চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রায় সাড়ে তিন মাস অচলাবস্থা থাকার পর অবশেষে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেতে শুরু করেছে। উপাচার্য নিয়োগের এক সপ্তাহের মধ্যে ক্যাম্পাসের নয় অনুষদের ডিন, ১৪টি আবাসিক হলের প্রভোস্টসহ প্রত্যেকটি প্রশাসনিক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে দুই উপ–উপাচার্যও। ক্যাম্পাস সচলে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে নতুন প্রশাসন। অপরদিকে প্রায় আট বছর পর আবাসিক হলগুলোতে সিট বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন না হওয়া পরীক্ষাসমূহও নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলে বিভাগীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সবমিলিয়ে চবি ক্যাম্পাসে ক্লাস শুরু, হলে সিট বরাদ্দের সিদ্ধান্তে উল্লসিত শিক্ষার্থীরা। এর আগে অনেকবার শিক্ষার্থীরা দ্রুত উপাচার্যসহ প্রশাসন নিয়োগ দিয়ে ক্লাস–পরীক্ষা শুরু করার দাবি জানিয়ে আন্দোলন করেছেন।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চবি সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় ৬ অক্টোবর থেকে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে ৩ অক্টোবর দেওয়া হবে হলসমূহের সিট বরাদ্দ। এই সিদ্ধান্তের পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেছেন। জনশূন্য ক্যাম্পাস ধীরে ধীরে প্রাণ পেতে শুরু করেছে। দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফিরতে পারবেন বলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চে শুরু হয় রোজা। এরপর কিছুদিন যেতেই ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে বন্ধ হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস। ১ জুলাই থেকে ক্লাস চালুর কথা থাকলেও প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় অচল হয়ে পড়ে। এরপর শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে ৭ জুলাই থেকে ক্লাস–পরীক্ষা বর্জন করেন। কোটা আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর ৫ আগস্ট সরকার পতন হলে পুরো প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পদত্যাগ করে। সব মিলিয়ে সাড়ে তিন মাস অচল ছিল বিশ্ববিদ্যালয়। অতপর ১৮ সেপ্টেম্বর প্রফেসর ড. ইয়াহ্ইয়া আখতারকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর থেকেই প্রাণ ফিরতে শুরু করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব নেওয়ার পর অচল ক্যাম্পাস সচল করার জোর প্রচেষ্টা শুরু করেন নতুন উপাচার্য প্রফেসর ইয়াহ্ইয়া আখতার। এক সপ্তাহের মধ্যে প্রশাসনিক সকল পদে নিয়োগ দিয়ে ক্লাস শুরুর ঘোষণা দেয় প্রশাসন।
উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে চবির বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ক্লাস বিমুখ রয়েছি। পড়াশোনার প্রতি অনীহা চলে এসেছে। ক্লাস না করতে না করতে শরীর ও মনে অবসাদ সৃষ্টি হয়েছিলো। ৬ অক্টোবর ক্লাসে ফিরতে পারবো, শুনে অনেক ভালো লাগছে। ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী আয়মান বলেন, দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাসে, ক্লাসে ফিরবো ভেবে ভালো লাগছে। মাঝে অনেক কিছু ঘটে গেছে। মানসিকভাবে আমরা ভালো নেই। আর দীর্ঘদিন পড়াশোনা থেকে দূরে থাকায় এক ধরনের ঝিম ধরে গেছে। ক্লাস শুরুর মাধ্যমে এই ঝিম কাটবে আশা করি।
ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ায় ব্যবসায়ী এবং রিকশা চালকদের মুখে হাসি ফুটেছে। ঝুপড়ির দোকানিরা জানান, অনেকদিন জমজমাট ছিল না ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ায় ভালো লাগছে। আমাদের ব্যবসাও বাড়ছে। রিকশা চালকরা জানান, ক্যাম্পাসে ক্লাস না থাকলে শিক্ষার্থীরা আসেন না। এতে আমাদের আয় তেমন হয় না। এখন শিক্ষার্থী আসা শুরু করেছেন আয়ও বাড়তেছে। পুরোদমে ক্লাস শুরু হলে আরও বাড়বে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, গত সাত বছর হলে সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। আমাদের আগে হলে আসন বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে এরপর আমরা ক্লাস শুরু করবো। আমরা চাচ্ছি দ্রুত এই কাজ সম্পন্ন করতে। এজন্য আমরা জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। ইতোমধ্যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আগের মত প্রক্টরিয়াল বডি সব কিছু দেখভাল করবে না। হল প্রশাসন হলের যাবতীয় বিষয়াদি দেখাশোনা করবে।