ক্রিকেটে নতুন ইতিহাস

পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়

নজরুল ইসলাম | সোমবার , ২৬ আগস্ট, ২০২৪ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ ক্রিকেটে সৃষ্টি হল নতুন এক ইতিহাস। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট ম্যাচ জিতল শান্তমুশফিকসাকিবলিটনমোমিনুলরা। রাওয়ালাপিন্ডি টেস্টে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে হারিয়ে নতুন ইতিহাস রচনা করল বাংলাদেশ দল। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের মাটিতে প্রথম জয় এবং পাকিস্তানের মাটিতে সব ফরম্যাট মিলিয়ে ২১তম ম্যাচে এসে প্রথম জিতল বাংলাদেশ দল।

২০০৩ সালে মুলতানে জয়ের সুবাস পেতে পেতে একেবারে কাছেই চলে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু একজন ইনজামাম উল হক সেদিন বাংলাদেশের জয়টা কেড়ে নিয়েছিল। আর সেদিন হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছিল খালেদ মাহমুদ সুজনদের। কিন্তু এবার আর খালি হাতে ফিরেনি টাইগাররা। কি ব্যাট আর কি বল, দুই বিভাগেই পাকিস্তানকে নাকানি চুবানি খাইয়ে ঐতিহাসিক জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ।

কথায় আছে কিছু জয় স্বপ্নের মতো। কিছু জয় আবার ছাড়িয়ে যায় স্বপ্নকেও। বাস্তব নাকি রূপকথা এরকম ঘোর লাগিয়ে দেয় কখনো কখনো। রাওয়ালাপিন্ডি টেস্টে তেমনই ঘোর কাটানো এক জয় তুলে নিল বাংলাদেশ। অথচ এই টেস্ট শুরুর আগে বাংলাদেশের জয়ের আশা এরকম ছিল অভাবনীয়। কারণ পাকিস্তানের মাটিতে পনিসংখ্যানই সে সাক্ষ্য দিচ্ছিল। তারপরও ম্যাচটিতে আধিপত্য বজায় রেখেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ দিনে খেলা শুরুর সময়ও সবচেয়ে সম্ভাব্য ফল ছিল ‘ড্র।’ কিন্তু সেই চিত্রনাট্য বদলে দিল বাংলাদেশ। মেহেদী হাসান মিরাজ আর সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত বোলিং এর সুবাধে বাংলাদেশ তুলে নিল অবিস্মরণীয় এক জয়। ক্রিকেট বোদ্ধাদের অনেকেই ম্যাচের চতুর্থ দিন শেষে বলছিলেন অংকের হিসেবে এই ম্যাচের ফল হবে ড্র। কিন্তু আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান বলে ফলটা উল্টোও হতে পারে। শেষ পর্যন্ত তেমনই হলো। আর বাংলাদেশ সৃষ্টি করল নতুন এক ইতিহাস।

টেস্টের শেষ দিনে পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংস ১৪৬ রানেই থামিয়ে দেয় বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসের ১১৭ রানের লিড থাকায় জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ৩০ রানের। রান তাড়ায় জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম কোনো আঁচড় পড়তে দেননি জয়ে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, রান তাড়া করে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ও এটি।

আগের দিনের ১ উইকেটে ২৩ রান নিয়ে শেষ দিনের খেলা শুরু করেন পাকিস্তানের দুই ব্যাটার আবদুল্লাহ শফিক এবং অধিনায়ক শান মাসুদ। তখনো ৯৪ রানে পিছিয়ে পাকিস্তান। দিনের শুরুতে বাংলাদেশের জন্য জরুরি ছিল দ্রুত উইকেট নেওয়া। দলকে কাঙ্ক্ষিত সেই উইকেট এনে দেন হাসান মাহমুদ। নিজের প্রথম আর দিনের দ্বিতীয় ওভারে তিনি ফিরিয়ে দেন পাকিস্তানি অধিনায়ক শান মাসুদকে। ১৪ রান করে উইকেটের পেছনে লিটন দাশের হাতে ক্যাচ দেন মাসুদ। চারে নামা বাবর আজম জীবন পান প্রথম বলেই। এই টেস্টে দুর্দান্ত কিপিং করা লিটন কুমার দাসের হাত ফসকে বেরিয়ে যায় সহজ ক্যাচটি। প্রথম ইনিংসে বাবরকে আউট করা শরিফুল এবার বঞ্চিত হলেন। জীবন পেয়ে বাবর বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। আব্দুল্লাহ শাফিকের সঙ্গে তার জুটিটা অবশ্য বড় হতে দেয়নি নাহিদ রানা। তরুণ এই ফাস্ট বোলারের গতির কাছে হার মেনে বোল্ড হলেন বাবর। ফিরলেন ২২ রান করে। দিনের প্রথম ঘণ্টায় উইকেট বেশ ভালোই ছিল ব্যাটিংয়ের জন্য। তবে পরে ক্রমেই টার্ন করতে থাকে বেশ। আর উইকেটের সে সহায়তা কাজে লাগান দুই টাইগার স্পিনার সাকিব ও মিরাজ। প্রথম ইনিংসে ১৪১ রান করা সাউদ শাাকিলকে দারুণ এক ডেলিভারিতে ফেরান সাকিব। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান এবার রানের দেখাও পেলেন না। আবদুল্লাহ শফিকের সাথে পঞ্চম উইকেটে ৩৭ রান যোগ করেছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৩৭ রান করা এই ওপেনারকে ফেরান সাকিব। তাকে ফিরিয়েই টেস্ট ইতিহাসের সফলতম বাঁহাতি স্পিনার হয়ে যান সাকিব। পেছনে পড়ে যান ৭০৫ উইকেট নেওয়া ড্যানিয়েল ভেটোরি। নতুন ব্যাটসম্যান সালমান আলি আঘা টিকতে পারেননি এক বলও। মিরাজের দারুণ ডেলিভারিতে স্লিপে দুর্দান্ত রিফ্লেঙ ক্যাচ নেন সাদমান। জয়ের সুবাস ততক্ষণে পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। লাঞ্চের পর খুব একটা অপেক্ষা করতে হয়নি সে জয়ের জন্য। মিরাজের নিচু হয়ে যাওয়া বলে বিদায় করে দেয় শাহিন আফ্রিদিকে। টিকতে পারেননি নাসিম শাহও। খুররাম শাহজাদকে নিয়ে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেন রিজওয়ান। কিন্তু হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর মিরাজের বলে ফিরলেন পাকিস্তানের এই শেষ ভরসা। ৮০ বলে ৫১ রান করা রিজওয়ান ফিরেন মিরাজের বলে বোল্ড হয়ে। তার একটু পর মিরাজই শেষ করে দেন পাকিস্তানের ইনিংস। ১৪৬ রানে অল আউট হয়ে যায় পাকিস্তান তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে। আর তখন বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩০ রানের। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে মেহেদী হাসান মিরাজ নেন ২১ রানে ৪ উইকেট। আর সাকিব নেন ৪৪ রানে ৩ উইকেট।

মাত্র ৩০ রানের ছোট্ট লক্ষ্যে তাড়া করতে নামা বাংলাদেশের দুই ওপেনার জাকির হাসান এবং সাদমান ইসলামের সময় লাগেনি মোটেও। আগা সালমানের বল সীমানার বাইরে পাঠিয়ে দলকে জয়ের ঠিকানায় নিয়ে যান জাকির হাসান। খেলেছেন মাত্র ৬.৩ ওভার। ধারাভাষ্য কক্ষে তখন আতহার আলি খান গর্জন করে ওঠেন, ‘ইতিহাস গড়ল এই দল’।

নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বে পাঁচ টেস্টে বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় জয়। গত বছর জয় ধরা দিয়েছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। এবার জয়ের দেখা পেলেন তিনি নিজের জন্মদিনে। জয়টি হয়তো ভুলবেন না তিনি। ম্যাচটি আলাদা জায়গা নিয়ে থাকবে দেশের ক্রিকেট ইতিহাসেও। ম্যাচের সেরার পুরষ্কার জিতেছেন ১৯১ রান করা মুশফিকুর রহিম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচসিকের হিসাব রক্ষকের ‘ঘুষ’ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল
পরবর্তী নিবন্ধতিন দিন পর যানজট খুললো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে