দশ বছরের মালকি এতই উচ্ছ্বসিত যে ভোরে কোনোভাবেই আর বিছানায় থাকতে চাইছিল না। অন্য চার ভাই-বোনের চেয়ে এক ঘণ্টা আগেই সে ঘুম থেকে উঠেছে, যাতে নখের লাল নেইলপলিশ তুলে ফেলতে পারে। তার এই উচ্ছ্বাসের কারণ, আবারও সে স্কুলে ফিরছে, সেজন্যই পরিপাটি হতে চায়। মালকি ফের স্কুলে ফেরার সুযোগ পেলেও অন্য ভাইবোনদের বাড়িতেই থাকতে হচ্ছে। তার পরিবার এখন সবার পড়ালেখার খরচ চালাতে অক্ষম, এজন্য কেবল সে-ই স্কুলে যাচ্ছে।
স্বাধীনতার পর দেখা সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ছয় মাস আগেও ভয়াবহ কঠিন সময় দেখেছে শ্রীলঙ্কা। অর্থনৈতিক সংকটে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার পর দ্বীপ দেশটির পরিস্থিতি এখন তুলনামূলক শান্ত হলেও ব্যাপক বেকারত্ব ও উচ্চ দ্রব্যমূল্যের প্রভাব দৃশ্যমান হচ্ছে পরিবারগুলোতে।
মা-বাবাদের দুঃস্বপ্ন : দেশের অর্থনৈতিক সংকটে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে গেলে ঠিকমতো সংসারই চালাতে পারছিলেন না মালকির মা প্রিয়ন্তিকা। তার মধ্যে পাঁচ সন্তানের পড়ালেখার খরচ চালানো হয়ে যায় দুঃস্বপ্নের মতো। উপায়ান্তর না দেখে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখায় ইতি টানেন। সংসারের ব্যয় সামলাতে তার সন্তানদের নেমে পড়তে হয় আতশবাজি বিক্রির কাজে।
বিপর্যস্ত শিক্ষাব্যবস্থা : সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাদা সুতির ইউনিফর্ম পরে নোংরা রাস্তা ধরে, মোটরসাইকেল বা টুকটুকে চড়ে স্কুলের পথে ছুটতে হয় শিশুদের। কিন্তু স্কুলগুলোর অবস্থা কেমন? সেই প্রসঙ্গে দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলেন কলম্বোর কোটাহেনা সেন্ট্রাল সেকেন্ডারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রক্রমা বীরসিংহ। অর্থনৈতিক দূরাবস্থার চিত্র যে প্রতিদিনই চোখে পড়ছে তার। যখন স্কুলের সময় শুরু হয়, সকালের সমাবেশ করি, তখন ক্ষুধায় অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা হয় শিশুদের, বলেন তিনি সরকার বলেছে, তারা স্কুলে খাবারের ব্যবস্থা করেছে।