টানা বর্ষণে খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও দুপুর থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। এতে পাহাড় ধসের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এছাড়া মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে মেরুং পাড়ার কয়েকটি এলাকা, সোবাহানপুর, চিটাইগ্যাংয়া পাড়া প্লাবিত হয়েছে। দীঘিনালার মেরুং ও কবাখালি ইউনিয়নের অন্তত ৫৫ পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মজিদ বলেন, গত রাতে পানি অনেক বেড়েছিল। সকালে কিছুটা কমেছিল। তবে বৃষ্টি এখন আবার বেড়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পানি আবারো বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় আরেক বাসিন্দা লুৎফর ফয়সাল জানান, লংগদু যাওয়ার জন্য এসেছি। সড়কের কয়েকটি জায়গায় পানি উঠেছে। হেডকোয়ার্টার এলাকায় প্রচুর পানি, নৌকা দিয়ে পারাপার করছি। প্রতি ঘণ্টায় মনে হচ্ছে পানি বাড়ছে।
দীঘিনালা–লংগদু সড়কের হেডকোয়ার্টার এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ায় রাঙামাটির লংগদুর সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে মেরুং বাজার ডুবে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। মেরুং ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিনা চাকমা বলেন, ছোট মেরুং বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৩ পরিবার ও ছোট মেরুং বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৩টি গ্রাম প্লাবিত। বৃষ্টি বাড়ছে, পানিও বাড়বে।
এদিকে বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুজন চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, দুই ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ৫৫টি পরিবারের দুই শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মেরুংয়ে ৩৪ পরিবার এবং কবাখালি ইউনিয়নে ২১ পরিবার। তাদেরকে রান্না করে খাবার দেয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হচ্ছে।
এদিকে খাগড়াছড়ি পৌর শহরের শালবন, কুমিল্লা টিলা, সবুজবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে স্থানীয়রা। পাহাড় ধসের শঙ্কায় রয়েছে সাড়ে তিন হাজার পরিবার। টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা প্রশাসন। খাগড়াছড়ি জেলা সদরে চারটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
প্রানহানি এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার। তিনি বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। যেহেতু টানা বৃষ্টি হচ্ছে পাহাড় ধসের শঙ্কা আরো বেশি। পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে গেছে। কিন্ত বারবার অনুরোধ করার পরও তারা বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসছে না। তারপরও আশ্রয়কেন্দ্রে আমরা গরম খাবার দিচ্ছি। খাবার নিয়ে তারা বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। আমরা প্রচুর চেষ্টা করছি কিন্ত বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্রে আসছে না।
খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। গতকাল সিন্দুকছড়ি–জালিয়াপাড়া সড়কে কয়েকটি স্থানে সড়কের মাটি ধসে গেছে। কিছু সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। সড়ক বিভাগের কর্মীরা গিয়ে মাটি সরিয়ে নেওয়ায় যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।