মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ ভেঙে পড়ার পর আশপাশ থেকে ছুটে এসেছিলেন অনেকে। তারা বলছেন, ঘটনার পর তারা স্কুল মাঠে একজনকে প্যারাসুট দিয়ে নামতে দেখেছেন। ভয়াল আগুনের জন্য তারা শুরুতে কাউকে উদ্ধার করতে পারেননি।
উড়োজাহাজটি আছড়ে পড়ে একটি ভবনের মুখে, যেখানে শিশু ও অভিভাবকদের দাঁড়ানোর জায়গা ছিল। আর ভবনটিতে বেশ কয়েকটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে, যেখানে তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির ইংরেজি মাধ্যমের ক্লাস হতো। ঘটনার আগে সবে সেখানে ক্লাস শেষ হয়েছিল।
একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী কাওসার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একটা ফাইটার প্লেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আমাদের জুনিয়র ক্যাম্পাস– এখানে ক্লাস ফাইভ থেকে এইটের ছেলেপেলেরা পড়াশোনা করে, ঠিক সেইখানে প্লেনটা পড়ছে ভাই। আমাদের ছোটো ভাইয়েরা ছিল, সবাই ছিল ভাই। ওইখানে বলতে গেলে সবাই পুড়ে গেছে, সবাই ঝলসে গেছে। আমরা ভিতরে গেছিলাম, আগুনের কারণে কাউকে বের করতে পারি নাই। খুব খারাপ অবস্থা। খবর বিডিনিউজের।
একাদশের শিক্ষার্থী আজমাইন বলেন, ক্লাসে ছিলেন, শব্দ পেয়ে নিচে নেমে দেখেন আগুন। দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদমান তানভীর বলেন, আমরা যখন ক্লাসে ছিলাম তখন বিস্ফোরণের মতো একটা শব্দ হইছে। আমরা কেউ বুঝতে পারিনি প্রথমে। তারপর হঠাৎ যখন সবাই দৌড়াদৌড়ি, ছোটাছুটি করল, তারপর স্যার আসলেন। ১ নম্বর বিল্ডিংয়ে বিমানের কিছু অংশ হয়তো ব্লাস্ট হইছে। বিল্ডিংয়ের সামনে পড়ছে, যার কারণে পুরো বিল্ডিংয়ে আগুন ধরায়ে গেছে। তারপর আমরা বের হইছি। তারপর দেখি ফায়ার সার্ভিস। পাশেই ফায়ার সার্ভিস আর পাশেই আর্মি ক্যাম্পও ছিল। যার কারণে সবাই দ্রুত চলে আসছে। আগুন নিভাইতে বেশি সময় লাগেনি, কিন্তু ভেতরে অনেক মানুষ ছিল। ছোট বাচ্চারা ছিল। ওদেরকে বের করতে অনেক সময় লাগে।
স্কুলের পাশেই বাসা লতিফা বেগমের। তিনি বলেন, তার ভাতিজি ক্লাস সিঙে পড়ে। ক্লাসে শেষে সবে সে বাসায় ফেরে। আর অন্য বাচ্চারা কোচিংয়ের জন্য ওই ভবনের সামনে অপেক্ষা করছিল। আর তখনই ঘটনা ঘটে।
ঘটনার সময় অনেকেই ছুটে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তাদের কয়েকজন বিকালে স্কুলের ঘটনা নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলেন। তাদের একজন জহিরুল বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে, উড়োজাহাজটা মাঠের মাঝখানে আছড়ে পড়ে। তারপর ছিচড়ে ভবনে গিয়ে ধাক্কা খায়। সেখানেই আগুন ধরে যায়।
স্কুল ভবন থেকে ১০০ গজের মধ্যে মোহাম্মদ জইমত আলীর এস্কেভেটর মেরামতের গ্যারেজ। চালক আপন আহমেদ কাজ করছিলেন। উড়োজাহাজ খুব নিচু দিয়ে উঠতে দেখে তারা দুজনে কিছুটা অবাক হয়েছিলেন। কয়েক মুহূর্ত পরেই বিকট শব্দ শুনে তারা প্রথমে ছুটে যান পাশের মেট্রোরেলের ডিপোর দিকে। পরে তারা দেখেন, স্কুল থেকে আগুন বের হচ্ছে।
জইমত বলেন, আমরা গিয়ে দেখি, একজন প্যারাসুট নিয়া নামছে। আর বহু বাচ্চা আর তাদের গার্ডিয়ানরা আগুনে পুড়ছে। সবাই ধরাধরি করে তাদের সেখান থেকে সরায়ে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু আগুনের তাপ ছিল সাংঘাতিক। স্কুলের ওই বিল্ডিংটার ভেতরে ঢোকার কোনো উপায় ছিল না। ওটার ভেতরে যারা ছিল, তাদের কী অবস্থা তা জানি না।
এস্কেভেটর চালক আপন আহমেদ বলেন, এক জায়গায় দেখি ১০–১৫টা বাচ্চা ডলা হয়ে পইড়ে রইছে। তাদের উদ্ধার করার কোনো উপায় আমাদের ছিল না। এসব বাচ্চাকে বের করা হয়েছে, তারাও সব পুড়ে গেছে। জামা–কাপড় ব্যাগ সব পোড়া। তিনি বলেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন চলে আসে।
মাইলস্টোন স্কুল থেকে সবে বাসায় ফিরেছিলেন দশম শ্রেণির ছাত্র শান্ত। তাদের বাসা স্কুল থেকে দুই মিনিটের হাঁটা পথ। তিনি বলেন, হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে তিনি ঘরের বারান্দায় গিয়ে দেখেন, স্কুল থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। এরপর দৌড় দিয়ে ঘটনাস্থলে এসে দেখি, স্কুলের আগে যেটা হোস্টেল ছিল, পরে সেটা ইংলিশ মিডিয়াম শাখা বানানো হয়েছে, তার ঠিক সামনে একটি বিমান ক্রাশ করেছে। দাউ দাউ আগুন বের হচ্ছে।
শান্ত বলেন, ওই ভবনে ১১ থেকে ১২টি ক্লাসরুম রয়েছে। ক্লাস থ্রি থেকে ক্লাস এইট পর্যন্ত ইংলিশ মিডিয়ামের ক্লাস হয় এখানে। প্রতি ক্লাসে ৩০ থেকে ৩৫ জন করে শিক্ষার্থী রয়েছে বলে তিনি ধারণা দেন।
শিক্ষার্থীদের কী অবস্থা হয়েছে, জানতে চাইলে শান্ত বলেন, আমরা অনেক ছাত্রকে বের করেছি, যাদের জামা–কাপড়, হাত–পা সব পুড়ে গেছে। যারা ভেতরে ছিলেন, তাদের বের হওয়ার কোনো উপায় ছিল না।
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স বের হচ্ছিল। এ সময় একটি হলুদ রঙের ক্রেইন ও বিমান বাহিনীর একটি বড় ট্রাক ভেতরে ঢোকানো হয়। ঘটনার পর পরই উপস্থিত হয়েছিলেন ঠিকাদার আতিকুর রহমান। তিনি বলছেন, যারা পুড়েছে, তাদের বেশিরভাগই আট থেকে দশ বছরের বাচ্চা। অনেককে হাতে ধরার মতো অবস্থায় ছিল না।