খসে পড়ছে ভবনের পলেস্তারা, নিচে ক্লাসরুম ও খেলার মাঠে পানি

চকরিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া | শনিবার , ৬ জুলাই, ২০২৪ at ৪:২৯ পূর্বাহ্ণ

নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার একমাত্র সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি। পৌরশহরের বাণিজ্যিক কেন্দ্র চিরিঙ্গায় প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টি নারী শিক্ষায় দ্যুতি ছড়িয়ে আসলেও বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানে কোনো উদ্যোগই পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এই অবস্থায় একমাত্র সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি অনেকটা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বর্তমানে বিদ্যালয়টির চতুর্দিকে জরাজীর্ণ সীমানা দেওয়াল, দ্বিতল প্রশাসনিক ভবন ও একাডেমিক ভবন, খেলার মাঠের অবস্থা খুবই শোচনীয়। প্রশাসনিক ভবনসহ দুটি ভবন একেবারে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দ্বিতল ভবন দুটির ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে প্রায়শই। এই পরিস্থিতিতে চরম মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে ক্লাসে অংশ নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেনব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়া ভবনগুলোতে পাঠদানের সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যেতে পারে যে কোনো মুহূর্তে। ভয় আর আতংক নিয়েই শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের নিয়মিত পাঠদানসহ শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছেন।

সরজমিন দেখা গেছে, বিদ্যালয়টির চতুর্দিকে সীমানা দেওয়ালের বাইরে বাণিজ্যিক ও আবাসিক স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এই অবস্থায় বিদ্যালয়ের ভূমিসহ ভবনগুলো অনেকটাই নিচু হয়ে মাটির নিচে গেড়ে বসেছে। এমনকি বিদ্যালয়ের একমাত্র মাঠটিও চার থেকে পাঁচ ফুট পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। বর্ষায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় চারিদিকের পানি এসে জমাট হচ্ছে বিদ্যালয়ের মাঠে। এতে সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যাচ্ছে ভবনগুলোর নিচতলার ক্লাসরুম, অফিসকক্ষ, শিক্ষক মিলনায়তনও। এই পরিস্থিতিতে হাঁটু পরিমাণ পানি মাড়িয়ে ক্লাসে বসে পাঠ নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এই অবস্থায় শিক্ষার্থীদের মাঝে নানা রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সরেজমিন আরও দেখা যায়বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভবনে শেওলা জমে রয়েছে। ভবন দুটির অসংখ্য কক্ষে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। বেরিয়ে গেছে ভেতরের রড। পিলারে ফাটল ধরেছে, যেকোনো সময় ভেঙেও পড়তে পারে। এর পরও পরিত্যক্ত ভবনেই চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, দেশ স্বাধীনের আগে ১৯৬৮ সালে চিরিঙ্গা হিন্দুপাড়ার প্রয়াত সারদা কিশোর দে মহাজনের দানকৃত জমিতে প্রতিষ্ঠা হয় বালিকা বিদ্যালয়টি। স্বাধীনের পর ১৯৮৫ সালে জাতীয়করণ করা হয় একমাত্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি। তখন নির্মাণ করা হয় দোতলাবিশিষ্ট একটি প্রশাসনিক ভবন। বর্তমানে বিদ্যালয়টির ৬ষ্ট থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে ৯২৭ জন। বিপরীতে শিক্ষক স্বল্পতা না থাকলেও বিদ্যালয়টি করুণ অবস্থায় নিয়মিত শ্রেণী কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অজানা ভয় করছে শিক্ষকদের মাঝেও।

বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের প্রাণের বিদ্যালয়টিতে খেলার মাঠ থাকলেও তা কয়েকফুট পানিতে তলিয়ে থাকায় নিয়মিত খেলাধুলাসহ শরীরচর্চা করতে পারছে না। এছাড়াও বড় আপদ হিসেবে মাথার ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে জরাজীর্ণ ভবনের ছাদ। তারা এই বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক জি এ এম এনামুল হক, আবু সোয়াইব, রাসেল উদ্দিন অভিন্ন বক্তব্যে দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘চকরিয়া উপজেলার নারী শিক্ষার একমাত্র সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি অনেকটাই অভিভাবকহীন অবস্থায় রয়েছে। বিদ্যমান চতুর্মূখী সমস্যাগুলো সমাধানে কারও কোনো উদ্যোগও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। শিক্ষা কার্যক্রমও মুখ থুবড়ে পড়ার মতো পরিস্থিতি হয়েছে।’

সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে সদ্য যোগ দেওয়া পান্না বড়ুয়া দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘এমন নোংরা পরিবেশে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলতে কোথাও দেখা যায়নি। এখানে পাঠ দেওয়া বা নেওয়ার কোনো সুষ্ঠু পরিবেশই নেই। এই পরিস্থিতি উত্তরণে সংশ্লিষ্ট সবার এগিয়ে আসা উচিত।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফরিদ উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বিদ্যালয়টির দিকে সুদৃষ্টি দেওয়ার জন্য অনেক আগে থেকে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পত্র চালাচালি করা হয়েছে একাধিক। বর্তমানে যেসব সমস্যা সামনে এসেছে তা হলো অবকাঠামোগত।’

প্রধান শিক্ষক জানান, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ইউএনওচকরিয়া বরাবর ২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর একটি পত্র দেওয়া হয়েছিল বিদ্যমান দ্বিতল প্রশাসনিক ভবন ভেঙে তদস্থলে নতুন ৬ তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। এর পর সরকারের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ৬ তলা ভবন নির্মাণের দরপত্র প্রক্রিয়া হলেও বিদ্যালয়ের নিয়মিত পাঠদান নিয়ে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেওয়ায় সেই ভবন আর হয়ে ওঠেনি। নতুন ভবন নির্মাণ প্রসঙ্গে সরকারের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজারের প্রকৌশলী অমিত নাহা দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘চকরিয়ার একমাত্র সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টিতে নতুন একটি ৬ তলা ভবন নির্মাণের সবকিছু ঠিকঠাক রয়েছে। কিন্তু পুরোনো ভবন ভেঙে ফেলার কাজ নানা কারণে করতে না পারায় নতুন ভবনটিও নির্মাণ করা যায়নি।’

এ ব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফখরুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বিদ্যালয়টির সার্বিক পরিস্থিতি ইতোমধ্যে জেনেছি। নতুন ৬ তলা ভবন নির্মাণ অনুমোদন হলেও কিছু জটিলতা থাকায় এখনো কাজ শুরু করা যায়নি। বিদ্যালয়টিতে যেসব সমস্যা বর্তমানে দৃশ্যমান হয়েছে তা থেকে উত্তরণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিয়ে কিছু সমস্যার সমাধান করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফেরানো হবে বিদ্যালয়টিতে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধখবরদারি কমিয়েছে পদ্মা সেতু, মর্যাদার আসনে বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্বমানের টেলিকম সেবা নিশ্চিতে কাজ করছে সরকার