করোনাকালীন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছতা সাধন ও বিদ্যুৎ–জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। কৃচ্ছ্রতা সাধন সংক্রান্ত অর্থ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ আনিসুজ্জামানের স্বাক্ষরে ২০২২ সালের ২১ জুলাই জারিকৃত পরিপত্রে বলা হয়– পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট এবং গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের ২৫ শতাংশ সাশ্রয় করতে হবে। অর্থাৎ ৭৫ শতাংশের বেশি ব্যয় করা যাবে না। এসব খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ অন্য কোন খাতে পুনঃউপযোজনও করা যাবে না।
২০২২–২৩ অর্থ বছরে সকল সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে মর্মে উল্লেখ করা হয় পরিপত্রে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশনায় বেকায়দায় পড়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত মার্চ মাস থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির বিল পরিশোধ করতে পারছিল না সরকারি স্বাস্থ্য সেবা এ প্রতিষ্ঠান। ফলে বিদ্যুৎ–তেল–গ্যাসের কোটি টাকা বিল বকেয়া পড়ে প্রতিষ্ঠানটির। কৃচ্ছতা সাধন করতে গিয়ে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসেও লাগাম টানতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। জ্বালানির বিল পরিশোধ করতে না পারায় অধিকাংশ সময়েই বন্ধ রাখতে হয় অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দফায় দফা চিঠি দেয়ার কথা জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ নিয়ে গত ২৬ মে দৈনিক আজাদীর প্রথম পাতায় ‘চমেক হাসপাতাল : বিদ্যুৎ তেল গ্যাসের কোটি টাকা বিল বকেয়া, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসেও লাগাম/কৃচ্ছ্রতা সাধনের নির্দেশনায় বেকায়দায় কর্তৃপক্ষ’ শিরোনামে একটি প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সর্বশেষ চমেক হাসপাতালের বিদ্যুৎ তেল গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বাড়তি ব্যয়ে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে গত ১১ জুন অর্থ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ ফারুক–উজ–জামান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সম্মতির এ তথ্য জানানো হয়।
পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট এবং গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের ৮০ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ খাতে ৭৫ শতাংশের পরিবর্তে সর্বোচ্চ ৯৫ শতাংশ ব্যয় করা যাবে বলে জানানো হয়েছে চিঠিতে। এতে করে চমেক হাসপাতালের বিদ্যুৎ তেল গ্যাস ও জ্বালানি খাতে কোটি টাকা বকেয়া বিল পরিশোধের জটিলতা অবশেষে কেটেছে। বকেয়া বিল পরিশোধের যে জটিলতা ছিল, অর্থ বিভাগের সম্মতির প্রেক্ষিতে সে জটিলতা কেটে গেছে বলে জানালেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। তিনি বলেন, আমাদের বরাদ্দ ছিল। কিন্তু অর্থ বিভাগের পরিপত্রের কারণে বিল পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছিল না। এখন সে জটিলতা কেটে গেছে। বকেয়া বিল পরিশোধে এরই মাঝে চেক প্রস্তুত করা হয়েছে বলেও জানান হাসপাতাল পরিচালক। চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মাসে ৩০ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে হয় হাসপাতালকে। গ্যাস বিল আসে আড়াই লাখের মতো। জ্বালানি (যানবাহনের) বিল দিতে হয় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা।
বরাদ্দ : চলতি অর্থ বছরে (২০২২–২৩) বিদুৎ খাতে মোট ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ পায় চমেক হাসপাতাল। পেট্রোল বা জ্বালানি খাতে ৩০ লাখ ৬৬ হাজার টাকা এবং গ্যাস খাতে ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানান– অর্থ মন্ত্রণালয়ের কৃচ্ছতা সাধনের নির্দেশনা মেনে পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট এবং গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের ৮০ শতাংশের বেশি ব্যয় করা যাচ্ছিল না। অর্থাৎ মোট বরাদ্দের ৮০ শতাংশ খরচ হওয়ায় ওই খাত থেকে আর বিল পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছিল না। একই ভাবে বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের ৭৫ শতাংশ খরচের পর ওই খাত থেকে আর বিল পরিশোধ করা যাচ্ছিল না। ফলে বরাদ্দ থাকার পরও বিল পরিশোধে জটিলতার সৃষ্টি হয়। জটিলতা নিরসনে সর্বশেষ অন্য খাত থেকে হলেও এসব বকেয়া বিল পরিশোধের অনুমতি চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠানো হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। সর্বশেষ ১১ জুন এক চিঠিতে এসব খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৯৫ শতাংশ ব্যয় করা যাবে মর্মে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। এতে চমেক হাসপাতালের বিদ্যুৎ তেল গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বকেয়া বিল পরিশোধের সৃষ্ট জটিলতা কেটে গেছে।