বর্তমানে সারা দেশব্যাপী আলোচনায় কোটা বিরোধী আন্দোলন। আন্দোলনের ফলে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ তথা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এই দৃশ্য নতুন নয়, কিংবা এখানে অবাক হওয়ার মত কিছুই নেই। কারণ, ২০১৮ সাল থেকে কয়েক মাস পর পর পর এই কোটা বিরোধী আন্দোলন আমাদের চোখে পড়ে। বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে যেখানে কোটার উপস্থিতি নগণ্য, সেখানে আমাদের দেশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষা থেকে শুরু করে চাকরির জগতে দেশের সর্বোচ্চ যে বি.সি.এস. পরীক্ষা, সেখানেও কোটার চরম উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ৫৬% পর্যন্ত বর্তমানে কোটার অন্তর্ভুক্ত। দীর্ঘ গবেষণা নয়, একটু বিবেক দিয়ে চিন্তা করলে যে দেশ ৫৬% কোটাধারী আমলা দিয়ে চলে সেই দেশে সঠিক এবং প্রকৃত মেধাবীদের মূল্যায়ন কতটুকো হয় তা খুব সহজেই বুঝা যায়। তাই, সঠিক এবং প্রকৃত মেধাবীদের মূল্যায়ন করতে দেশের একজন প্রখ্যাত এমিরিটাস অধ্যাপক বিদ্যমান এই কোটা পদ্ধতি ১০% এ নামিয়ে আনার জন্য বলেছিলেন। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় দেশের বেকার যুবকদের মাঝে ৭০% এর উপরেই উচ্চ শিক্ষিত বেকার। যাদের মাঝে শত শত এমন যোগ্যতাসম্পন্ন বেকার রয়েছে যারা কোটা না থাকলে মেধা ও যোগ্যতা বলে প্রশাসনসহ নানান ক্ষেত্রে স্থান করিয়ে দেশের উন্নয়নে নিজেদেরকে শামিল করতে পারত। আবার কোটার মাধ্যমে চাকরি পাওয়া এমনও অনেককে দেখা যায় যাদেরকে মেধা ও যোগ্যতার অভাবে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হতে হয়েছে।
সময়ের প্রেক্ষিতে পূর্বকার গৃহীত অনেক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন, বর্জন এবং নতুন করে সংশোধন করতে হয়। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। তিন বছর আগে আমরা উদযাপন করেছি স্বাধীনতার গৌরবোজ্জ্বল সুবর্ণজয়ন্তী। তাই, বর্তমানে বলবৎ কোটা পদ্ধতির সংস্কার এখন সময়ের দাবী। কারণ, প্রকৃত মেধাবীরা দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে বাংলাদেশ একদিকে যেমন উন্নত রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে যাবে তেমনি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যুগপৎ ভুমিকা রাখতে পারবে। অন্যথায় দেশে সঠিক মেধার মূল্যায়ন না হওয়ায় আগামীর প্রজন্ম একদিকে যেমন শিক্ষাবিমুখ হবে অন্যদিকে দেশের আমলা ব্যবস্থাও দেশ পরিচালনায় দুর্বল হয়ে পড়বে। যা কখনোই একটি স্বাধীন ও উন্নয়নশীল দেশের জন্য কাম্য নয়। সুতারাং, সরকারের সকল বিষয় বিবেচনায় নিয়ে অবিলম্বে প্রচলিত কোটা পদ্ধতির সংস্কার দরকার।