বঙ্গোপসাগরে প্রচুর জেলিফিশের দেখা পাওয়া যায়। স্থানীয় ভাষায় যাকে বলে ‘নুইন্না’, প্রাণিটি এদেশে খাওয়া হয় না বলে এর কোনো অর্থনৈতিক মূল্যও নেই। তবে ২০২২ সালের আগস্টের শুরু থেকে কক্সবাজার সৈকতে হাজার হাজার জেলিফিশ ভেসে আসতে থাকলে বোরির বিজ্ঞানীরা সেমিনার করে জানান যে, কক্সবাজার সৈকতে ভেসে আসা বেশ কয়েক প্রজাতির জেলিফিশ খাওয়ার উপযোগী এবং বিদেশে জেলিফিশ রপ্তানি করে শত শত কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়। অথচ দুই বছর অতিবাহিত হলেও এ নিয়ে জাতিকে আশার মুখ দেখাতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।
এরই মাঝে জেলিফিশের অর্থনৈতিক ও অন্যান্য গুরুত্ব তুলে ধরতে আজ ৩ নভেম্বর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ‘বিশ্ব জেলিফিশ দিবস’ পালিত হলেও এবার বাংলাদেশের কোথাও দিবসটি পালিত হচ্ছে না। বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা ২ বছরের বেশি সময় ধরে জেলিফিশ নিয়ে গবেষণা করছেন এবং প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সাল থেকে সেমিনারসহ নানা প্রোগামের মাধ্যমে দিবসটি পালন করে আসছিল। তবে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা বর্তমানে প্রশিক্ষণে ব্যস্ত থাকায় এবারের দিবসটি পালন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক কমোডর মিনারুল ইসলাম। তিনি জানান, বর্তমানে জেলিফিশ নিয়ে একটি গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে।
এর আগে গত বছর ২ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন মহাপরিচালক প্রফেসর ড. তৌহিদা রশিদ এ প্রতিবেদকে বলেন, জেলিফিশ নিয়ে গবেষণা ফলাফল ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষে তুলে ধরা হবে। তবে এখনও সেই ফলাফল তুলে ধরা হয়নি।
বাংলাদেশ মৎস্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর (থাইল্যান্ড সফররত) বলেন, পৃথিবীতে প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির জেলিফিশ রয়েছে। এরমধ্যে অন্তত ১২ প্রজাতির জেলিফিশ খাওয়ার উপযোগী। আর আমাদের বঙ্গোপসাগরেও অন্তত ৩ প্রজাতির খাওয়ার উপযোগী জেলিফিশ পাওয়া যায়। এছাড়া অন্যান্য প্রজাতির জেলিফিশেও রয়েছে ওষুধী গুণাগুণ। তিনি জানান, জাপানিরা জেলিফিশকে ক্যান্ডিতে রূপান্তরিত করেছে। এক ধরনের মিষ্টি ও নোনতা ক্যারামেল, চিনি, স্টার্চ সিরাপ এবং জেলিফিশ পাউডার দিয়ে তৈরী করা হয় সেই ক্যান্ডি, যা বেশ ব্যয়বহুল এবং সুস্বাদুও বটে। এছাড়াও সালাদে, নুডলসে এবং সয়া সস দিয়ে প্রায়শই এদের খাওয়া হয়। থাইল্যান্ড জেলিফিশ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। এ ছাড়াও কোলাজেনের উৎস হিসেবে বৈজ্ঞানিক গবেষণায়, ওষুধ শিল্পে এবং বিশ্বজুড়ে পাবলিক একুরিয়ামে জেলিফিশ প্রদর্শিত হয়।
সমুদ্র বিজ্ঞানীরা জানান, জেলিফিশের কিছু কিছু প্রজাতি দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের বেশ কিছু অঞ্চলে মানুষের খাদ্যের অংশ হয়ে ওঠেছে। চায়না, জাপান এবং কোরিয়ার মতো বেশ কিছু জায়গায় এটি খুব মজার খাবার হিসেবে বিবেচিত। তারা জানান, মানুষের চেয়েও আদিম এই প্রাণিটির পৃথিবীতে আগমন প্রায় ৫০ কোটি বছর আগে। আর এই প্রাচীন প্রাণিটিকে সম্মান ও ভালবাসা জানাতে ২০১৪ সাল হতে বিশ্বব্যাপী এই দিবসটি পালন করা হচ্ছে। তবে এবার ২০২৪ সালে দিবসটির বিশেষ কোনো থিম নেই।
নামে ফিশ বা মাছ হলেও জেলিফিশ আসলে মাছ নয়। এদের বাহ্যিক গঠনের সাথে মাছের গঠনের কোনো ধরনের মিল নেই। এরা মূলত নিডারিয়া পর্বের অমেরুদণ্ডী প্রাণি এবং এরা এতই বৈচিত্রময় যে, অনেক বিজ্ঞানী তাদের কেবল ‘জেলাটিনাস জুপ্ল্যাঙ্কটন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। জেলিফিশের মাছের মতো আঁশ, ফুলকা বা পাখনা থাকে না। এর পরিবর্তে তারা তাদের গোলাকৃতি ‘বেল’ খোলা এবং বন্ধ করার মাধ্যমে সাঁতার কাটে। তাদের শরীর ৯৮ ভাগ পানি দিয়ে গঠিত। যখন তারা উপকূলে ভেসে চলে আসে, তারা মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। কারণ তাদের দেহ দ্রুত বাতাসে বাষ্প হয়ে যায়। তাদের কোনো মস্তিষ্ক নেই, কেবল একটি প্রাথমিক স্নায়ুতন্ত্র রয়েছে।