খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগ এনে আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোহেল রানা নাকে এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহত সোহেল রানা খাগড়াছড়ি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের সিভিল কন্সট্রাকশন এন্ড সেফটি বিভাগের ইন্সট্রাকটর। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টায় সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে অধ্যক্ষের কক্ষে তাকে পিটিয়ে মারা হয়।
শিক্ষক সোহেল রানাকে হত্যার ঘটনার জেরে দুপুরে পাহাড়ি–বাঙালি দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এসময় চেঙ্গী স্কয়ার, মহাজনপাড়া, পানখাইয়া পাড়ায় ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলে। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় বিকেল ৩টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। এদিকে বিকেলে পাহাড়ি ও বাঙালিরা খাগড়াছড়ি সদরে আবার মুখোমুখি অবস্থান নেয়। দুই পক্ষ বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল থেকে সদরের মহাজনপাড়া, পানখাইয়া পাড়া সড়কের কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর করা হয়। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান বলেন, ধর্ষণের অভিযোগ এনে এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়– প্রাথমিকভাবে আমরা এমন তথ্য পেয়েছি। এ ঘটনার পর দুই পক্ষে উত্তেজনা দেখা দেয়। এরপর বেলা ৩টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। আমরা সকল ইউএনওকে অবগত করেছি যাতে সহিংসতা ছড়িয়ে না পড়ে।
খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রিপল বাপ্পি চাকমা বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই ওই ব্যক্তি মারা গেছেন। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে নেয়া হয়েছে। খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল বাতেন মৃধা বলেন, এখন ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। পরিস্থিতি বেশ উত্তেজনাকর। নিয়ন্ত্রণে আইনশৃক্সখলা বাহিনী কাজ করছে।
রাঙামাটিতে সতর্কাবস্থা : মঙ্গলবার দুপুরে খাগড়াছড়ি জেলা শহরে এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা এবং পাহাড়ি–বাঙালি শিক্ষার্থীদের দুইপক্ষের সংঘর্ষের খবরে রাঙামাটি শহরেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষত পাহাড়ি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকা জেলা শহরের বনরূপা এলাকা থেকে কল্যাণপুর পর্যন্ত সড়কের পাশের বেশিরভাগ দোকানপাট ও মার্কেট বন্ধ করে দিয়েছে পাহাড়িরা। রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে আইনশৃক্সখলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। শহরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর টহল দেখা গেছে।
রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সাইফুল ইসলাম বলেন, খাগড়াছড়ির ঘটনায় কিছু সময়ের জন্য রাঙামাটির কিছু এলাকায় অনেকে আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে দেন। পরবর্তীতে আমরা হ্যান্ড মাইকিংয়ে আশ্বস্ত করায় অনেকে দোকানপাট খুলেছেন। রাঙামাটি শহরের আইনশৃক্সখলা পরিস্থিত শান্ত রয়েছে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর যৌথ টহল রয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা নেই। রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, রাঙামাটি শহরের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে। ১৪৪ ধারা জারি করার মতো পরিবেশ এখানে নেই।