একটা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সময় কিছু অনিয়ম হয়ে থাকে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কারও দুর্নীতির কথা জানলে তিনি ছাড় দেন না, দেবেনও না। বাসার এক পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়ে গিয়েছে জানার পর তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন সরকার প্রধান।
সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্য নানা প্রসঙ্গের পাশাপাশি দুর্নীতি নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়েন শেখ হাসিনা। গতকাল গণভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, যে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়, সেই দেশে কিছু অনিয়ম, কিছু লোকের হাতে চলে যায়। চট করে দুর্নীতির সমস্যার হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটা দীর্ঘদিনের সমস্যা। এ সমস্ত জঞ্জাল সাফ করতে হচ্ছে। এর আগে জঙ্গিবাদ ঠিক করার কথা ছিল, সেটা আমরা করেছি। এখন দুর্নীতি, যেটা আমার জিরো টলারেন্স ঘোষণা আছে। আমরা ধরছি। খবর বিডিনিউজের।
কোরবানির ঈদের আগে ১২ লাখ টাকায় ১৯ বছর বয়সী এক কিশোরের ছাগল কেনার ঘটনায় যেন পেন্ডোরার বাঙ খুলে গেছে। এই ঘটনায় প্রকাশ পায় সেই তরুণের বাবা এনবিআরের সদস্য মতিউর রহমান। পরে মতিউর, তার দুই সংসারের সন্তানাদি, আত্মীয় স্বজন ও শাশুড়ির নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য প্রকাশ হতে থাকে গণমাধ্যমে। মতিউরকে এনবিআর থেকে সরিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংযুক্ত করা হয়। এরপর থেকে লাপাত্তা।
পরে এনবিআরের আরেক কর্মকর্তার স্বজনদের নামে ৭০০টি ব্যাংক হিসাবের তথ্য সামনে আসে। আদালতের আদেশে তার সব সম্পদ জব্দ এবং ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ হয়েছে, তাকেও এনবিআর থেকে সরানো হয়েছে। পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার স্বজনদের নামে আরও বেশি সম্পদের তথ্য নিয়ে তারও আগে থেকেই তোলপাড় হচ্ছিল। মতিউরের ঘটনায় সেই আলোচনা নতুন করে শুরু হয়। এরপর থেকে সরকারি বর্তমান ও সাবেক আরও অনেক চাকুরের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন অস্বাভাবিক সম্পদের তথ্য নিয়মিত আসছে গণমাধ্যমে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কঠোর হয়েছি বলেই (দুর্নীতিবাজরা) ধরা পড়ছে, এটা মাথায় রাখতে হবে। আমরা খুঁজে বের করছি বলেই কিন্তু আপনারা জানতে পারছেন। খোঁজ না করলে তো জানা যেত না। এভাবেই চলত। কারণ এভাবেই চলছিল। সেই পঁচাত্তরের পর থেকেই এভাবে চলছে। এখন আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবেই। এখানে কোনো দ্বিধা নেই।
সরকারই দুর্নীতিবাজদের নিয়ে প্রচার চায় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে সরকারের ইমেজ নষ্ট হবে, আমি এটা বিশ্বাস করি না। আমার দায়িত্বই হচ্ছে যে সমস্ত অনিয়মগুলি আছে, সেটা ধরে একটা জায়গায় দেশকে নিয়ে আসা, সুষ্ঠু ধারায় নিয়ে আসা। সেটা আমরা করার পদক্ষেপ নিয়েছি, সেটা অব্যাহত থাকবে।
নিজের বাসার কাজ করে আসা একজনকে ছাড়েননি বলেও সাংবাদিকদেরকে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমার বাসার কাজ করে গেছে পিয়ন, সে এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না, এটা বাস্তব কথা। কী করে বানাল এই টাকা? যখন আমি জানছি তাকে বাদ দিয়ে কার্ড সিজ করে ব্যবস্থা নিয়েছি। এটা তো (দুর্নীতি) হয়, ধরার পরে চোখে আসে। তা ছাড়া হয় না। যখন ধরা পড়ে আমরা ব্যবস্থা নেই। এটা তো মানসিকতা।
সরকারি চাকরিতে প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে আরেক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে অনিয়মগুলো করে রেখে গিয়েছিল, সেটিকে আবার সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসছিলাম। ২০১৮ সালের পর থেকে আবার কিছুটা এরা ফাঁক পেয়ে যায়। কিন্তু বহুদিন থেকে পেছনে লেগে থেকে থেকে এখন ধরতে পেরেছি। ধরা পড়েছে, তদন্ত হবে, বিচার হবে।