খাতুনগঞ্জে রমজানের প্রস্তুতি

বিপুল পণ্য আমদানি, মজুদ বাড়ায় গত বছরের তুলনায় ভোগ্যপণ্যে কমেছে দাম

জাহেদুল কবির ম | মঙ্গলবার , ২৫ নভেম্বর, ২০২৫ at ৭:৩৪ পূর্বাহ্ণ

ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে রমজানের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। রমজানের বাজার ধরার জন্য ব্যবসায়ীরা দুই আড়াই মাস আগে থেকে পণ্য গুদামজাতকরণ শুরু করে। পরবর্তীতে সেইসব পণ্য ক্রেতাদের অর্ডার অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করে থাকেন। আগামী বছর রমজান শুরু হচ্ছে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে। সেই হিসেবে পাইকারী ব্যবসায়ীদের হাতে আছে জানুয়ারি পর্যন্ত। কারণ রমজানের দুই সপ্তাহ আগে পাইকারীতে পণ্য বেচাবিক্রি হ্রাস পায়। কারণ তখন এসব পণ্য চলে যায় খুচরা ব্যবসায়ীদের হাতে।

খাতুনগঞ্জের আমদানিকারকরা বলছেন, পণ্য বুকিং থেকে শুরু করে গুদামে আসা পর্যন্ত দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে। অনেক সময় বন্দর থেকে পণ্য ছাড় করতেও সময়ের প্রয়োজন হয়। রমজানের বাকি আছে আর আড়াই মাসের বেশি। রমজানকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে প্রচুর পরিমাণ ছোলা, মটর ও মসুর ডাল আমদানি হয়েছে। এছাড়া গত বছরের অনেক পণ্য গুদামে অবিক্রিত থেকে গেছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম কমার কারণে এ বছর সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম কমতির দিকে রয়েছে।

এদিকে রমজানের নিত্যপণ্যের তুলনামূলক বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতি মণ অস্ট্রেলিয়ান ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ টাকায়। কেজি হিসেবে দাম পড়ছে ৮৫ টাকা। এছাড়া গত বছর এই ছোলা বিক্রি হয়েছে ৯৫ টাকায়। প্রতি কেজি ভারতীয় ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা, গত বছর বিক্রি হয়েছে ১০৫ টাকায়। মোটা মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকা, গত বছর বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকায়। চিকন মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়, যা গত বছর বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা। প্রতি কেজি খেসারির ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়, যা গত বছর বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা। মটর ডাল বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা, গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৫৫ টাকা। এছাড়া সাদা মটর বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা, গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৫৪ টাকায়। প্রতি কেজি মুগ ডাল বিক্রি হচ্ছে ৮২ টাকা, গত বছর বিক্রি হয়েছিল ১২৫ টাকায়।

অন্যদিকে বর্তমানে প্রতি মণ (৩৭.৩২ কেজি) সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৬০০ টাকায়, যা গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৬ হাজার ২০০ টাকায়। প্রতি মণ পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৭৮০ হাজার টাকায়, গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৪ হাজার ৭০০ টাকায়। প্রতিমণ চিনি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৩৫০ টাকা, কেজি হিসেবে দাম পড়ছে ৯০ টাকা। গত বছর বিক্রি হয়েছিল ১২০ টাকায়। গত বছর সাধারণ মানের খেঁজুর (১০ কেজি) বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৬০০ টাকায়, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ টাকায়।

খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা জানান, রমজানকে কেন্দ্র করে ভোগ্যপণ্যের আমদানি আগের চেয়ে বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের দোকান ও গুদামে প্রচুর পরিমাণ পণ্য মজুদ রয়েছে। সাধারণত রমজান এলে শরবতের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই চিনির ব্যবহারও বাড়ে কয়েকগুণ। বর্তমানে বাজারে চিনির কোনো ঘাটতি নেই। এছাড়া সারা দেশে প্রায় ৮০ হাজার টন ছোলার চাহিদা থাকে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে ছোলা এসেছে। এছাড়া এর বাইরে রমজানে সাদা মটর ও মসুর ডালেরও চাহিদা বেড়ে যায়। ভোজ্যতেল, চিড়া এবং খেজুরের চাহিদাও বৃদ্ধি পায়। সাধারণত খেজুর আমদানি হয় আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, দুবাই ও সৌদি আরব থেকে। তাই এবার দাম সহনশীল থাকবে বলে আশা করা যায়।

বিএসএম গ্রুপের কর্ণধার আবুল বশর চৌধুরী আজাদীকে বলেন, এ বছর ভোগ্যপণ্যের বাজার নিম্নমুখী। রমজানকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা ভোগ্যপণ্য আমদানিতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। এ বছর পণ্যের সরবরাহেও কোনো ঘাটতি নেই। ইতোমধ্যে দাম কমছে। সামনেও দাম আরো কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড ও ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু বক্কর আজাদীকে বলেন, রমজানকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য আমদানি করেন। এ বছরও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। ইতোমধ্যে বাজারে বিপুল পরিমাণ ছোলা আমদানি হয়েছে। যার ফলে গত বছরের এই সময়ের তুলনায় প্রতি কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের অবস্থাও একই। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের কমছে, বর্তমানে খাতুনগঞ্জের পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে কম।

চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, রমজানের তিন চার মাস আগে থেকে পণ্য আমদানির জন্য ব্যবসায়ীরা এলসি (ঋণপত্র) খুলেন। ইতোমধ্যে অনেক পণ্যের চালান গুদামে এসে পৌঁছেছে। আমাদের দেশে প্রতি বছর ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। আবার তার সাথে পাল্লা দিয়ে আমদানির পরিমাণও বাড়ছে। বাজারে রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিশেষ করে ছোলা, মটর ডাল, মশুর ডাল, খেসারি ডাল এবং চিনির কোনো ঘাটতি নেই। প্রত্যেক ব্যবসায়ীর দোকান গুদামে পর্যাপ্ত পণ্য আছে। তবে আমাদের একমাত্র সমস্যা হচ্ছে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল। ওজন স্কেলের কারণে আমাদের খাতুনগঞ্জ থেকে এখন আর ব্যবসায়ীরা পণ্য নিতে আসেন না। কারণ এখান থেকে একটি ট্রাকে ১৩ টনের বেশি পণ্য পরিবহন করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ফলে তা পণ্যের দামের ওপর প্রভাব পড়ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকদমতলীতে কম্বলের গুদামে আগুন, নিভল সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর
পরবর্তী নিবন্ধবন্দর রক্ষা পরিষদের কর্মসূচি স্থগিত স্কপের অবরোধ চলবে