অপুষ্টির হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উন্নতি অব্যাহত থাকায় ক্ষুধামুক্তির লড়াইয়ে গত এক বছরে বড় অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশের। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট গতকাল শুক্রবার চলতি বছরের যে ‘বিশ্ব ক্ষুধা সূচক’ প্রকাশ করেছে, তাতে ১০৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান উঠে এসেছে ৭৫তম অবস্থানে। গতবছর এই সূচকে ১১৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৮৮তম। তার আগের তিন বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল যথাক্রমে ৮৬, ৮৮ ও ৯০ নম্বরে। কেবল সূচকের অবস্থানে অগ্রগতি নয়, যে চার মাপকাঠিতে বিচার করে গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (জিএইচআই) করা হয়, তার সবগুলোতেই গতবারের তুলনায় বাংলাদেশ এগিয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
অপুষ্টির হার, ৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে উচ্চতার তুলনায় কম ওজনের শিশুর হার, ৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে কম উচ্চতার শিশুর হার, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার- এই চারটি মাপকাঠিতে প্রতিটি দেশের পরিস্থিতি বিচার করে তৈরি হয় জিএইচআই। প্রতিটি দেশের স্কোর হিসাব করা হয়েছে ১০০ পয়েন্টের ভিত্তিতে। সূচকে সবচেয়ে ভালো স্কোর হল শূন্য। স্কোর বাড়লে বুঝতে হবে, ক্ষুধার রাজ্যে সেই দেশের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। আর স্কোর কমা মানে, সেই দেশের খাদ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট বলছে, গত এক বছরে বাংলাদেশ স্কোরের দিক দিয়েও এক ধাক্কায় অনেকটা উন্নতি করতে পেরেছে। মোট স্কোর গতবারের ২৫.৮ থেকে কমে হয়েছে ২০.৪। আর এর ফলেই সার্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এক লাফে ১৩ ধাপ এগিয়ে এসেছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার নির্ধারিত সংজ্ঞা অনুযায়ী, একটি শিশুর প্রতিদিনের গ্রহণ করা খাদ্যের পুষ্টিমান গড়ে ১৮০০ কিলোক্যালরির কম হলে বিষয়টিকে ক্ষুধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ক্ষুধা সূচক বলছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ অপুষ্টির শিকার; পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৯ দশমিক ৮ শতাংশের উচ্চতার তুলনায় ওজন কম; ওই বয়সী শিশুদের ২৮ শতাংশ শিশুর উচ্চতা বয়সের অনুপাতে কম এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার ৩ শতাংশ। গতবছর এই চার ক্ষেত্রে হার ছিল যথাক্রমে ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ, ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ, ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ এবং ৩ দশমিক ২ শতাংশ।
এই সূচকে প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে গত কয়েক বছর ধরেই। তবে নেপাল ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে পিছিয়ে আছে এখনও। গতবারের মত এবারও ক্ষুধার সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে শ্রীলঙ্কা। আর সাত দেশের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তান। মিয়ানমার ছাড়া সূচকে আসা এ অঞ্চলের সবগুলো দেশেরই অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট বলছে, ক্ষুধামুক্তির লড়াইয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো গত এক বছরে বেশ খানিকটা উন্নতি দেখাতে পারলেও সাত দেশই রয়েছে সূচকের সেই ৪০ দেশের কাতারে, যেখানে ক্ষুধা এখনও ‘মারাত্মক’ একটি সমস্যা। তাছাড়া সরকারি যে তথ্যের ওপর ভিত্তি তরে ২০২০ সালের এই সূচক তৈরি করা হয়েছে, তাতে চলমান করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাব আসেনি।
কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের সহকারী কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিনা রহমান বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার এ বছর দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। তাছাড়া চলতি বছর স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক আর জলবায়ু বিপদ একসঙ্গে আসায় বাংলাদেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার বিষয়টিও যথেষ্ট ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কাজেই জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্তি চাইলে কঠিন এই পরিস্থিতিতে সবাই মিলে ন্যায্যতার ভিত্তিতে, স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে পুরো খাদ্য ব্যবস্থাকে পাল্টে দিতে হবে বলে মনে করছেন তিনি।