বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আমেরিকার ভিসানীতিতে দেশের ওপর বজ্রপাত পড়েছে। ভিসানীতিতে আওয়ামী লীগের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। গতকাল লক্ষ্মীপুর শহরের পুরাতন গো–হাটা সড়কের বশির ভিলা প্রাঙ্গণে জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। খবর বাংলানিউজের।
গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লোডশেডিং, সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদসহ ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয় সমাবেশে। খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিও জানানো হয় সেখানে।
ভিসানীতি কেন দেরিতে প্রকাশ হলো? সে প্রশ্ন রেখে খসরু বলেন, আমেরিকা ভিসানীতি পাঠিয়েছে ৩ মে, কিন্তু ২৫ মে কেন প্রকাশ হলো? এরা (সরকার) তা পকেটে লুকিয়ে রেখেছে। আমেরিকা মনে করেছিল, বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি দেশের জনগণকে জানিয়ে দেবে। সরকার যখন তা জানায়নি, তখন আমেরিকা বিষয়টি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে দিয়েছে। সরকার আমাদের জানায়নি। মিডিয়াও তা জানত না। আমরাও জেনেছি আমেরিকা প্রকাশ করার পর। তখন বুঝতে পারলাম প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীরা কেন আবোল–তাবোল বক্তব্য দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, বিশ্ব বিবেক বাংলাদেশের ওপর বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। পুলিশ গুলি করে হত্যা করছে, গায়েবি মামলা দিচ্ছে, গুম করছে, আন্দোলনে বাধাগ্রস্ত করছে। প্রত্যেক বিষয় রেকর্ড করা হচ্ছে। এসব করে আওয়ামী লীগ পার পাবে না। যে সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা এগুলোর সঙ্গে জড়িত তারাও পার পাবেন না। ভোট চুরির সঙ্গে যারাই জড়িত কেউ পার পাবেন না। প্রত্যেক ঘটনা নথিবদ্ধ হচ্ছে, প্রত্যেক ঘটনার বিচার হবে।
তিনি আরো বলেন, এ মুহূর্তে বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ব্যতীত অন্য কোনো আলাপের সুযোগ নেই। কোথায় নির্বাচন, কিসের নির্বাচন? দেশে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। এখানে পুলিশের একটি অংশ, প্রশাসনের একটি অংশকে ব্যবহার করে গণতান্ত্রিক শক্তিকে ধ্বংস করার যে প্রক্রিয়া সেটা বন্ধ করতে হবে। একটি অগণতান্ত্রিক সরকার কর্তৃক গঠিত অবৈধ নির্বাচন কমিশন বাতিল করতে হবে। যত রাজনৈতিক কারাবন্দি আছেন তাদেরকে মুক্তি দিতে হবে। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে হবে। মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে। যখন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে, তখন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। এখন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করা মানে শেখ হাসিনার ফাঁদে পা দেওয়া। কোনো নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করা হবে না, রাস্তায় রাস্তায় আন্দোলন করতে হবে।
খসরু বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের রাজনৈতিক, সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিকসহ সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছে। দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেতা, দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা, এরা সকলে মিলে একটা চক্র গড়ে দেশটাকে দখল করে নিয়েছে। তাই রাজপথে প্রতিবাদ আর আন্দোলন করে এ চক্রের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিএনপির এ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ গুম, খুন, হত্যা, মিথ্যা মামলা, গায়েরি মামলা, ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে দেশের জনগণকে আতঙ্কের মধ্যে রেখেছে। লাখ লাখ, কোটি কোটি ডলার বিদেশে পাচার করেছে। রাষ্ট্রের সমস্ত সম্পদ তাদের হাতে পুঞ্জীভূত হয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষ গরিব থেকে আরও গরিব হচ্ছে। তাই এ অপশক্তির বিরুদ্ধে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি আন্দোলন করছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা আগুনে পুড়ে পুড়ে খাঁটি সোনা হয়েছে, তার তারা সফল হবে।