কাঠমান্ডু থেকে পোখরা যাচ্ছিল বিমানটি। আরোহণের ২০ মিনিটের মাথায় মাটিতে আছড়ে পড়ে ইয়েতি এয়ারলাইনসের বিমানটি। নেপালে বিমান দুর্ঘটনা প্রথম নয়। বার বার সেখানে দুর্ঘটনার মুখে পড়ে বিমান। ২০১৮ সালে এএফপি জানিয়েছিল, গত তিন দশকে ২৭টি বিমান দুর্ঘটনা হয়েছে সে দেশে। কিন্তু কেন বার বার হয় এমন? গড়ে বছরে একটি বিমান নেপালে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। বেশির ভাগই ছোট বিমান। বার বার এই দুর্ঘটনার জন্য বিমান রক্ষণাবেক্ষণ এবং প্রশিক্ষণের অভাবকেই দায়ী করা হয়। ২০২২ সালের ২৯ মে তারা এয়ারের একটি বিমান দুর্ঘটনার মুখে পড়ে নেপালে। আরোহী ছিলেন ২২ জন। সকলেরই মৃত্যু হয়েছিল। ২০১৯ সালে কাঠমান্ডু ফিরছিল এয়ার ডায়নাস্টি সংস্থার একটি হেলিকপ্টার। পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায় বিমানটি। তাতে ছিলেন সাত জন। যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন নেপালের পর্যটন মন্ত্রী রবীন্দ্র অধিকারী এবং শিল্পপতি আং চিরিং শেরপা। সকল সওয়ারিরই মৃত্যু হয়েছে। ২০১৮ সালের ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার সময় ভেঙে পড়ে বম্বার্ডিয়ার কিউ৪০০ বিমান। তাতে আরোহী ৫১ জনেরই মৃত্যু হয়েছিল। ৭৬ আসনের বিমানটি ছিল বাংলাদেশের একটি বেসরকারি সংস্থার। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে পোখরা থেকে জমসম যাচ্ছিল ছোট একটি বিমান। আরোহণের আট মিনিটের মাথায় নিখোঁজ হয়ে যায় বিমানটি। পরে পাহাড়ি জেলা মিয়াগরিতে মেলে সেই বিমানের ভগ্নাংশ। সওয়ার ছিলেন ২৩ জন। সকলেরই মৃত্যু হয়েছিল। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দুর্ঘটনার মুখে পড়ে সীতা এয়ার সংস্থার একটি বিমান। মাঝ আকাশে যান্ত্রিক গোলযোগ হয়েছিল বিমানটিতে। তড়িঘড়ি কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে অবতরণ করছিল সেটি। তখনই ভেঙে পড়ে। আরোহী ১৯ জনের মৃত্যু হয়। ২০১২ সালের শুরুতে পোখরা থেকে জমসম যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার মুখে পড়ে বেসরকারি সংস্থার একটি বিমান। আরোহী ছিলেন ২১ জন। ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০১১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ললিতপুরের কাছে ভেঙে পড়ে বু্দ্ধ এয়ারের একটি বিমান। আরোহী ২২ জনেরই মৃত্যু হয়। মৃতদের মধ্যে ছিলেন ভারতীয়ও। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে তারা এয়ার সংস্থার আরও একটি বিমান ভেঙে পড়ে। লামিডান্ডা থেকে কাঠমান্ডু যাচ্ছিল বিমানটি। তিন কর্মী–সহ ২২ জন আরোহীর মৃত্যু হয়। ২০১০ সালেই অগ্নি এয়ারের একটি বিমান নিখোঁজ হয়ে যায়। কাঠমান্ডু থেকে লুকলা যাচ্ছিল সেটি। ১৪ জন আরোহীর মৃত্যু হয়। ১৯৯২ সালে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের একটি বিমান ভেঙে পড়ে। তাতে সওয়ার ছিলেন ১৬৭ জন। সকলেরই মৃত্যু হয়। কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে অবতরণের কিছু ক্ষণ আগে হয়েছিল দুর্ঘটনা। কেন বার বার হয় এই দুর্ঘটনা? সংবাদ সংস্থা ‘দ্য প্রিন্ট’–এর রিপোর্ট জানিয়েছে, নেপালের কাঠমান্ডুতে যে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, তা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,৩৩৮ মিটার উঁচুতে রয়েছে। অপ্রশস্ত এক উপত্যকার উপর গড়ে উঠেছে। ফলে ঘোরার জন্য খুব বেশি জায়গা পায় না বিমানগুলি। সে কারণেই ঘটে দুর্ঘটনা। নেপালে বার বার দুর্ঘটনার আরও একটি কারণ হল আবহাওয়া। পাহাড়ে খুব দ্রুত আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়। ফলে বিমান দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। নেপালে র্যাডার প্রযুক্তির হাল খুবই খারাপ। তাই অনেক ক্ষেত্রেই চরম আবহাওয়া আর কঠিন ভূমিরূপের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় বিমানচালককে নিজের দৃষ্টির উপরেই নির্ভর করতে হয়।
বিশেষজ্ঞরা আরও জানিয়েছেন, নেপালে বিমানচালক এবং কর্মীদের যথেষ্ট প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। ফলে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলার সময় বিপাকে পড়েন তাঁরা। তাছাড়া কম বাজেটের কারণে যথেষ্ট সংখ্যক বিমানচালক নিয়োগ করা হয় না। প্রায় সময়ই পরিশ্রান্ত থাকেন বিমানচালক। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ে।