খাগড়াছড়ির ‘নিউজিল্যান্ড’ যে সড়ক বাড়িয়েছে মুগ্ধতা

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি | মঙ্গলবার , ২৯ এপ্রিল, ২০২৫ at ১০:১৬ পূর্বাহ্ণ

চোখ জুড়ানো সবুজ মাঠ। অদূরে পাহাড়। দুই পাশে সবুজ ধানের ক্ষেত পেরিয়ে চোখ আটকে যায় সবুজ পাহাড়ে। শেষ বিকেলে পশ্চিমের আকাশে ‘সোনার সিংহ’ হলুদ আভা ছড়ায় তেপান্তরে। অনবদ্য এক ল্যান্ডস্কেপ ধরা দেয় খাগড়াছড়ির ‘নিউজিল্যান্ড’য়ে। নামের কারণেই এলাকাটি সবার কাছে পরিচিত। নাম শুনে অনেকে কৌতূহলউদ্দীপক হয়ে বেড়াতে আসে। গ্রীষ্মের পাকা ধানের হাসিতে ‘নিউজিল্যান্ড’ আরো সুুন্দর হয়ে উঠেছে। প্রায় এক দশক পর সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডে নতুন করে সড়ক সংস্কার করেছে খাগড়াছড়ি পৌরসভা। খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরের নিউজিল্যান্ড এলাকাটি পানখাইয়া পাড়া ও আপা পেরাছড়াকে যুক্ত করেছে। সড়কটি নির্মিত হওয়ার পর থেকে বেড়েছে দর্শনার্থীর সংখ্যা।

নিউজিল্যান্ড এলাকার নামকরণ কীভাবে হল তা নিয়ে স্পট কোন তথ্য না থাকলেও ধারণা করা হয়আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র থেকে পাখির চোখে দেখতে এলাকাটি অনেকটা নিউজিল্যান্ডের বিস্তীর্ণ মাঠের মতো হওয়ায় এমন নামকরণ বলে ধারনা স্থানীয়দের। প্রতিদিন বিকেলে হতে এখানে দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়ে। অনেকে আবার প্রাতঃভ্রমণেও আসেন। গতকাল বিকেলে ‘নিউজিল্যান্ডে’ গিয়ে দেখা যায়প্রচুর দশনার্থীর সমাগম হয়েছে। বিভিন্ন বয়সী মানুষ শেষ বিকেলে এখানে ভিড় করে, সড়ক লাগায়ো ধান ক্ষেতে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে।

স্থানীয় দর্শনার্থী কবিতা চাকমা বলেন, সড়কটি আগে ব্যবহারের উপযোগী ছিল না। তাই এখানে আসা হত না। এখন সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এখান থেকে সবুজ পাহাড় উপভোগ করা যায়। তাছাড়া যানবাহন সংখ্যা কম থাকায় নির্মল প্রকৃতি উপভোগ করা যায়। তবে সড়কজুড়ে ফুলের গাছ রোপণ করলে এটি আরো বেশি আর্কষণীয় হয়ে উঠবে।

এখানে প্রায়ই বেড়াতে আসেন স্থানীয় বাসিন্দা চেলছি ত্রিপুরা। তিনি বলেন, শহরের মধ্যে সময় কাটানোর মতো জায়গা নেই। নতুন সড়ক নির্মিত হওয়ার পর থেকে সবাই নিউজিল্যান্ডে আসছে। আমি প্রায়ই আসি। এখানে বিভিন্ন মানুষ শরীরচর্চাও করে। একটি সড়ক পুরা এলাকার দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে। বর্ষায় বৃষ্টির পর এখান থেকে মেঘও দেখা যাবে। পর্যটন শহর খাগড়াছড়ির নতুন ভ্রমণ গন্তব্য হতে পারে নিউজিল্যান্ড।

জান্নাতুল ফৌরদৌসি মানু একটি বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিউজিল্যান্ড এলাকার ছবি দেখেছি। এখানে এসে দেখলাম এটি ছবির মতোই সুন্দর। আজকে বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পর পুরো এলাকাটি আরো সবুজ হয়ে উঠেছে। সত্যিই মুগ্ধ করার মতো একটি জায়গা।

দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় পরে সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ করে খাগড়াছড়ি পৌরসভা। পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১৬০০ মিটার সড়কটি নির্মাণ করা হয়। এতে ব্যয় হয়েছে ৮ কোটি টাকা। খাগড়াছড়ি একটি পর্যটন শহর। এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা বেড়াতে আসে। সুবিশাল ধানের ক্ষেত এরপর আলুটিলা শহর, এখানকার ভিউ অসাধারণ। মানসিক প্রশান্তির জন্য বিকেলে প্রচুর মানুষ আসে। সকালে অনেকে প্রাতঃভ্রমণ করে। এখানে সড়কটি চলাচলের উপযোগী ছিল না। সড়কটি নির্মিত হওয়া নাগরিকেরা উপকৃত হচ্ছে। সড়কের পাশে ফুটপাত নির্মাণের কাজ চলছে। তাছাড়া এখানে স্ট্রিট লাইটও লাগানো হবে। পাশাপাশি সড়কের পাশে বিভিন্ন ফুলের গাছও লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলাইসেন্স পেল স্টারলিংক
পরবর্তী নিবন্ধযুবদলনেতা হত্যার মামলায় কারাগারে কক্সবাজারের সাবেক এমপি জাফর