খাগড়াছড়ির দীঘিনালা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় উপজেলার প্রধান বিদ্যাপীঠ। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫৮০। বিদ্যালয়টি শিক্ষকের পদ রয়েছে ২১টি। কিন্তু কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা কেবল পাঁচ জন। এর মধ্যে বিজ্ঞান ও গণিতের কোনো শিক্ষকই নেই। পুরো জেলার ১০টি সরকারি বিদ্যালয়ের সবকটিতেই একই চিত্র। ১০টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক রয়েছে মাত্র তিন জন। সহকারী প্রধান শিক্ষকের ১০টি পদ শূন্য। ২৪২টি শিক্ষকের পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছে ১৩৭ জন, শূন্য রয়েছে ১০৫টি শিক্ষকের পদ। বিপুল সংখ্যাক শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় শ্রেণি পাঠদান মারাত্মকভাবে বিঘ্ন ঘটছে। দীঘিনালা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র দেবজিৎ বড়ুয়া ও অর্ণব চৌধুরী বলেন, আমরা বিজ্ঞান বিভাগে পড়ি। কিন্তু বিজ্ঞানের কোনো শিক্ষক নেই। ফিজিক্স, কেমেস্ট্রি, ম্যাথ, বায়োলজি পড়তে কষ্ট হচ্ছে। আমাদের পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিনতে রহমান মীম ও আদিত্য দে বলেন, আমাদের স্কুলে টিচার নেই। ২১ শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও গেস্ট টিচারসহ রয়েছে মাত্র ৮ জন। বিজ্ঞান ও গণিত বুঝতে অসুবিধা হয়। একেক সময় একেকটা স্যার এসে একেক চ্যাপ্টার পড়ায়। আমাদের সব উল্টাপাল্টা হয়ে যায়।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ওমর ফারুক হোসেন বলেন, আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। এমন দিন আছে টানা ৬ ঘণ্টা করে ক্লাস নিতে হচ্ছে। নবম এবং দশম শ্রেণিতে গ্রুপ সাবজেক্ট পড়াতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। সায়েন্স এবং ম্যাথের কোনো শিক্ষক নেই। শিক্ষক নেই বাংলারও। শিক্ষক সংকটের কারণে গেস্ট টিচার নিতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এক বছরের বেশি সময় ধরে বিদ্যালয়টিতে গেস্ট টিচার হিসেবে আছেন প্রাচুর্যা চাকমা। তিনি বলেন, আমরা চার জন গেস্ট টিচার আছি। শিক্ষক সংকটের কারণে প্রত্যেকদিন টানা ৬ ঘণ্টা করে ক্লাস নিতে হচ্ছে। এছাড়া মুখোমুখি হতে হচ্ছে আরও অনেক সমস্যার।
দীঘিনালা সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ এখতার আলী জানান, বিজ্ঞান বিভাগে কোনো শিক্ষক নাই। ম্যাথ, বায়লোজি, ফিজিঙি পড়ানোর মতো কেউ নেই। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বিঘ্নিত হচ্ছে। যেখানে একটা বিদ্যালয়ে সায়েন্সের শিক্ষক নেই সেখানে একটা সায়েন্স বিভাগ কীভাবে চলতে পারে আমার জানা নেই। এসব শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট কি হবে আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। কিছু গেস্ট টিচার নিয়েছি কিন্তু তাদেরকে দিয়ে ক্লাস নেয়া খুবই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কারণ গেস্ট টিচারদের ঠিকমতো পেমেন্ট দিতে পারি না ফলে তাদের ক্লাস নেওয়ার জন্য জোর করতে পারি না। সংকট সমাধানের একমাত্র উপায় শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ।
খাগড়াছড়ি জেলা শিক্ষা অফিসার এস এম মোসলেম উদ্দিন শিক্ষক সংকটের চিত্র তুলে ধরে বলেন, বিপুল সংখ্যাক শিক্ষকের পদশূন্য থাকায় শ্রেণি পাঠদান মারাত্মকভাবে বিঘ্ন ঘটছে। একজন শিক্ষক অতিরিক্ত পাঠদান করালে তাদের মধ্যে কর্মক্লান্তি দেখা যায়। কিছুদিন আগে শিক্ষা উপমন্ত্রী খাগড়াছড়ি জেলার শিক্ষক সংকটের সমাধান করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া শিক্ষক সংকটের তালিকা তৈরি করে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে।