সাকিব আল হাসান এরই মধ্যে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু শেষ টেস্টটা তিনি খেলতে চেয়েছিলেন দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। কিন্তু খুনের মামলার আসামী হওয়ায় সাকিব নিরাপদে দেশে এসে আবার নিরাপদে দেশ ছাড়তে পারার নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন। এরই মধ্যে বিসিবি সভাপতি জানিয়ে দিয়েছেন সাকিবের নিরাপত্তার দায়িত্ব তাদের নয়। তাই সবার দৃষ্টি ছিল এ ব্যাপারে সরকারের মনোভাব কি তা জানতে। গতকাল যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, সাকিব আল হাসানকে দেশের একজন খেলোয়াড় হিসেবে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হলেও জনগণের ক্ষোভ থাকলে সেই নিশ্চয়তা দেওয়া ‘সম্ভব নয়’। জনগণের ক্ষোভ প্রশমনে রাজনীতির জায়গা থেকে সাকিবের নিজের অবস্থান সবার সামনে স্পষ্ট করারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এখানে সাকিব আল হাসানের পরিচয় দুইটা। এটা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। খেলোয়াড় হিসেবে একটা পরিচয়। আরেকটা হচ্ছে রাজনৈতিক পরিচয়। উনি আওয়ামী লীগের প্যানেল থেকে এমপি নির্বাচন করেছিলেন। মানুষের মধ্যে এই দুইটা নিয়েই মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ভোট করে মাগুরার এমপি হয়ে সংসদে গিয়েছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। ছাত্র–জনতার আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট যখন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। তখন তিনি কানাডায় সে দেশের ক্রিকেট লিগে খেলছিলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চলে গেছেন। দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা অধিকাংশই আছেন আত্মগোপনে । কেউ কেউ গ্রেপ্তারও হয়েছেন। আন্দোলন দমাতে গুলির ঘটনায় অনেকের বিরুদ্ধেই হত্যা মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় সাকিবও আসামি। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর আর দেশে না ফিরলেও বাংলাদেশের হয়ে খেলা চালিয়ে গেছেন সাকিব। কানাডা থেকে ইংল্যান্ডে গিয়ে খেলেছেন কাউন্টি লিগের ম্যাচ। তারপর পাকিস্তানে গিয়ে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়ের সঙ্গী হয়েছেন। এখন তিনি ভারতে গিয়ে বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট খেলছেন। ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের আগের দিন কানপুরে সাকিব জানিয়েছেন, টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে শেষ ম্যাচটি তিনি খেলে ফেলেছেন। অক্টোবরে দেশের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে তিনি বিদায় জানাতে চান টেস্ট ক্রিকেটকেও। তবে হত্যা মামলা মাথায় নিয়ে সাকিবের দেশে ফেরা নিয়ে আছে নানারকম অনিশ্চয়তা ও জটিলতা। সেই শঙ্কা থেকেই বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার অবসরের ঘোষণার পর বলেছিলেন আমি যেন গিয়ে খেলতে পারি এবং নিরাপদ অনুভব করি। যখন দেশের বাইরে আসার দরকার হবে, দেশের বাইরে আসতেও যেন আমার কোনো সমস্যা না হয়। বোর্ড খেয়াল করছে। বিষয়গুলোর সঙ্গে যারা জড়িত তারা দেখছেন।
সাকিব বোর্ডের দিকে তাকিয়ে থাকলেও বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ গত ২৬ সেপ্টেম্বর স্পষ্ট করেই জানিয়ে দেন, দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ খেলতে সাকিব দেশে এলে টেস্ট ক্রিকেট থেকে তার বিদায়কে রাঙিয়ে তোলার সব আয়োজনই বিসিবি করবে। তবে তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সিরিজ শেষে তার দেশ ছেড়ে যাওয়ার নিশ্চয়তার প্রক্রিয়ার অংশ হবে না বোর্ড। গতকাল রোববার বিকালের সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতির ওই মন্তব্যের বিষয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, গার্মেন্টসকর্মী রুবেল হত্যায় সাকিবের সংশ্লিষ্টতা না থাকলে মামলা থেকে যাতে তার নাম বাদ দেওয়া হয় সে ব্যবস্থা তারা করবেন। এখন খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের একজন খেলোয়াড়কে যতটুকু নিরাপত্তা দেওয়া দরকার, দেওয়ার দায়িত্ব, সেটা দেব। কিন্তু উনার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে জনগণের মধ্যে যদি ক্ষোভ থাকে তাহলে সেটা কঠিন হবে। তিনি বলেণ মনে করেন আমার নিরাপত্তায় পাঁচজন পুলিশ কনস্টেবল থাকে। একজন গানম্যান থাকে। আমার উপরে যদি দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে দশ কোটি জনগণের ক্ষোভ থাকে, তাহলে এই পাঁচ ছয়জন আমাকে কি নিরাপত্তা দেবে? আমারও সেই ক্ষেত্রে নিরাপদ থাকার সুযোগ নেই।
উপদেষ্টা বলেন জনগণের কোনো ক্ষোভ থাকলে সেটাতো আমাকেই রিডিউস করতে হবে কথা দিয়ে। আমার যেটা মনে হয়, উনাকে উনার বিষয়টা পরিষ্কার করা প্রয়োজন রাজনৈতিক জায়গা থেকে। উনার যে রাজনৈতিক অবস্থান ইতোমধ্যে মাশরাফি বিন মর্তুজা কথা বলেছেন সে বিষয়টি নিয়ে। সাকিবকে নিজের অবস্থান জনগণের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন জনগণের পক্ষ থেকে যদি নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকে, সেটার নিশ্চয়তা কেউ কাউকে দিতে পারবে না। শেখ হাসিনাকেও দেওয়া যায়নি। দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। সেই জায়গাটা অর্থাৎ রাজনৈতিক বিষয়টা পরিষ্কার করা উচিত বলে আমি মনে করি। খেলোয়াড় হিসেবে প্রত্যেক খেলোয়াড়কে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। এটা আমরা পালন করব।