কেমন ছিল এবারের আয়োজন

মেলা শেষ হচ্ছে আজ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

স্টলে স্টলে পাঠকদর্শনার্থীর ভিড়। পাঠকলেখকের আড্ডা। মঞ্চে কথামালা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বইমেলার নিত্যদিনের এসব দৃশ্যের ইতি ঘটবে আজ। পর্দা নামবে বইমেলার। এর মধ্যে ‘সুন্দর আয়োজন’র ইতি ঘটায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে আয়োজক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীলরা। আর প্রকাশক মিলাবেন বাণিজ্যিক প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব।

নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে ২১ দিনব্যাপী বইমেলা শুরু হয় গত ৮ ফেব্রুয়ারি। মেলার ২০তম দিনে গতকাল সোমবার পাঠক, লেখক, আয়োজক এবং প্রকাশকের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা ছিল, কেমন ছিল এবারের বইমেলার সামগ্রিক আয়োজন? প্রত্যাশার কতটুকু পূরণ করতে পেরেছে?

গতকাল বিকেলে বইমেলায় কথা হয় বাংলাদেশ চা বোর্ডের উপসচিব মোহাম্মদ রুহুল আমীনের সঙ্গে। তিনি আজাদীকে বলেন, মেলার সামগ্রিক আয়োজন মোটামুটি ভালো মনে হচ্ছে। ঘণ্টাখানেক আগে যখন মেলায় প্রবেশ করি তখন লোকসংখ্যা কিছুটা কম ছিল। ধীরে ধীরে মানুষ বাড়ছে। অনেকের হাতে বইও দেখা যাচ্ছে। মানে তারা কিনছেনও। আসলে বইয়ের কোনো বিকল্প নেই। মানুষ বই কিনে এবং পড়ে। তিনি বলেন, এর আগে শুক্রবার ও শনিবার প্রচুর মানুষ দেখেছি। ভিড়ের জন্য প্রবেশ করাও কষ্ট হচ্ছিল ওই দুইদিন।

মেলা শুরুর পর থেকে প্রায়প্রতিদিন এসেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ চৌধুরী। তিনি বলেন, ঢাকার সঙ্গে তুলনা করলে কিছুই না। জিমনেশিয়াম মাঠে চার বছর ধরে মেলা হচ্ছে। আয়োজকদের অভিজ্ঞতাও বেড়েছে। এরপরও কোথায় যেন ঘাটতি রয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় ঘাটতি ছিল প্রচারণায়। সিটি কর্পোরেশন সেভাবে প্রচারণা চালায়নি। পত্রপত্রিকা পড়ে মানুষ যতটা জানতে পেরেছে তার সঙ্গে কর্পোরেশনের প্রচারণা যোগ হলে মেলা আরো জমে উঠত। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মাইকিং করতে পারত। স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে কয়েকদিন পর পর বিজ্ঞাপন দিতে পারত। যেটা অতীতে হয়েছে। এরপরও চট্টগ্রামের প্রতি ভালোবাসা থেকে দৈনিক আজাদী প্রতিদিন বইমেলার সংবাদ কাভার করেছে। অন্য কয়েকটি পত্রিকাও চেষ্টা করেছে। কিন্তু ইলেক্ট্রনিঙ মিডিয়াগুলো প্রতিদিন কাভার করেনি। বিগত সময়ে প্রতিদিন কোনো না কোনো টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হত।

এবার প্রকাশিত ‘খয়েরি কৌটোয় নীল বোতাম’ এর লেখক জয়নুল টিটো আজাদীকে বলেন, আয়োজকদের একটু উদাসীন মনে হয়েছে। নিচে ইট না দিয়ে ত্রিপল দিয়েছে। ভাগ্যিস বৃষ্টি হয়নি। হলে অবস্থা বেহাল হতো। এছাড়া আয়োজকদের পক্ষে প্রচারণা দুর্বল ছিল। মিডিয়াগুলো নিজ উদ্যোগে যতটুকু পারে প্রচার করেছে। কিন্তু আয়োজকদের আরো জোর দেয়া উচিত ছিল। আয়োজকদের অফিস অনেক বড়। কিন্তু লেখক কর্নার একপাশে, সেখানে অবেহেলার ছোঁয়া। লেখক কর্নারকে আরো ফোকাস করা দরকার ছিল। মিডিয়া কর্নার থাকা উচিত ছিল। মেলায় প্রতিদিন প্রকাশনা স্টলগুলোর কয়েক’শ বিক্রয়কর্মী থাকেন। বিপুল সংখ্যক লোকজন আসে। কিন্তু পর্যাপ্ত বাথরুমের ব্যবস্থা করেনি। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ বাথরুমের সংখ্যা বাড়ানো উচিত ছিল। তিনি বলেন, সবগুলো স্টল নির্ধারিত স্ট্যান্ডার্ড করা উচিত। এখন কেউ সুন্দর করে সাজিয়েছে কেউ বা ত্রিপল দিয়ে। এবার যেসব ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে তা আগামীবার যেন না হয় সেদিকে জোর দিতে হবে আয়োজকদের।

চট্টগ্রামের বইমেলায় প্রথমবার অংশ নেয় ঢাকার প্রকাশনা সংস্থা বাঁধন পাবলিকেশন্স। সাহিত্যের ক্ল্যাসিক বইগুলোর পাশাপাশি আহমদ ছফা, সমরেশ মজুমদারের বই বেশি রয়েছে এ প্রকাশনা সংস্থার স্টলে। বাঁধন পাবলিকেশন্সের বিক্রয়কর্মী মো. আরিফ বলেন, প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। দেশের ৬৪ জেলার বইমেলায় অংশ নিই। ঢাকার পর চট্টগ্রামই সেরা। ২১ ফেব্রুয়ারি বেশি সাড়া পেয়েছি। আগামীবারও আশার ইচ্ছে আছে।

শিশুপ্রকাশএর স্বত্ত্বাধিকারী আরিফ রয়হান বলেন, মেলাপ্রাঙ্গণ কম পরিচ্ছন্ন ছিল এবার। ইট না থাকায় ধুলোবালি উড়েছে। প্রচারণাও কম ছিল। কয়েকদিন আগে বাণিজ্যমেলা শুরু হয়েছে। সেখানে টিকেট কেটে মানুষ ঢুকছে, সেখানে প্রচণ্ড ভিড়। কিন্তু প্রবেশ ফি না থাকার পরও বইমেলায় লোক কম কেন হবে? এর কারণ হতে পারে প্রচারণা কম হয়েছে। তাছাড়া স্টল ফিও বেশি ছিল। ফি বেশি নিলেও সুবিধা কম দিয়েছে। এবার বিক্রি কেমন হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, বিক্রি ভালো হয়েছে। শিশুতোষ বই বেশি বিক্রি হয়েছে। শালিক প্রকাশনের আখতারুল ইসলাম বলেন, স্টল ফি কমানো দরকার।

স্বাধীন প্রকাশনের হৃদয় হাসান বাবু বলেন, ভালো সাড়া পেয়েছি। শুরুতে কম থাকলেও শেষে জমে উঠেছে। ২১ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার এবং শনিবার বন্ধের দিনে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। মাসব্যাপি আয়োজন হলে বৃহত্তর চট্টগ্রামের জন্য উপকার হতো। প্রচারণা কম ছিল এবার। আজাদী প্রতিদিন কাভারেজ না দিলে অনেকে বইমেলার খবর জানতও না। আজাদীকে ধন্যবাদ জানাই। তবে সবাইতো আর পত্রিকা পড়ে না। তাই মাইকিং করা দরকার ছিল।

বাতিঘর’ এর বিক্রয়কর্মী বাবলু চৌধুরী বলেন, গতবারের চেয়ে বিকিকিনি কম হয়েছে। একই কথা বললেন ‘প্রথমা’র ইরফাতুর রহমান অনিক ও এ আর আছাদ। তারা বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি সর্বোচ্চ এবং গত শনিবার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেশি বিক্রি হয়েছে। নতুন বইয়ে সাড়া বেশি ছিল। পুরনো কম বিক্রি হয়েছে। চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আলী প্রয়াস বলেন, বিক্রি ভালো হয়েছে। প্রচুর সাড়া মিলেছে।

মেলা কমিটির আহ্বায়ক ও চসিক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতা বেশি হয়নি। এরপরও ঢাকার তুলনা করলে আমরা সফল। তিনি বলেন, নীতিমালার পুরোটা বাস্তবায়ন করতে গেলে মেলাই হবে না। যেমন নীতিমালা অনুযায়ী কমপক্ষে ১৫টি বই প্রকাশ না করলে স্টলের বরাদ্দ পাবে না এবং নিজস্ব প্রকাশনার বাইরে অন্য বই বিক্রি করা যাবে না। কিন্তু কড়াকড়ি করলে অনেকগুলো প্রকাশনা সংস্থাকেই বাদ দিতে হবে।

নতুন বই :

নতুন প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেহাফিজ রশিদ খানের ‘লালঝুঁটি সেই রাতা’, মুফিদুল আলমের ‘মননে পরিবেশ যাপনে পরিবেশ’, ও শিউলী নাথের ‘অনি অথৈ ও সকালদের গল্প’।

মননে পরিবেশ যাপনে পরিবেশ’ এর লেখক মুফিদুল চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক হিসেবে কর্মরত। পরিবেশ বিষয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চাহিদাকে মাথায় রেখে সর্বসাধারণের জন্য পরিবেশ আইন সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে সহজপাঠ্য করে তোলা হয়েছে ‘মননে পরিবেশ যাপনে পরিবেশ’ গ্রন্থে।

এছাড়া এবার প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে আলোচনায় ছিল বিদ্যানন্দ থেকে বের করা ‘নিরক্ষরের গল্পগুচ্ছ’। নিরক্ষর লোক থেকে সংগৃহীত গল্পের অনুলিখন করে বইটি বের করা হয়েছে।

নৃগোষ্ঠী উৎসব : গতকাল বইমেলা মঞ্চে ছিল ‘নৃগোষ্ঠী উৎসব। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক ড. আজাদ বুলবুলের সভাপতিত্বে আলোচক ছিলেন খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজুরী চৌধুরী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পুরস্কারপ্রাপ্ত গুণীজন মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা, নাবিক ও প্রবাসী কল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক সুমন বড়ুয়া, কলামিস্ট ড. মাসুম চৌধুরী, কাউন্সিলর পুলক খাস্তগীর। স্বাগত বক্তব্য দেন, বই মেলা কমিটির আহ্বায়ক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু। এসময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা কর্মকর্তা উজালা রাণী চাকমা। উৎসবে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের উপজাতীয় গান ও নৃত্য শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফখরুলের কথা শুনে মানুষও হাসে: কাদের
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশে ফুটবলার তৈরিতে প্রশিক্ষণ দেবে আর্জেন্টিনা