তা ৬০৭০ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয়েছে বিদেশ থেকে। ২০১৭১৮ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৯৮ লাখ টন। স্বাধীনতার পর মোট আমদানির পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টন। এর পর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রায় আড়াই শতাংশ থেকে কমে নেমে এসেছে ১ দশমিক ২ শতাংশে। অন্যদিকে মোট খাদ্যশস্যের কথিত উৎপাদন ১ কোটি টন থেকে বেড়ে হয়েছে ৫ কোটি টনেরও অধিক। অথচ খাদ্যশস্যের আমদানির পরিমাণ সে অনুপাতে হ্রাস না পেয়ে বরং বেড়ে গেছে দ্বিগুণেরও বেশি। এ ক্ষেত্রে কৃষি উৎপাদনের পরিসংখ্যান অতিমূল্যায়িত ভাবা অস্বাভাবিক নয়। অতি সমপ্রতি দেশে বিভিন্ন খাদ্যশস্য উৎপাদনের যে পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে তা অনেক ক্ষেত্রেই স্ফীত। যে কারণে বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অনেক সময় পণ্যের সরবরাহ সংকট হেতু বাজার অস্থির হয়ে পড়ছে। পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। আমদানির আগাম প্রস্তুতি না থাকায় বাজার নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্যনিরাপত্তা হলো খাদ্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা। অর্থাৎ কারো হাতে টাকা থাকলে সে খুব সহজে খাদ্য সংগ্রহ করতে পারবে। জনগণের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যের মজুত ও তার সহজলভ্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তাই হলো খাদ্যনিরাপত্তা। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সামপ্রতিক বছরগুলোয় চরম দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসা অনেক মানুষ এখন দারিদ্র্যসীমার সামান্য উপরে উঠেছে। এর ফলে হঠাৎ কোন বিপদ এলে সেটা মোকাবিলা করার মতো অবস্থা তাদের নেই। অনেক পরিবার, দারিদ্র্যসীমার ঠিক উপরে উঠে এলেও তাদের টিকে থাকার সামর্থ্য নেই। তাদের অর্থ সঞ্চয় করা বা পুঁজি জমানোর সক্ষমতা নেই। ধাক্কা সামলানোর মতো কোনো সম্পদ তাদের নেই। তাই খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে