সাতক্ষীরায় মাছ ব্যবসায়ী শাহিনুর রহমান এবং তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার ঘটনায় ছোট ভাই রাহানুর রহমানকে একমাত্র আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি। পুলিশ বলছে, শাহিনুরের ভাই রাহানুর একাই চারজনকে হত্যা করেছেন। আর নিজেকে আড়াল করতে তিনি ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রোল দেখে ‘খুনের কৌশল’ ঠিক করেছেন।
গত ১৪ অক্টোবর রাতে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার খলসি গ্রামের হ্যাচারি মালিক শাহিনুর রহমান (৪০), তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন (৩০), ছেলে সিয়াম হোসেন মাহি (৯) ও মেয়ে তাসনিমকে (৬) গলা কেটে হত্যা করা হয়। এক মাস চার দিন তদন্ত শেষে রোববার সাতক্ষীরার আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি। খবর বিডিনিউজের।
মঙ্গলবার ঢাকার মালিবাগে সিআইডি সদরদপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে এ হত্যা রহস্য উদঘাটনের তথ্য প্রকাশ করেন অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক। তিনি বলেন, রাহানুর একসময় মালয়েশিয়ায় ছিলেন। দেশে এসে কোনো ব্যবসা বাণিজ্যে সফল হতে পারছিলেন না। এর মধ্যে দশ বছরের সংসারের ইতি টেনে গত জানুয়ারি মাসে তার স্ত্রীও তাকে তালাক দিয়ে চলে যান। স্ত্রী চলে যাওয়ার পর নিঃসন্তান রাহানুর বড় ভাই শাহিনুরের পরিবারের সাথেই থাকছিলেন। আয়-রোজগার না থাকায় প্রায়ই তাকে ভাবির গঞ্জনা সইতে হত বলে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছেন।
ওমর ফারুক বলেন, এই কারণে হতাশাগ্রস্ত রাহানুর একসময় ভাবিকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করলেন। সেই পরিকল্পনা থেকে এনার্জি ড্রিংকস স্পিড কিনে এনে তাতে ঘুমের বড়ি মিশিয়ে প্রথমে ভাবি ও বাচ্চাদের খাওয়ান। রাত একটার পর বড় ভাই শাহিনুর হ্যাচারি পাহাড়া দিয়ে ঘরে ফিরলে তাকেও ঘুমের ওষুধ মেশানো কোমল পানীয় খাওয়ান।
তিনি বলেন, সবাই ঘুমিয়ে পড়লে রাত সাড়ে ৩টার দিকে একতলা ভবনের ছাদ দিয়ে শাহিনুরের ঘরে প্রবেশ করেন রাহানুর। প্রথম ঘরে ভাই শাহিনুরকে পেয়ে চাপাতি দিয়ে গলা কেটে তাকে হত্যা করেন। পাশের আরেক ঘরে তার ভাবি সন্তানদের নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। সেই ঘরে গিয়ে ভাবি সাবিনাকে চাপাতি দিয়ে কোপ দিলে তিনি চিৎকার দিয়ে ওঠেন। এরপর তার গলা কেটে হত্যা করেন রাহানুর। ছেলে-মেয়েরা দেখে ফেলায় তাদেরও হত্যা করেন তিনি।
চাঞ্চল্যকর ওই হত্যাকাণ্ডের পর শাহিনুরের শাশুড়ি ময়না বেগম অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে কলারোয়া থানায় মামলা করেন। পরে সিআইডি মামলার তদন্তে নেমে রাহানুরকে গ্রেপ্তার করে। রিমান্ডে পাঁচ দিন জিজ্ঞাসাবাদের পর গত ২১ অক্টোবর রাহানুর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক বলেন, রাহানুরের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে বাড়ির পাশের এক পুকুর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি উদ্ধার করে সিআইডি। হত্যাকাণ্ডের সময় রাহানুর একটি তোয়ালে গায়ে জড়িয়ে নিয়েছিলেন। তার ঘর থেকেই সেটা উদ্ধার করা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডি কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেন, হত্যাকাণ্ডের দিন রাত ১টা পর্যন্ত রাহানুর একটি ভারতীয় চ্যানেল দেখেছেন, আগেও তিনি দেখতেন। হতে পারে তিনি ক্রাইম পেট্রোল দেখে হত্যার কৌশল সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন।
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরো বলেন, ঘটনার দিন দুপুরে তাকে খেতে দেওয়া হয়নি, রাতেও খেতে দেওয়া হয়নি। মৃত বাবাকে তুলে তার ভাবি গালিগালাজ করেছেন। এই বিষয়গুলো তিনি মানতে পারেননি। প্রথমে ভাবিকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। রাতে ভাইও যখন একইভাবে গালিগালাজ করেন, তখন তাকেও হত্যার চিন্তা করেন।