ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্যবসা–বাণিজ্যে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এলাচ বিক্রির ৫০ কোটি টাকা মেরে ব্যবসায়ী লাপাত্তা হওয়ার ঘটনার পর থেকে এ অবস্থা বিরাজ করছে। এলাচের পাওনাদাররা এখনো পথে পথে ঘুরছেন। এ অবস্থায় খাতুনগঞ্জে ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আস্থাহীনতা। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। দীর্ঘ বছর ধরে চলে আসা মৌখিক বিশ্বাসেও ফাটল ধরেছে। বিশ্বাসের লেনদেনে একের পর এক প্রতারণার ঘটনায় খাতুনগঞ্জের নিজস্ব বৈশিষ্ট হারাচ্ছে।
জানা গেছে, অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে ইতোমধ্যে অনেক বড় বড় শিল্প গ্রুপ চাক্তাই–খাতুনগঞ্জ থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। এছাড়া সংকীর্ণ সড়কে রাত–দিন যানজট লেগে থাকে। ফলে হেঁটে চলাফেরা করা দায়। চেক প্রতারণা এবং আরেকজনের টাকা মেরে উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনাও দিন দিন বাড়ছে। এছাড়া ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের বড় দারোগাহাটের ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেলের কারণে অনেক আমদানিকারক লাইটার জাহাজে করে নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জে পণ্য আনলোড করছেন। কারণ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় কিংবা দেশের অন্য কোথাও পণ্য পরিবহনের একটি ট্রাকে ১৩ টনের বেশি পণ্য পরিবহন করা যায় না। অথচ একসময় খাতুনগঞ্জ থেকে সারা দেশে সিংহভাগ ভোগ্যপণ্য পরিবহন হতো।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলেন, বিশ্বাসই খাতুনগঞ্জের লেনদেনের অন্যতম মাধ্যম। বছরের পর বছর এই প্রথা চলে আসছিল। বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) বা চেকের বিনিময়ে বাকিতে দৈনিক ৮০০ থেকে হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত লেনদেন চলে এই ভোগ্যপণ্যের বাজারে। গত তিন দশকে চাক্তাই–খাতুনগঞ্জে অন্তত শতাধিক প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। শুরুটা হয় ১৯৮৬ সালে। সর্বশেষ ৫ জুন পাওনারদের প্রায় ৫০ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান এলাচ ব্যবসায়ী নুর ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী নাজিম উদ্দিন। এভাবে ব্যবসায়ীদের টাকা মেরে আত্মগোপনে চলে যাওয়ার প্রবণতায় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। চাক্তাই–খাতুনগঞ্জে ছোট বড় প্রায় ১০ হাজারের বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। বাপ–দাদার আমল থেকে দেখে আসছি, বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে এই বাজারের ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যে নিয়মিত বিরতিতে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর পাওনা টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার ঘটনাও বাড়ছে। এর ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে। এখন তাই আগের মতো বিশ্বাস করাটা কঠিন হয়ে পড়ছে। এতে একদিকে যেমন খাতুনগঞ্জ বিশেষত্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে বাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন আজাদীকে বলেন, খাতুনগঞ্জে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্যবসা–বাণিজ্যে মন্দাভাব বিরাজ করছে। মূলত খাতুনগঞ্জের একজন এলাচ ব্যবসায়ী পাওনাদারদের টাকা মেরে উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনার পর থেকে পণ্য বেচাবিক্রিতে প্রভাব পড়েছে।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বিএসএম গ্রুপের কর্ণধার আবুল বশর চৌধুরী আজাদীকে বলেন, খাতুনগঞ্জে সম্প্রতি একজন ব্যবসায়ী লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আমরা তো কাউকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। এখানে যে যার মতো স্বাধীনভাবে ব্যবসা করছেন। তবে এ ধরনের ঘটনা স্বাভাবিকভাবে খাতুনগঞ্জের জন্য অস্বস্তিকর।