কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য : পণ্ডিত, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ

| বুধবার , ১৩ আগস্ট, ২০২৫ at ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ

কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য ()। পণ্ডিত, সাহিত্যিক এবং শিক্ষাবিদ। তিনি একাধারে সংস্কৃতজ্ঞ, প্রবন্ধকার ও শিক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি ১৮৪০ সালের সেপ্টেম্বরে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি সংস্কৃত ভাষা ও শাস্ত্রচর্চায় দক্ষতা অর্জন করেন। পরবর্তীকালে কলকাতায় এসে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন এবং ইংরেজি সাহিত্যের পাশাপাশি পাশ্চাত্য দর্শন অধ্যয়ন করেন। এই দ্বিমুখী শিক্ষালাভ তাঁর চিন্তাধারাকে সমৃদ্ধ করেছিল। কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য দীর্ঘ সময় শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত ছিলেন। তিনি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনা করে ছাত্রদের মধ্যে মুক্তচিন্তা, যুক্তিবাদ এবং নৈতিকতার বোধ জাগিয়ে তুলেছিলেন। তাঁর শিক্ষাপদ্ধতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল জটিল বিষয়কে সহজভাবে ব্যাখ্যা করা এবং শাস্ত্রীয় জ্ঞানের সঙ্গে আধুনিক জ্ঞানের সমন্বয় ঘটানো। শিক্ষক হিসেবে তিনি শুধু পাঠদানে সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং ছাত্রদের জীবনের মূল্যবোধ গঠনে ভূমিকা রেখেছিলেন। সাহিত্যক্ষেত্রেও কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য ছিলেন সমান দক্ষ। তিনি প্রবন্ধ, সমালোচনা ও দার্শনিক আলোচনার মাধ্যমে সমকালীন সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছিলেন। কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্যের রচিত গ্রন্থ দুরাকাঙ্ক্ষের বৃথাভ্রমণ এবং বিচিত্রবীর্য তার অপরিণত বয়সের রচনা হলেও তার প্রতিভার স্বাক্ষর বহন করে। তার পৌল ও ভর্জিনী মূল ফরাসি থেকে অনুবাদ করা। তিনি সাপ্তাহিক পত্রিকা হিতবাদীর প্রথম সম্পাদক ছিলেন। ভারতী, অবোধবন্ধু এবং পূর্ণিমা পত্রিকায় তার প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি হিন্দুশাস্ত্র চতুর্থ ভাগ সঙ্কলন করেছিলেন এবং বাচস্পত্যাভিধান সঙ্কলনে তারানাথ তর্কবাচস্পতিকে সাহায্য করেন। তারানাথ তর্কবাচস্পতি তাকে বিদ্যাম্বুধি উপাধি দিয়েছিলেন। তাঁর লেখায় সুস্পষ্ট যুক্তি, সুশৃঙ্খল বিশ্লেষণ এবং নন্দনচেতনা একসাথে প্রবাহিত হয়েছে। সংস্কৃত সাহিত্যের গভীর জ্ঞান এবং ইংরেজি সাহিত্যপাঠের অভিজ্ঞতা তাঁকে অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল। তিনি সাহিত্যকে কেবল বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে দেখেননি; বরং সামাজিক ও নৈতিক উন্নতির হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করতেন। তাঁর রচনায় মানবতাবাদ, স্বাধীনচেতা মনোভাব এবং জ্ঞানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বিশ্বাস করতেন, শিক্ষা ও সাহিত্য মানুষের মুক্তি ও উন্নতির পথ উন্মোচন করে। তাই তিনি জ্ঞানার্জনের স্বাধীনতা ও বৌদ্ধিক মুক্তচিন্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেন। ১৯৩২ সালের ১৩ ই আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধবায়েজিদ টু অক্সিজেন সড়কের ব্রিজটি দ্রুত সংস্কার করা হোক