বিমান যোগাযোগ বাড়ার সাথে সাথে কোভিড পরীক্ষার জন্য বিদেশগামীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সম্প্রতি ৫২ হাজার মানুষ কোভিড সনদ সংগ্রহ করে বিদেশ গেছেন। বিদেশগামীর এই সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে ভোগান্তিও। প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষকে তীব্র ভোগান্তি সহ্য করে কোভিড সনদ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। ফলে এই ভোগান্তি কমানোর জন্য ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও তিনটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিদেশগামীদের কোভিড পরীক্ষার অনুমোদন দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদেশগামীদের কোভিড পরীক্ষা শুরু হলে মানুষের ভোগান্তি কমার পাশাপাশি সরকারি দুটি ল্যাবের উপর চাপও কমবে। এতে করোনা পরীক্ষার জট সৃষ্টির যে আশংকা তৈরি হয়েছে তা থেকেও মুক্তি মিলবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানিয়েছে, বিদেশগামীদের জন্য কোভিড নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যাত্রার তিনদিনের মধ্যেই এই সনদ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। চট্টগ্রামে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে রেজিস্ট্রেশন, জেনারেল হাসপাতালে স্যাম্পল প্রদান এবং রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হচ্ছে। প্রচলিত সিস্টেমে প্রথমদিন রেজিস্ট্রেশন, দ্বিতীয় দিন স্যাম্পল কালেকশন এবং তৃতীয় দিন রিপোর্ট প্রদান করা হয়। অর্থাৎ যাত্রা করার চারদিন আগে রেজিস্ট্রেশন করে পরদিন জেনারেল হাসপাতালে স্যাম্পল প্রদান করা হয়। এরপরের দিন সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করতে হয় রিপোর্ট। অবশ্য অনলাইনেও রিপোর্ট সংগ্রহ করা যায়। বিদ্যমান এই পরিস্থিতিতে একজন বিদেশগামীকে পরপর তিনদিন কোভিড পরীক্ষার জন্য সিভিল সার্জন কার্যালয় এবং জেনারেল হাসপাতালে আসতে হয়।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রামে দৈনিক এক হাজার বিদেশগামীর পরীক্ষা করানোর সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। কিন্তু এজন্য সিস্টেম অনুসরণ করতে হয়। প্রথমত আমরা একদিন রেজিস্ট্রেশন করি। রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যার উপর নির্ভর করে রাতেই আমরা পরেরদিন স্যাম্পল কালেকশনের জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখি। টিউব রেডি করা থেকে রাসায়নিক কিছু বিষয় রাতেই ঠিক করে রাখতে হয়। রেজিস্ট্রেশন যারা করেন পরদিন তারা স্যাম্পল দিলে আমাদের কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু প্রতিদিন কিছু বিদেশগামী সকালে এসে হাজির হন। তারা তাৎক্ষণিক রেজিস্ট্রেশন করে তাৎক্ষণিক স্যাম্পল দিয়ে পরদিনই রিপোর্ট নিয়ে বিদেশ যেতে চান। এদের অনেকেই ওভাবে টিকেটও করে ফেলেন। কিন্তু আগের দিনের প্রস্তুতি ছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে আমরা ৮/১০ জন পর্যন্ত সামাল দিতে পারলেও এক দুইশ’ জনকে সামাল দেয়ার পরিস্থিতি থাকে না। আর এই ধরনের মানুষগুলো নিজেরাই ভোগান্তির শিকার এবং অন্যদের ভোগান্তির কারণ হচ্ছেন। সিস্টেম অনুসরণ করলে এই ভোগান্তি হতো না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডাক্তার শেখ ফজলে রাব্বি গতকাল দৈনিক আজাদীকে জানান, আমরা এক হাজারের মতো স্যাম্পল কালেকশন করে চমেক হাসপাতালের ল্যাব এবং ফৌজদারহাট বিআইটিআইডিতে পাঠিয়ে দিই। ওখানে পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেয়। এই পর্যন্ত ৫২ হাজার বিদেশগামীর কোভিড পরীক্ষা হয়েছে।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, চট্টগ্রামে মানুষের কষ্ট হচ্ছে। আমাদেরকেও প্রচুর চাপ সামাল দিতে হচ্ছে। ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও দুই/তিনটি বেসরকারি ল্যাবকে বিদেশগামীদের কোভিড পরীক্ষার অনুমোদন দেয়া হলে পরিস্থিতি অনেক সহনীয় হতো বলে মন্তব্য করেন তিনি। ডাক্তার শেখ ফজলে রাব্বি চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল এবং শেভরনে বিদেশগামীদের কোভিড পরীক্ষার অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে। আমরা এদেরকে অনুমতি দেয়ার জন্য সুপারিশ করেছি। এদেরকে অনুমোদন দেয়া হলে কিছু মানুষ ওখানে পরীক্ষা করালে আমাদের উপর চাপ কমবে। মানুষেরও ভোগান্তি কমবে। তিনি একদিনে ৯৭০ জন পর্যন্ত বিদেশগামীর কোভিড পরীক্ষা করানো হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, দিনে দিনে এই সংখ্যা বাড়ছে। কয়েকদিন আগেও দৈনিক চারশ’ থেকে পাঁচশ’ জন বিদেশগামী পরীক্ষা করাতে আসতেন। এখন ওই সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এই সংখ্যা আরো বাড়বে বলেও সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি উল্লেখ করেন।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামে করোনা রোগী বাড়ছে। বাড়ছে পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তাও। এরমাঝে বিদেশগামীর সংখ্যা বাড়ার প্রেক্ষিতে যথাযথভাবে ব্যবস্থা নেয়া না হলে কোভিড পরীক্ষার জট নতুন সংকট তৈরি করবে।