সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ নিহত বা আহত হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তার পরিবারের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা। এই ক্ষতিপূরণের তহবিল গঠন করতে মোটরযান মালিকদের কাছ থেকে প্রতি বছর নির্ধারিত পরিমাণে টাকাও নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তহবিল সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষের ধারণা না থাকাসহ নানা জটিলতার কারণে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা খুবই কম।
সড়ক পরিবহন আইনের বিধিমালায় রয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে ভুক্তভোগীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। আর দুর্ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গহানি হলে ভুক্তভোগী তিন লাখ টাকা সহায়তা পাবেন। তবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকলে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ হবে এক লাখ টাকা। ক্ষতিপূরণের দাবিগুলো ১২ সদস্যের একটি ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হবে।
বিধিমালা অনুযায়ী, আর্থিক সহায়তা পাওয়ার জন্য ফরম অনুযায়ী দুর্ঘটনা ঘটার সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদন দাখিল করার তারিখ থেকে ১০ দিনের মধ্যে বোর্ডের চেয়ারম্যান অনুসন্ধান কমিটি গঠন করবেন। এই কমিটি ৩০ দিনের মধ্যে আবেদনকারীর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের জন্য অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন বোর্ডের কাছে দেবে। প্রতিবেদন দাখিলের ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ট্রাস্টি বোর্ড আবেদন মঞ্জুরপূর্বক আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আর্থিক সহায়তার টাকা আবেদনকারীর ব্যাংক হিসেবে ‘প্রাপকের হিসেবে প্রদেয়’ চেকের মাধ্যমে দিতে হবে। ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়গুলো দেখভাল করার কথা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যানের নেতৃত্বাধীন ট্রাস্টি বোর্ডের। বোর্ডের কর্মকর্তা–কর্মচারীদেরই ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদনে আহ্বান, তদন্ত ও অনুমোদন করার কাজটি করে দেওয়ার কথা। কিন্তু ট্রাস্টি বোর্ডের আলাদা কার্যালয়, কর্মকর্তা ও কর্মচারী না থাকায় পুরো প্রক্রিয়া জটিল আকার নিয়েছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান মনে করেন, আবেদনের প্রক্রিয়া সহজ করা দরকার। তিনি বলেন, আবেদন ফরম শুধু অনলাইনে পাওয়া যায়। কিন্তু যারা অক্ষরজ্ঞানহীন তাদের জন্য হাসপাতাল, থানা ও বিআরটিএ কার্যালয়গুলোতে রাখা দরকার। পূরণকৃত ফরম বিআরটিএর আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে গ্রহণ করার ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, নিহতের স্বজনেরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকেন। এখন তাদেরকে যদি ঢাকায় গিয়ে এসব কাজ করতে হয়, তবে তা খুবই দুঃখজনক।
অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, অনেকে থানায় যেতে চান না। ফলে তাদের কোনো রেকর্ড থাকে না। বিআরটিএ দুর্ঘটনার তথ্য সঠিকভাবে সংগ্রহ না করলে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তার পরিবার ক্ষতিপূরণ বঞ্চিত হতে পারেন। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালের রেকর্ড বিআরটিএকে সংগ্রহ করতে হবে।