ক্ষমতায় গেলে প্রত্যয় স্কিম বাতিল করব : ফখরুল

| রবিবার , ৭ জুলাই, ২০২৪ at ৮:১৮ পূর্বাহ্ণ

সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে নামা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলন এবং শিক্ষার্থীদের কোটা বিরোধী অবস্থান যৌক্তিক ও ন্যায়সংগত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে এসে প্রযুক্তি ও জ্ঞানভিত্তিক বৈশ্বিক ব্যবস্থায় টিকে থাকতে হলে মেধাভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। তাই সাধারণ ছাত্র সমাজের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবিসমূহের সাথে আমরা একমত। আমরা আশা করি, সময় থাকতে সরকার ছাত্র সমাজের ন্যায়সঙ্গত যৌক্তিক দাবিসমূহ মেনে নেবে, আমরা এই সমস্যার সমাধানের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককর্মচারীদের যে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে তা অবশ্যই যৌক্তিক ও সমর্থনযোগ্য। আমরা তাদের এই যৌক্তিক আন্দোলন সমর্থন করছি এবং অবিলম্বে এই পেনশন স্কিম প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।

গতকাল দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। সর্বজনীন পেনশন প্রকল্পের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য প্রত্যয় নামে একটি স্কিম চালু করেছে সরকার। কিন্তু তাতে যুক্ত হলে অবসরপরবর্তী আর্থিক সুবিধা কমে যাওয়ার শঙ্কায় আন্দোলন করছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষককর্মচারীরা। অন্যদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে বিভিন্ন কলেজবিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। খবর বিডিনিউজের।

শিক্ষকদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সবচেয়ে শিক্ষকদের ব্যাপারটা সেনসেটিভ এই জন্য যে, তাদের তো অন্য কোনো সোর্স অব ইনকাম নেই। অন্যান্যদের চুরিচামারি, দুর্নীতির অভিযোগ থাকতে পারে, শিক্ষকদের তো সেটা নেই সেজন্য তাদেরকে শুধু বাধ্য হয়ে এই বেতনের উপরে নির্ভর করতে হয়। এজন্য তারা বেশি বিক্ষুব্ধ এবং তারা মনে করে যে এটা তাদের ওপর অত্যাচারনির্যাতনের মতো ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের অবশ্যই এ ব্যাপারে পজিটিভ ব্যাপার থাকবে। অর্থাৎ আমরা যদি কখনো সরকারে যাই, এটা (প্রত্যয় স্কিম) যদি তখন পর্যন্ত টিকে থাকে, এটা আমরা বাতিল করব।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা মনে করি, কোটা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কিছুটা থাকতে পারে, প্রতিবন্ধীর জন্য আর নৃজাতির জন্য, এ রকম পিছিয়ে পড়ার যারা আছে…. নট ৫৬%। এটা আপনার বড়জোর ফাইভফিফটিন পারসেন্ট হতে পারে। এর বেশি হলে মেধার বিষয়টা থাকে না। এমনিতেই মুক্তিযোদ্ধারা নাই এখন। অনেকের বয়স হয়ে গেছে। আমাদের বয়সের জায়গায় চলে গেছেন। তাদের সন্তানেরা পাবেন, সেটায় আপত্তি নাই আমাদের। তবে সেটার নাম করে যে কাউকে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট দিয়ে, হাজার হাজার সার্টিফিকেট দিয়ে তাদেরকে চাকরি ব্যবস্থা করে দিচ্ছে টাকার বিনিময়েসেটা তো আমরা কখনোই সমর্থন করতে পারি না।

সংবাদ সম্মেলনে এই দুই আন্দোলনের বিষয়ে দলের অবস্থানও স্পষ্ট করেন বিএনপি মহাসচিব, যা সমপ্রতি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, গত কয়েকদিন যাবৎ ছাত্ররা কোটা পদ্ধতি বাতিলের জন্য হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাস্তায় আন্দোলন করছে। এটা ছাত্রদের আন্দোলন আমাদের এখানে সম্পৃক্ততা হওয়ার কোনো কারণ নেই।

দেশের একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে কোটার বিষয়ে বিএনপির মতামত তুলে ধরে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মাননা প্রদান করা হয়। রাষ্ট্রীয় আচার অনুষ্ঠান, জাতীয় দিবসসমূহ এমনকি তাদের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মানের সাথে দাফন করা হয়। এগুলো তাদের প্রাপ্য। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাসহ নানা সুবিধা আছে। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধের অর্থ স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রধান অঙ্গীকার ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করা, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণ করা।

ফখরুল বলেন, বর্তমান অবৈধ, অনির্বাচিত, কর্তৃত্ববাদী সরকার বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে অর্থাৎ আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে জনগণের ন্যায্য দাবিসমূহ দমিয়ে রাখার ঘৃণ্য পুরোনো কৌশলেই তারা ছাত্র সমাজের ন্যায্য আন্দোলনকে দমানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। আইন ও বিচার বিভাগের দোহাই দিয়ে ছাত্র সমাজের যৌক্তিক দাবিসমূহকে দমানোর সকল অপচেষ্টা ব্যর্থ বলে আমরা বিশ্বাস করি। কারণ ইতিহাসের শিক্ষা হচ্ছে, জনগণের ন্যায়সংগত আন্দোলন কখনো দমানো যায় না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭ লাখ টন মৌসুমি ফল উৎপাদনের আশা
পরবর্তী নিবন্ধজমিয়তুল ফালাহ’য় শাহাদাতে কারবালা মাহফিল কাল শুরু