চলতি মৌসুমে ৪ দফা বন্যার কবলে পরেছে খাগড়াছড়ি সদর ও দীঘিনালা উপজেলা। চেঙ্গী ও মাইনী নদীর নাব্যতা না থাকায় পাহাড়ি ঢল ও অল্প বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় । খনন না হওয়ায় নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় কমে গেছে পানির ধারণ ক্ষমতা। এছাড়া বন উজাড়ের ফলে বাড়ছে মাটির ক্ষয়।
খাগড়াছড়ির মাইনী নদী ১০৯ কিলোমিটার দীর্ঘ। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে থেকে উৎপত্তি হওয়া এই নদী খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও লংগদু হয়ে কাপ্তাই লেকে মিশেছে। চলতি মৌসুমে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে ৪ দফা বন্যার সৃষ্টি হয় মাইনী তীরবর্তী ৫ ইউনিয়নে। শেষ বন্যা অন্তত ৫ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। ডুবে যায় ফসলের ক্ষেত, সড়ক ও মাছের পুকুর। প্রতি বছর পলি পরে নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে অল্প বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। চেঙ্গী নদীর তীরবর্তী পানছড়ি, জেলা সদর ও মহালছড়ির বির্স্তীণ এলাকায় প্লাবিত হয়ে ৯৬ কিলোমিটার এলাকার বেশীর ভাগ অংশ ডুবে যায়। নদী তীরবতী দীঘিনালার বাবুছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গগন বিকাশ চাকমা বলেন, নদীটি কখনো খনন হয়নি । বন্যা হওয়ার একমাত্র কারণ এটি। পলি পড়ে নদীর তলদেশ ভরাট হচ্ছে। আমরা দুর্ভোগে পড়েছি। প্রতিবছর কয়েক দফায় বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়ন সাম্প্রতিক বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউনিয়নের অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পূর্ব বাঁচামরং পাড়া। স্থানীয় ইউপি সদস্য সমীরণ চাকমা বলেন, এখানকার মানুষ বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা অত্যন্ত দরিদ্র। সরকারি সহায়তার পাশাপাশি আমি তাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা দিয়েছি। এই নিয়ে বন্যায় চার দফায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। বারবার বন্যার কারণ হল নদীতে পানির ধারণ ক্ষমতা নেই। পাহাড়ি ঢলে প্রচুর পানি আসে। নদীর তীরের সব গ্রাম প্লাবিত হয়। এখানে কখনোই নদী খনন হয়নি। তাছাড়া প্রতি বছর নদীতে প্রচুর পলি জমে। নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় নিয়মিত বন্যা হচ্ছে।
খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ফরিদ মিঞা বলেন ,‘বন উজাড় ও মনো কালচারের কারণে মাটির ক্ষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারী বর্ষণে পাহাড়ের মাটি ঝিরি, ছড়া হয়ে নদীতে পড়ে। এতে নদীর তলদেশে প্রচুর পলি জমে । পাহাড়ে সেগুন বাগানের সংখ্যা বেশি। সেগুন বাগানে অন্য কোন উদ্ভিদ জন্মায় না। ফলে মাটির ক্ষয় বেশি হয়। প্রাকৃতি বনের আয়তন বাড়ালে মাটির ক্ষয় রোধ করা যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, আপাতত চেঙ্গী ও মাইনী নদী খননের কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে জরুরি ভিত্তিতে নদী তীর রক্ষায় কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ–বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান । তিনি বলেন, খাগড়াছড়িতে সাম্প্রতিক বন্যায় অন্তত ৪ কিলোমিটার নদীর তীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে আমরা সেখানে জিও ব্যাগ ফেলে নদী তীর রক্ষার চেষ্টা করছি। স্থায়ীভাবে কাজ শুরু করতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে।
সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত নদী এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নিদের্শ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান । তিনি বলেন, সম্প্রতিক বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নদীর তীরে প্রচুর অংশ ভেঙে গেছে। পরিদর্শন করে দ্রুত নদী তীর রক্ষার নির্দেশ দিয়েছি।