কুমিল্লার চতুর্থ শিরোপা জয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শুক্রবার , ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

অধিনায়ক হিসেবে বিপিএলের পঞ্চম শিরোপা জয়ের রেকর্ড গড়ার সুযোগ ছিল মাশরাফির সামনে। অপরদিকে দল হিসেবে সর্বোচ্চ চতুর্থ শিরোপা জয়ের হাতছানি ছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সামনে। তেমন এক দ্বৈরথে শেষ পর্যন্ত হেরে গেলেন মাশরাফি। চতুর্থবারের মতো বিপিএলের শিরোপা জিতে রেকর্ড গড়ল কুমিল্লা। প্রথম বারের মতো বিপিএল ট্রফি জেতা হলো না সিলেটের। আর মাশরাফিরও রেকর্ড় গড়া হলো না। বিপিএলের নবম আসরের ফাইনালে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ৭ উইকেটে হারিয়ে চতুর্থ শিরোপা তুলে নিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

এবারের বিপিএলে শুরুটা মোটেও ভাল ছিল না কুমিল্লার। কিন্তু প্রথম তিন ম্যাচে হারের পরের ১১ ম্যাচে টানা জিতে শিরোপা ঘরে তুলে কুমিল্লা। যা একটি রেকর্ডও। তবে বিশ্বের সেরা সব টিটোয়েন্টি ক্রিকেটারকে দলে ভিড়িয়ে যে চমক দেখিয়েছিল তার ফল পেল কুমিল্লা মাঠের লড়াইয়ে। প্রথম দিকে রিজওয়ান, মোহাম্মদ নবী, নাসিম শাহদের পর মঈন আলি, আন্দ্রে রাসেল, সুনিল নারাইন এবং জনসন চার্লসরা কুমিল্লাকে শিরোপা এনে দিল। সে সাথে লিটন দাশ, জাকির আলি, মোস্তাফিজ, তানভীররা দলের শিরোপা জেতাতে বড় ভূমিকা পালন করে। আর তাতেই ইতিহাস সৃষ্টি করল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। তাদের ঘরে গেল আরো একটি শিরোপা। টসে হেরে ব্যাট করতে নামা সিলেট স্ট্রাইকার্স দ্বিতীয় ওভারেই ধাক্কা খায়। টুর্নামেন্টের অন্যতম সফল ব্যাটার তৌহিদ হৃদয় ফিরেন রানের খাতা খোলার আগেই। আগের দুই ম্যাচে উপরে উঠে ব্যাটিং করে সফল হয়েছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি। এই ম্যাচেও তিন নম্বরে নেমেছিলেন সিলেট অধিনায়ক। কিন্তু ব্যর্থ হলেন। ৪ বল খেলে ১ রান করে ফিরেছেন মাশরাফি। ২৬ রানে দুই উইকেট নেই সিলেটের।

এরপর হাল ধরেন নাজমুল হোসেন শান্ত এবং মুশফিকুর রহিম। রানের চাকাকে দারুণভাবে সচল রাখেন দুজন মিলে। ৫৬ বলে ৭৯ রানের জুটি গড়ে দলের স্কোরকে পার করেন শতরানে। মঈন আলির বলে বোল্ড হয়ে ফিরেন শান্ত। তার আগে করেন ৪৫ বলে ৬৪ রান। চার মেরেছেন ৯টি আর ছক্কা একটি। টুর্নামেন্টে এটি তার চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি। এই ৬৪ রান করার পথে বিপিএলে প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে পাঁচশ রানের মাইল ফলক অতিক্রম করেন। তার রান ৫১৬। এর আগে বিপিএলে আর একজন ব্যাটার পাঁচশর বেশি রান করতে পেরেছেন। তিনি হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার রাইলি রুশো। ২০১৮১৯ মৌসুমে রংপুর রাইডার্সের হয়ে ৫৫৮ রান করেছিলেন তিনি। শান্ত এবারের বিপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। শান্তমুশফিক জুটি ভাঙ্গার পর কুমিল্লার বোলারদের সামনে একাই লড়াই করে গেছেন মুশফিক।

অপর প্রান্তে কেউই তাকে সঙ্গ দিতে পারেনি। তবে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠা মুশফিক থেকেছেন অজেয়। দলকে ১৭৫ রানে পৌঁছে দিয়ে ফিরেন তিনি। ততক্ষণে তার নামের পাশে যোগ হয়েছে ৭৪ রান। এটি তার দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি। এই ইনিংস খেলার পথে মুশফিক ৫টি চার এবং ৩টি ছক্কা মেরেছেন। রায়ান বার্ল ১১ বলে করেন ১৩ রান। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের পক্ষে ৪ ওভার বল করে ৩১ রানে ২টি উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ। তানভীর নিয়েছেন ২১ রানে এক উইকেট। আর এই একটি উইকেটের সুবাধে ১৭ উইকেট নিয়ে যৌথ ভাবে রংপুর রাইডার্সের হাসান মাহমুদের সাথে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক হিসেবে রয়েছেন।

চতুর্থ শিরোপা জিততে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের চাই ১৭৬ রান। কিন্তু শুরুটা ঝড়ের বেগে করলেও দুই ওপেনার বেশিদূর এগুতে পারেনি। ২৭ রানের মাথায় ফিরেন সুনিল নারাইন। ৫ বলে এই ক্যারিবীয়ান করেন ১০ রান। ইমরুল কায়েস উইকেটে ছিলেন ৩ বল। ফিরেছেন ২ রান করে। এরপর জুটি গড়েন লিটন এবং জনসন চার্লস। ৫৭ বলে ৭০ রানের জুটি গড়ে দলকে লড়াইয়ে রাখেন। কিন্তু হাফ সেঞ্চুরি পূরণের পর রুবেল হোসেনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যাচে পরিণত হন সীমানার কাছে। থামে লিটনের ঝড়ো ব্যাটিং। ৩৯ বলে ৭টি চার এবং একটি ছক্কার সাহায্যে ৫৫ রান করে ফিরেন লিটন। এরপর জনসন চার্লসের সাথে জুটি বাধেন মঈন আলি। প্রত্যাশিত রান রেট তখন বাড়ছিল হু হু করে। এক পর্যায়ে তা ওভার প্রতি ১৩ ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু এই দুজন এগিয়ে যাচ্ছিলেন সমান তালে। বিশেষ করে ১৬ ওভার শেষে কুমিল্লার জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৪ বলে ৫২ রান। ১৭ তম ওভার ২৩ রান তুলে নেন মঈন এবং জনসন। আর তাতেই ম্যাচের লাগাম চলে আসে কুমিল্লার হাতে। শেষ পর্যন্ত আর বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি সিলেট। ৪ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের জয় নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার এবং সব মিলিয়ে চতুর্থ শিরোপা তুলে নিয়ে উল্লাসে মাতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের খেলোয়াড় কর্মকর্তারা। মঈন আলি ১৭ বলে ২৫ আর জনসন চার্লস ৫২ বলে ৭৯ রান করে অপরাজিত থাকেন। তিনি ৭টি চার এবং ৫টি ছক্কা মেরেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএমপি নজিবুল বশরের দুই পুত্রসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত
পরবর্তী নিবন্ধস্কুল থেকে ফেরার পথে শিশুকে বাসের ধাক্কা