তাঁর মৃত্যুর পর দু’দশকেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। কিন্তু ব্রিটেনবাসীর কাছে আজও তিনি ‘পিপলস প্রিন্সেস’। ফ্যাশন দুনিয়ায় আজও হট টপিক প্রিন্সেস অব ওয়েলস। এ হেন ডায়ানার পুত্রবধূ হয়েও মাথা ঘুরে যাওয়া তো দূর, বরং শিকড়ের প্রতি আরও বেশি দায়বদ্ধ কেট, দ্য ডাচেস অব কেমব্রিজ।
ব্রিটিশ সিংহাসনের ৩ উত্তরাধিকারীর জননী হওয়ার পাশাপাশি নিজস্ব স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরি করেছেন কেট। তার পোশাক, গয়না, জুতো, টুপি- সারা ক্ষণ সে দিকে নজর পাপারাৎজিদের। তাই তিনি এক আঙুলে তিনটি আংটি পরবেন আর তা নিয়ে কথা হবে না, তা-ও কি কখনও হয়! এই আংটি রহস্যের কিনারা করতে তাই হুমড়ি খেয়ে পড়েছে গোটা দুনিয়া।
কেটের অনামিকায় মোট তিনটি আংটি রয়েছে। এর মধ্যে প্রথমটি হল, হোয়াইট গোল্ড দিয়ে তৈরি ব্যান্ড, যার উপর একটি হিরের বলয় বসানো রয়েছে। আর মধ্যিখানে রয়েছে একটি বড় আকারের নীলা। বিয়ের সময় ১৮ ক্যারাটের সোনার ওয়েডিং ব্যান্ড পরিয়ে তাঁকে গ্রহণ করেন প্রিন্স উইলিয়াম। সেটিও সর্বদা কেটের অনামিকায় দেখা যায়। অনামিকায় আরও একটি আংটি পরেন কেট। কয়েক বছর আগে থেকে হিরে খচিত ওই আংটিটি পরতে শুরু করেন তিনি।
এই তিনটি আংটির সঙ্গেই আলাদা কাহিনি জড়িয়ে রয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট অ্যান্ড্রুজে পড়ার সময় কেট ও উইলিয়ামের পরিচয়। তখন দু’জনেই আলাদা আলাদা সম্পর্কে ছিলেন। তা সত্বেও একে অপরের ভাল বন্ধু ছিলেন তারা। পরবর্তী কালে একটি ফ্যাশন শোয়ে কেটকে দেখার পর তাঁর প্রতি অনুরাগ তৈরি হয় উইলিয়ামের।
পুরনো সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর দু’জনে কাছাকাছি আসেন। ২০১০ সালে কেটকে বিয়ের প্রস্তাব দেন উইলিয়াম। একসঙ্গে সংবাদমাধ্যমের সামনে বাগদানের ঘোষণা করেন তারা। সেই সময় কেটের অনামিকায় চোখ আটকে যায় সকলের। দেখা যায়, যে আংটি পরিয়ে ডায়ানাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রিন্স চার্লস, সেই আংটিই কেটের অনামিকায় শোভা পাচ্ছে। শোনা যায়, বিয়ের আংটি পছন্দ করতে বললে ডায়ানা নীলা বসানো ওই দুর্মূল্য আংটিটি বেছে নিয়েছিলেন। দামি আংটি পছন্দ করায় চার্লস তাঁকে খোঁচা দিলে ডায়ানা জানান, দামের জন্য নয়, চোখের রংয়ের সঙ্গে মিল রয়েছে বলেই ওই আংটি পছন্দ হয়েছে তার।
ডায়ানার মৃত্যুর পর তার সংগ্রহে থাকা গয়না ও হিরে-জহরতের অধিকার যায় দুই ছেলে উইলিয়াম ও হ্যারির হাতে। সেই সময় নীলাখচিত আংটি হ্যারি নিজের জন্য পছন্দ করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে উইলিয়াম ও কেটের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়লে সেটি বড় ভাইয়ের হাতে তুলে দেন তিনি। জানান, মা চেয়েছিলেন ওই আংটি ব্রিটিশ সিংহাসনের দাবিদারের দখলে থাকুক। তাই জ্যেষ্ঠপুত্র হিসেবে সিংহাসনের দাবিদার উইলিয়াম এবং তার পরিবারের হাতেই সেটি থাকুক।
তারপর ওই আংটি দিয়ে কেটের সঙ্গে বাগদান সারেন উইলিয়াম। সেই থেকে ওই আংটি পরে থাকন কেট। ২০১১ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। সেই সময় উইলিয়াম যে সোনার আংটি পরিয়েছিলেন, সেটিও সারাক্ষণ আঙুলে থাকে তার। ২০১৩ সালে তাদের প্রথম সন্তান জর্জের জন্মের পর কেটকে হিরে বসানো ‘ইটারনিটি রিং’ উপহার দেন উইলিয়াম। সম্পর্ক যখন খুব গুরুত্বপূর্ণ ধাপে পৌঁছয়, তখন সাধারণত দম্পতিরা ‘ইটারনিটি রিং’ ধারণ করেন। তাই সেটিও পরে থাকেন কেট। তার অনামিকার শেষ ভাগে বিয়ের ব্যান্ড, মধ্যিখানে নীলা এবং একেবারে অগ্রভাগে ‘ইটারনিটি রিং’।
বাবা-মায়ের ‘রূপকথা’র বিয়ে না টেকার ধাক্কা আজও কাটিয়ে উঠতে পারেননি উইলিয়াম। তাই নিজের বিবাহিত জীবন নিয়ে বারবরই স্পর্শকাতর তিনি। কেট এবং বিশেষ করে তিন সন্তানের প্রতি তার নিষ্ঠার কথা বরাবরই তুলে ধরে রাজ পরিবার। তবে উইলিয়াম নিজে কোনও ওয়েডিং ব্যান্ড পরেন না। বলা হয়, ব্রিটিশ রাজ পরিবার এবং সে দেশের অভিজাতদের মধ্যে পুরুষদের বিবাহিত পরিচয় তুলে ধরা বাধ্যতামূলক নয়। তাই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উইলিয়াম।
উইলিয়াম এবং কেটের দাম্পত্য জীবনেও মাঝখানে তৃতীয় ব্যক্তির আগমনের গুজব শোনা গিয়েছিল। তবে রাজ পরিবার বা স্বামী-স্ত্রীর কেউই তাতে বিশেষ আমল দেননি। উইলিয়ামের দাদা অর্থাৎ রানি দ্বিতীয় এলিজাবথের স্বামী প্রিন্স ফিলিপ, ডিউক অব এডিনবরাও ওয়াডিং ব্যান্ড পরেন না। উইলিয়াম তাকেই অনুসরণ করেন বলে রাজ পরিবারসূত্রে খবর। তবে এ ক্ষেত্রে উইলিয়ামের বাবা প্রিন্স চার্লস এবং প্রিন্স হ্যারি, দু’জনেই ব্যাতিক্রম। ডায়ানার প্রতি নিজের আচরণ নিয়ে কম সমালোচনার মুখে পড়েননি চার্লস। ক্যামিলার সঙ্গে তার সম্পর্কে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল রাজ পরিবারকেও। তার পরেও ক্যামিলাকেই শেষমেশ বিয়ে করেন চার্লস। নিজের কড়ে আঙুলে ওয়েডিং ব্যান্ড পরে থাকেন চার্লস। একই সঙ্গে ওই আঙুলে ‘সিগনেট রিং’ও পরেন তিনি। আভিজাত্য বোঝাতে পুরুষরা সাধারণ এই আংটি পরে থাকেন। শোনা যায়, ডায়ানা এই আংটি খুব পছন্দ করতেন। তার স্মৃতিতেই চার্লস সেটি পরে থাকেন বলেও শোনা যায়।
একই ভাবে রাজ পরিবারের ঐতিহ্যের বাইরে গিয়ে ওয়েডিং ব্যান্ড পরেন প্রিন্স হ্যারিও। মায়ের আংটি উইলিয়াম ও কেটকে দিয়ে দেওয়ার পর স্ত্রী মেগানের জন্য ডায়ানার সংগ্রহে থাকা দু’টি হিরে এবং বোৎসোয়ানা থেকে সংগ্রহ করা একটি হিরে দিয়ে বিশেষ আংটি তৈরি করেন তিনি। সেটি পরিয়েই মেগানকে বিয়ের প্রস্তাব দেন হ্যারি। স্ত্রী ও পরিবারের প্রতি ভালবাসা বোঝাতে নিজেও ওয়েডিং ব্যান্ড পরে থাকেন তিনি। মেগান নিজেও অনামিকায় দু’টি আংটি পরেন। একটি ওয়েডিং ব্যান্ড। অন্যটি হ্যারির দেওয়া বাগদানের আংটি।