বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে বিশ্বব্যাপী মিথেন নিঃসরণ কমাতে ‘গ্লোবাল মিথেন প্রতিশ্রুতি’ (জিএমপি) সমর্থন এবং অংশগ্রহণ করলে বাংলাদেশের কোনো সুবিধা বা অসুবিধা রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে মিথেন গ্যাস নির্গমন হ্রাসের ফলে দেশের কৃষি ও প্রাণিসম্পদ সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিনা তা জানতে চায় মন্ত্রণালয়টি।
এ লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় মতামত পাঠাতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এবং চট্টগ্রাম ওয়াসাকে নির্দেশনা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ নির্দেশনা হয়। তবে নির্দেশনা পত্রটি চসিক ও ওয়াসা পেয়েছে গতকাল বুধবার।
স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিকল্পনা শাখার উপসচিব ড. মো. বেলাল হোসেন জানান, গ্লোবাল মিথেন প্রতিশ্রুতি বিষয়ে বাংলাদেশ কর্তৃক সমর্থন ও অংশগ্রহণে সুবিধা-অসুবিধা উল্লেখসহ সুনির্দিষ্ট মতামত ২০ জুনের মধ্যে আবশ্যিকভাবে জানানোর জন্য বলা হয়েছে।
জানা গেছে, এর আগে গত ৮ জুন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে মতামত পাঠাতে বলা হয়। এর প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ চসিকসহ দেশের সবগুলো সিটি কর্পোরেশন এবং সবগুলোকে ওয়াসাকে মতামত পাঠানোর নির্দেশনা দেয়।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়য়ের উপসচিব মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জানান, গ্লোবাল মিথেন প্রতিশ্রুতি’তে ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রাজিল, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, নেপালসহ মোট ১১১টি দেশ অংশগ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের কৃষি ও প্রাণিসম্পদ সেক্টর সমূহে মিথেন গ্যাস নির্গমন হয়ে থাকে। বাংলাদেশ একটি কৃষি নির্ভর অর্থনীতির দেশ। মিথেন গ্যাস নির্গমন হ্রাসের ফলে সংশ্লিষ্ট সেক্টর সমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিনা তা জানা প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, জীবন আছে এমন জিনিস পচে গিয়ে উৎপন্ন হয় মিথেন গ্যাস। এটি এক ধরনের প্রাকৃতিক গ্যাসও। বিজ্ঞানীদের ভাষায়, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কার্বন ডাই অঙাইডের চেয়েও ৮৪ গুণ বেশি ক্ষতি করার ক্ষমতা রয়েছে বর্ণ ও গন্ধহীন মিথেনের। এই গ্যাস যখন উপরে উঠে তখন সেটা তাপকে আটকে রাখে। এবং মিথেনের এই ক্ষমতা কার্বন ডাই অঙাইডের চেয়েও অনেক বেশি। তাপকে আটকে রাখার মাধ্যমে এই গ্যাস বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান একটি কারণ বলে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়। গত বছর জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকাতে মিথেন গ্যাসের নির্গমন কমানো খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ গত বছরের ২ নভেম্বর গ্লাসগেহার কপ ২৬ জলবায়ু সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আহবানে ‘বৈশ্বিক মিথেন প্রতিশ্রুতি’ এ সাড়া দেন শতাধিক দেশ।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ হতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েন ‘জিএমপি’ সমর্থন এবং জিএমপি-জি অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান করা হয়। এই অঙ্গীকারের আওতায় অংশগ্রহণকারী দেশসমূহ ২০৩০ সালের মধ্যে ২০২০ সালের তুলনায় কমপক্ষে ৩০ শতাংশ বৈশ্বিক মিথেন নির্গমন সম্মিলিতভাবে হ্রাস করার জন্য একসাথে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যা ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্য দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি উষ্ণতা দূর করতে সক্ষম হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠি সূত্রে জানা যায়, জিএমপি’র এর লক্ষ্যমাত্রা একটি বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা। কোনো দেশের জাতীয়ভাবে মিথেন নির্গমন হ্রাস লক্ষ্য মাত্রা নয়। উক্ত প্রতিশ্রুতির মূল লক্ষ্য হচ্ছে বৈশ্বিক মিথেন নির্গমন হ্রাস উদ্যোগগুলোকে আরও বেগবান ও জোরদার করা এবং দেশসমূহের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রযুক্তিগত এবং পলিসিগত সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।