অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সড়ক যোগাযোগ বিস্তৃত হওয়ায় গত এক দশকে খাগড়াছড়ির পর্যটন খাত বিকশিত হয়েছে। এ খাতে মাসে লেনদেন প্রায় ১০ কোটি টাকা। পাহাড়, উপত্যকা, ঝিরি, অসংখ্যা ছোট-বড় ঝরনা, আলুটিলা রহস্যময় গুহাসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র নিয়ে বৈচিত্র্যময় খাগড়াছড়ি। তবে এক দশক আগেও পর্যটকদের আনাগোনা ছিল হাতে গোনা।
বর্তমানে খাগড়াছড়ি পর্যটকদের অন্যতম ভ্রমণ গন্তব্য। আলুটিলা, রিছাং ঝরনা, তৈদুছড়া, ঝুলন্ত ব্রিজ, শিলাছড়ি, মায়াবিনি লেকসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন। এছাড়া খাগড়াছড়ি হয়ে পর্যটকরা সাজেক যাচ্ছেন। পর্যটন কেন্দ্রগুলোর উন্নয়ন হওয়ায় ও পাহাড়ে সড়ক যোগাযোগ বিস্তৃত হওয়ায় খুশি ভ্রমণ পিসাসুরা।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা অনিকা, উর্মি ও ফয়সাল জানান, খাগড়াছড়ি ও সাজেক ভ্রমণে এসেছি। এখানে যাতায়াতের রাস্তা ভালো। সহজেই ঢাকা থেকে পাহাড়ি পথ ধরে এখানে এসেছি। সাজেক ছাড়াও খাগড়াছড়ির বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র ঘুরেছি। এক রাত দুদিনের ট্রিপে অনেকগুলো স্পট বেড়ানোর জন্য খাগড়াছড়ি চমৎকার। পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করেছে।
পর্যটন মৌসুম ছাড়া খাগড়াছড়িতে প্রতিদিন অন্তত ৫শ পর্যটক বেড়াতে আসেন। খাগড়াছড়ি প্রধান পর্যটন কেন্দ্র আলুটিলা পর্যটন কর্তৃপক্ষ এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। সেই হিসেবে প্রতি মাসে অন্তত ১৫ থেকে ২০ হাজার পর্যটক বেড়াতে আসেন। এতে মাসে লেনদেন হয় অন্তত ১০ কোটি টাকা।
আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক কোকোনাথ ত্রিপুরা বলেন, খাগড়াছড়ি বা সাজেকে যারা বেড়াতে আসেন প্রায় সবাই আলুটিলায় আসেন। শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে ৫শ থেকে ৬শ পর্যটক আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। এছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিন ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ পর্যটক আলুটিলায় আসেন।
পর্যটন নির্ভর অর্থনীতি বিকাশের জেলার নতুন ট্যুরিস্ট স্পটগুলোর আরো উন্নয়ন চান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এতে স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
খাগড়াছড়ি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস অন্তত বিকাশ ত্রিপুরা, গত এক দশকে খাগড়াছড়ির পর্যটন খাত বিকশিত হয়েছে। তবে এখনো সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। বিশেষত চেনা পর্যটন কেন্দ্রের বাইরে বেশ কিছু পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে দুর্গম পাহাড়ে। নয়নাভিরাম শিলাছড়ি, তৈদুছড়া, তুয়ারি মাইরাং, হাতির মাথাসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়ন হলে পর্যটক আর্কষণ আরো বাড়বে। এসব এলাকার উন্নয়নের পর্যটন সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নিতে হবে।
জেলা পরিষদ পার্কের আহ্বায়ক পার্থ ত্রিপুরা জুয়েল বলেন, এখানকার অর্থনীতি মূলত কৃষি ও বননির্ভর। তবে এর বাইরে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত হলো পর্যটন। খাগড়াছড়িতে পর্যটন কেন্দ্রিক অবকাঠামো উন্নয়ন ও নিরাপত্তা জোরদার করা গেলে পর্যটন খাত আরো সমৃদ্ধ হবে। বিশেষত দুর্গম এলাকায় অবস্থিত ঝরনায় পর্যটকরা যেতে পারলে স্থানীয়রাও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। এছাড়া পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল বাড়াতে হবে।
জেলায় পর্যটক আগমন বাড়ায় গড়ে উঠেছে হোটেল মোটেল। বর্তমানে জেলায় রয়েছে অর্ধশতাধিক আবাসিক হোটেল ও রেস্তোরাঁ। এই খাতে দিন দিন বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ছে। এই খাতে অন্তত ৯শ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলের ইউনিট ব্যবস্থাপক এ কে এম রফিকুল আলম জানান, এখানকার প্রধান পর্যটন কেন্দ্র আলুটিলা, জেলা পরিষদ পার্ক (ঝুলন্ত ব্রিজ), রিছাং ঝরনাসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে উন্নয়নে যেসব কাজ চলমান রয়েছে তা শেষ হলে পর্যটন আর্কষণ আরো বাড়বে। খাগড়াছড়ির স্থানীয় অর্থনীতি বিকাশে পর্যটন খাত বড় অবদান রাখবে।
খাগড়াছড়ি চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. কাশেম বলেন, খাগড়াছড়িতে শিল্প কারখানা নেই। তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে। আমাদের পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এ খাতে বিপুল বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। সরকারি নানা উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে জেলায় পর্যটন খাতে আশাব্যাঞ্জক উন্নয়ন হয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ খাগড়াছড়ি ইউনিটের ইনচার্জ বিজন কুমার দাশ বলেন, আলুটিলা, রিছাং ঝরনা, জেলা পরিষদ এলাকায় আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা দিচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। তবে দুর্গম এলাকায় যেসব পর্যটন এলাকা রয়েছে সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় টহল দিতে পারি না। এসব এলাকার উন্নয়ন হলে ট্যুরিস্ট পুলিশ সেবা দিতে পারবে।
আজ বিশ্ব পর্যটন দিবস : বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য পর্যটন’। প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডসহ বিভিন্ন পর্যটন সংস্থা দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।