বিশ্বব্যাপী করোনা দ্বিতীয় তরঙ্গের শোচনীয় পরিস্থিতি, সংক্রমণ বিস্তার ও প্রাণ সংহারের পরিসংখ্যান ভয়ঙ্কর থেকে ভয়ঙ্কর রূপে প্রতিফলিত হচ্ছে। বিশ্বের প্রায় ১৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীর ভূ-খণ্ড পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এই ক্ষুদ্র অনুজীব আক্রমণের ভয়াবহতা ও করুণ আর্তনাদ দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে শুধু ক্ষত-বিক্ষত করছে না, ভ্যাকসিন উৎপাদন-সংগ্রহ এবং পর্যাপ্ত অঙিজেন সঙ্কটে মৃত্যুর নির্দয় মিছিলকে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িত করছে। ৩ মে ২০২১ সালের গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের রিপোর্ট অনুসারে ২৪ ঘণ্টায় কোভিডে আক্রান্ত ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার ১৪৭ ও মৃত্যুবরণের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪১৭ জন। ১ম ও ২য় মে তারিখে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৪ লক্ষ ১ হাজার ৯৯৩ ও ৩ লক্ষ ৯২ হাজার ৪৮৮ জন এবং ৩ হাজার ৫২৩ ও ৩ হাজার ৬৮৯ জন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায় করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বিশ্বের এক ডজনেরও বেশি দেশে পাওয়া গেছে। ইউএন হেল্থ এজেন্সির মতে; এই ভ্যারিয়েন্ট বা বৈজ্ঞানিক নাম বি.১.৬১৭ কোভিড-১৯ এই ধরিত্রীর অন্তত ১৭ টি দেশে সংক্রমিত হয়েছে। ভারতে সনাক্তকৃত এই ভ্যারিয়েন্ট অনেকক্ষেত্রে এতবেশি ছোঁয়াচে টিকা দিয়েও একে কাবু করা দুরূহ হয়ে পড়ে।
২৬ জানুয়ারি ২০২১ এ প্রকাশিত ইউনাইটেড নেশনস ডিপার্টমেন্ট অব ইকনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স (ইউএনডিইএসএ) রিপোর্ট সূত্রে অবহিত হয়েছি যে, করোনার কারণে ২০২০ সালে অর্থনীতির সঙ্কোচন হয়েছে প্রায় ৪.৩ শতাংশ যা ২০২১ সালে সম্ভাব্য বৃদ্ধি ৪.৭ শতাংশ। রিপোর্টে ব্যক্ত হয়েছে; সামাজিক ও জলবায়ুগত স্থিতিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে যথাযথ বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে কার্যকর চেষ্টা শুরু না হলে দীর্ঘ দিন ধরে মন্দার প্রভাব চলতে থাকবে। উল্লেখ্য প্রেক্ষাপটে দেশীয় ও বৈশ্বিক আর্থিক মন্দা, কর্মহীনতা ও দারিদ্র্যের আশঙ্কাজনক ঊর্ধ্বগতি এবং সর্বোপরি ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যের নেতিবাচক প্রাক্কলন গণমানুষের জীবনে অবশ্যই পর্যুদস্ত দৃশ্যা-দৃশ্যেরই আভাস অনুমেয়। পবিত্র রমযান মাস এবং বাঙালির সর্বজনীন ঈদ উৎসবকে ঘিরে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস বিগত বছরের মতো এ বছরেও ধূসর পাণ্ডুলিপি তৈরি করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রণোদনা সামাজিক খাতকে সমৃদ্ধ করলেও দরিদ্র-হতদরিদ্রের মাঝে অনুপ্রেরণার এই রসদ সক্রিয় প্রয়োজন মিটাতে কতটুকু পর্যাপ্ত তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, করোনা মহামারির এক বছরে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে ১০ হাজার ৫১ জন। বিগত বছর শেষে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৮৯০ টি। পক্ষান্তরে দেশের ৬৬ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে। এমতাবস্থায় দেশের বিত্ত-সম্পদশালী ব্যক্তিদের উদারহস্ত সম্প্রসারিত না হলে পবিত্র রমযান শেষে ঈদ উদযাপন হৃদয়বিদারক নির্মম নিরানন্দ পরিবেশেরই উন্মোচন ঘটাবে – নিঃসন্দেহে তা বলা যায়। জাতীয় কবি কাজী নজরুলের ‘ঈদ মোবারক’ কবিতার পংক্তি উপস্থাপনে ঈদ উৎসবকে ধারণ করার মহিমায় সকলকে উদ্যোগী হতে হবে। ক্রান্তিকাল অতিক্রান্তে কবিতার পংক্তি এবং তার নির্যাস হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত করা গেলে অধিকতর মনুষ্যত্ব-মানবিকতার বিকাশমানতা অবশ্যই শক্তিমান হবে। ‘ইসলাম বলে, সকলের তরে মোরা সবাই,/ সুখ-দুখ সম-ভাগ করে নেব সকলে ভাই,/ নাই অধিকার সঞ্চয়ের!/ কারো আঁখি-জলে কারো ঝাড়ে কি রে জ্বলিবে দীপ!/ দু’জনার হবে বুলন্দ্-নসিব, লাখে লাখে হবে বদ্-নসিব?/ এ নহে বিধান ইস্লামের/ ঈদ্-অল্-ফিতর আনিয়াছে, তাই নববিধান/ ওগো সঞ্চয়ী, উদ্বৃত্ত যা করিবে দান, ক্ষুধার অন্ন হোক তোমার!/ ভোগের পেয়ালা উপ্চায়ে পড়ে তব হাতে,/ তৃষাতুরের হিস্সা আছে ও পিয়ালাতে, দিয়া ভোগ কর, বীর, দেদার’
পবিত্র ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মানুষ সম্যক অবগত আছেন যে, পবিত্র কোরআনে রমযানকে আরবীতে সাওম বা সিয়াম বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। রোযা ইসলাম ধর্মের তৃতীয় রোকন। শান্তির বারতা নিয়ে যে ইসলামের আবির্ভাব, তার মুখ্য উদ্দেশ্যের অন্যতম হচ্ছে মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনে আত্মশুদ্ধির পরিপূর্ণ বহিঃপ্রকাশ। সার্বিক দিক থেকে যে বিবেচনায় রোযার মাহাত্ম্য অতি গৌরবান্বিত, তা হলো নিজেকে পরিশুদ্ধ করার উত্তম পন্থাসমূহের অবিচল অনুশীলন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে ‘হে ঈমানদারগণ! পূর্ববর্তী উম্মতের ন্যায় তোমাদের উপরও রোযা ফরয করা হয়েছে, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার (বাকারা-১৮৩)।’ মূলত: সুবেহ সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোযার নিয়ত করে সকল প্রকার খাদ্য-পানীয় গ্রহণ ও শারীরিক-মানসিক রিপু তাড়িত কর্মযজ্ঞ থেকে বিরত থাকাকে শরীয়তের পরিভাষায় রোযা বলে। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর অমিয়বাণী অনুসারে হযরত আবু হুরায়রা (রঃ) বর্ণনা করেন যে ‘রমযান মাস উপস্থিত হলে বেহেশতের দরজাগুলো খোলা এবং দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তান শিকল পরিহিত অবস্থায় বন্দী থাকে’।
বস্তুত:পক্ষে মিথ্যা বলা, প্রতারণা করা, অন্যকে কষ্ট দেওয়া, বা যে কোন ধর্মের মানবকল্যাণ বিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে বিরত রাখা এবং অন্যকেও সুপরামর্শ দিয়ে মঙ্গলের পথে নিয়ে আসার মধ্যেই রোযার সার্থকতা। অপর এক হাদীসে বর্ণিত আছে হুজুর (সাঃ) বলেন, ‘রোযাদারদের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশক অপেক্ষা অধিক প্রিয়। তিনি আরও বলেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে একটি রোযা রাখবে – দোযখের অগ্নি থেকে তার অবস্থান হবে সত্তর বছরের রাস্তা পারাপারের দূরত্ব (বোখারী শরীফ)।’ এই রোযার মাসেই পবিত্র শবে কদর এবং মহাগ্রন্থ পবিত্র কোরআন নাযিল হয়েছে। কঠিন পরিচর্যার মাধ্যমে ৩০ পবিত্র রোযা পালনের পর আল্লাহর পক্ষ থেকে যে মহা আনন্দ উৎসবের নামাকরণ তা হচ্ছে ঈদ-উল-ফিতর। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমান পুরো বিশ্ব প্রাণঘাতী করোনা অতিমারিতে প্রচণ্ড পর্যুদস্ত। এই দুঃসময়ে ঈদের আনন্দ যাতে করোনা সংক্রমণ বিস্তারে নির্দয় ভূমিকা না পালন করতে না পরে সেজন্য দেশীয়-আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সামাজিক দূরত্ব ও সংক্রমণ প্রতিরোধে নানাবিধ নির্দেশনা-বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যদিও সর্বজনীন এই উৎসব আবহমান কাল থেকে শুধু ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীদের নয়, ধর্ম-দল-মত নির্বিশেষে পারস্পরিক কুশল বিনিময় ও বন্ধুত্বের বন্ধনকে সুদৃঢ় করে সৌহার্দ্য সম্প্রীতি এবং সকল মানবের জন্য মঙ্গল কামনায় নিবেদিত ধর্মীয় অনুষ্ঠান।
মূলত ধর্ম কোন আপেক্ষিক বিষয় নয়। স্বাভাবিক, সাবলীল-সহজ-সরল সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ইহ এবং পরকালীন শান্তি নিশ্চিতকল্পে মানবিক ও সংযত কর্মভিত্তিক একটি সুসংহত বলয় তৈরিই ধর্মের মুখ্য উদ্দেশ্য। সমাজ সভ্যতার ক্রম বিকাশের ধারায় ধর্মের রূপান্তর এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল প্রকার আচার-অনুষ্ঠান, রীতি-নীতি, বিধি-নিষেধ, নিয়ম-কানুন ইত্যাদি সম্পর্কে আমরা সবাই কম বেশি জানি। সামাজিক বাস্তবতা হচ্ছে আদিম, দাস, সামন্তবাদী, পুঁজিবাদী এবং সমাজতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থার ভিত্তিতে ধর্মের যে প্রকৃতি-পরিধির বিস্তার, পরিবর্তন-পরিমার্জন ও বিভিন্ন ধারা-উপধারায় প্রসার লাভ করেছে। ইউনেস্কো জরিপ এবং অন্যান্য সূত্র মতে বর্তমান পৃথিবীতে বিদ্যমান প্রধান ধর্মের সংখ্যা ১৯টি। এদের শাখা-প্রশাখা ও বিভক্ত সম্প্রদায়ের সংখ্যা প্রায় ২৭০টি। মহান আল্লাহর উপর অগাধ বিশ্বাস অর্থাৎ ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত এই পাঁচটি পবিত্র ইসলামের মূল ভিত্তি। এর মধ্যেই নামাজ রোযা যাকাতকে ঘিরে যে মাসটি সবচেয়ে সমাদৃত সে মাসকেই পরিপূর্ণভাবে মর্যাদাসীন করার লক্ষেই এর শেষে পবিত্র ঈদ বা সর্বোচ্চ উৎসবের দিন ধার্য করা হয়।
পবিত্র কোরআনে শুধু মাত্র যে মাসটির কথা উল্লেখ আছে সেটি হচ্ছে রমযান মাস। এই রমযান মাসের তাৎপর্য ইসলামের ইতিহাসে বিশাল। এই মাসেই প্রিয় নবীর নেতৃত্বে সংঘটিত হয় মহান বদর যুদ্ধ। মাত্র ৩১৩ জন সাহাবীদের নিয়ে প্রায় এক হাজার শত্রু মোকাবেলা করে মহাল আল্লাহর অপার কৃপায় ঈমানী শক্তিবলে জয়লাভ করে মুসলমানগণ। এই যুদ্ধে জয়ী হতে না পারলে আদৌ পবিত্র ইসলাম ধর্ম সুদৃঢ় হয়ে আজকের পর্যায়ে আসতে পারত কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এই পবিত্র রমযান মাসেই পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃত মহাগ্রন্থ পবিত্র কোরআন নাজেল হয়েছে। এ রকম বহু ঘটনা আছে যা এই মাসকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে অধিষ্ঠিত করেছে। পবিত্র রমযান মাসের শেষে যে ঈদ-উল-ফিতর বা ঈদ উৎসব, তার সমৃদ্ধ প্রেক্ষিত উপলব্ধি করতে হলে পবিত্র রমযানের দর্শন তথা সংযম, ত্যাগ, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য, আচার-আচরণ, নামাজ-দোয়া, অন্যের কষ্টে ব্যথিত হওয়া, গরীব-দুঃখীদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদির আলোকে অনুধাবন করতে হবে।
ইফতার-সেহেরী, তারাবির নামাজ, যাকাত প্রদান, ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান ঘুছিয়ে এক আল্লাহতালার সৃষ্ট মানব হিসেবে অন্যের প্রতি বিদ্বেষ, অন্যের ধর্মের প্রতি অবজ্ঞা ইত্যাদি পরিহার করে পরিপূর্ণ মানবিক-অসাম্প্রদায়িকতায় দিক্ষিত হয়ে মননশীল ও সুন্দর মানসিকতায় ঋদ্ধ হওয়া পবিত্র রমযানের শিক্ষা। সকলে মিলেমিশে শ্রেণী-বর্ণ-ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে ঈদ উৎসব পালন ও আনন্দ ভাগাভাগি করার মধ্যেই প্রকৃত সুখ এবং শান্তি নিহিত। উল্লেখ্য যে, এই মাসে যাকাত ও ঈদের দিন ফিতরা দেওয়ার রেওয়াজ একটি বৈষম্যহীনতার অসাধারণ উদাহরণ। যাকাত শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বৃদ্ধি বা পবিত্র করা। ব্যক্তিগত গচ্ছিত সম্পদের উপর গরীবের যে পাওনা রয়েছে তা আদায় করার নামই যাকাত। পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে ‘তোমরা মানুষকে আল্লাহর হুকুম মতে সম্পদের যে অংশ অন্যদের বন্টন করে দাও তা তোমাদের সম্পদের বৃদ্ধি ঘটায়’। অর্থাৎ যাকাত ফিতরা আদায় করে আর্থিকভাবে অসচ্ছল আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী বা সমাজের গরীব দুঃখী মানুষকে খাদ্যদ্রব্য, নতুন কাপড়-চোপড় বা নগদ অর্থ প্রদান করে তার অভাব ঘোচাতে বা স্বাবলম্বী হওয়ার পথে উৎসাহিত করাই যাকাতের রোপিত অনুষঙ্গ।
যাকাত দাতা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বৈধ উপার্জনের পথে নিয়োজিত থাকবেন এবং এই বৈধ উপার্জন থেকেই অন্যকে সাহায্য সহযোগিতা করবেন এটিই কাম্য। আর অপর দিকে যাকাত গ্রহীতা দাতার প্রতি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য রেখেই প্রাপ্ত যাকাত যথাযথভাবে ব্যবহার করে নিজে স্বাবলম্বী হয়ে অন্যকে এ রকম যাকাত প্রদান করে উৎসাহিত করার মনমানসিকতায় উদ্বুদ্ধ হবেন এটিই প্রত্যাশিত। ঈদ উৎসবের মহাশিক্ষা হচ্ছে মনের সকল কালিমা ও পাপের গ্লানিকে দূর করে, লোভ-লালসাকে সংহার করে, অন্ধকার-অসূচি-বিদ্বেষ-বিভেদ-কুূমণ্ডুকতা, সাম্প্রদায়িকতাসহ ইত্যাদির অশুভ-অসুন্দর মানসিকতার নিধন ঘটিয়ে একটি সমৃদ্ধ, সুন্দর ও উজ্জ্বল মনের পরিচর্যার মাধ্যমে নিজেকে পরিশুদ্ধ করা এবং দেশ-জাতিকে ভালোবেসে মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করা। মূলত বিশ্বব্যাপী এই ভয়াবহ করোনা বাস্তবতা নতুন করে স্রষ্টার অমূল্য সৃষ্টি মানব জাতিকে মানবিকতার নির্বাচন পন্থা উদ্ভাবনে প্রাশস্ত্য ধারণায় উজ্জীবিত করতে পরিচিন্তিত করেছে। ঈদ উৎসবের আনুষঙ্গিক বিনোদন-আনন্দ-অপচয়-লোক দেখানো আচ্ছাদন এবং অযৌক্তিক আচার-অনুষ্ঠান বর্জন করা অনেকের জন্য কষ্টদায়ক হলেও সর্বজনীন বৈশিষ্ট্যে উৎসবের প্রকৃত সময়োপযোগী নৈবেদ্য নির্মাণে পরিণদ্ধ হয়েছে বলেই বিবেচ্য। প্রসঙ্গত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বা সকল ধর্ম-বর্ণ-অঞ্চল-জাতিগোষ্ঠী ভেদে এই ত্যাগ কালান্তরে অবশ্যই ইতিহাস মূল্যায়নে প্রশংসিত-অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।
লেখক: শিক্ষাবিদ, সমাজ-অপরাধবিজ্ঞানী; সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।