কিছু রাজনৈতিক মহল নির্বাচনকে ব্যাহত করার জন্য নিত্যনতুন দাবি তুলছে : ফখরুল

নির্বাচন বন্ধে হাসিনাকে আড়াই হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন এস আলম

| বৃহস্পতিবার , ২৮ আগস্ট, ২০২৫ at ৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ

সরকারের ভেতরের একটি মহল গণতন্ত্রকামী শক্তির বিরুদ্ধে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া ভোট বানচালের ষড়যন্ত্র রুখতে সবাইকে সজাগ থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির এই নেতা। মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের ভেতরে একটা মহল তারা অত্যন্ত সচেতনভাবে চেষ্টা করছে যে, এই যারা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি তারা যেন আসতে না পারে। গতকাল বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক আলোচনা সভায় কথা বলছিলেন মির্জা ফখরুল। ভাসানী জনশক্তি পার্টি ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের যৌথ উদ্যোগে রাজনীতিক কাজী জাফর আহমদের দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। খবর বিডিনিউজের।

এ সময় কিছু রাজনৈতিক মহল পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনকে ব্যাহত করার জন্য নিত্যনতুন দাবি তুলছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল। মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে কিছু সংখ্যক রাজনৈতিক মহল অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য, নির্বাচনকে ব্যাহত করার জন্য নিত্য নতুন দাবি তুলে চলেছে। সংখ্যানুপাতিক পিআর, সংখ্যানুপাতিক ভোট এটা বুঝতে সময় লাগে, এটা বোঝানো কঠিন খুবই কঠিন। এগুলো নিয়ে তারা হুমকি দিচ্ছে, কথা বলছেন, অত্যন্ত জোরেশোরে হুমকি দিচ্ছেন। আমার প্রশ্নটা হচ্ছে যে, কেন করছেন এটা?

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগও ভোট বানচালের চেষ্টায় আছে বলে মনে করেন ফখরুল। তিনি বলেন, একটি পত্রিকা সকালবেলা উঠেই দেখলাম, বিরাট করে, ব্লক করে খবর বেরিয়েছে, যে একজন ব্যক্তি, যিনি বাংলাদেশের বিখ্যাত ব্যাংক লুটের জন্যে, তিনি আড়াই হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন হাসিনাকে। এস আলম, দিল্লিতে বসে তিনি আড়াই হাজার কোটি টাকা ইতোমধ্যে দিয়ে দিয়েছেন। এবং পরিকল্পনা করেছেন যে কীভাবে ওই টাকাকে ব্যবহার করে তারা বাংলাদেশে নির্বাচন বন্ধ করবে এবং হাসিনাকে আবার দেশে ফিরিয়ে আনবে।

নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এজন্যই আমি আপনাদেরকে সবসময় অনুরোধ করছি, অনেক বেশি সজাগ এবং সতর্ক থাকতে হবে। আমরা যদি মনে করে থাকি যে, আমরা জিতে গেছি, সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে তাহলে বিরাট ভুল হবে। আপনি বলেন আজকে যখন দেখি পত্রিকায় যে, নিউ ইয়র্কে আমাদের বাংলাদেশের কর্মকর্তাকে, আমাদের বাংলাদেশের একজন উপদেষ্টা অথবা উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদেরকে, আওয়ামী লীগের লোকেরা হেনস্তা করছে, হামলা করছে। তখন কোথায় যাব আমরা?

ফখরুল বলেন, সুতরাং আমাদের দায়িত্ব হবে যারা আমরা দেশকে ভালোবাসি কাজী জাফরের অনুসারী হিসেবে, যারা আমরা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যারা আমরা লড়াই করতে দ্বিধাবোধ করি না, যারা রক্ত দিতে দ্বিধাবোধ করি না, তাদেরকে আজকে আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ন্যূনতম বিষয়গুলোর ওপরে একমত হয়ে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন, একাত্তরে যারা গণহত্যায় সহযোগিতা করেছে, তারাই এখন বড় বড় কথা বলছেন। একাত্তরকে ভুলিয়ে দেওয়া সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা যারা যুদ্ধ করেছিলাম এখানে সবাই আছি।আমাদের অনেকে গুলি খেয়েছে, অনেকের ভাই মারা গেছে, মা মারা গেছে, বাড়িঘর পুড়ে গেছে, গ্রামের উপর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। সেই একাত্তরের কথা আমরা ভুলি নাই, ভোলানো সম্ভব নয়। অনেক প্রচেষ্টা চলছে এটাকে ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য।

কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলের নাম না নিয়ে ফখরুল বলেন, আমরা চোখের সামনে দেখেছি আমাদের মা বোনদেরকে বেইজ্জতি করতে, চোখের সামনে দেখেছি আমরা আমাদের ভাইদের গলা কেটে ফেলে দিতে, চোখের সামনে দেখে বাস থেকে নামিয়ে ব্রাশফায়ার করে গুলি করে মেরে ফেলতে এবং যারা সেদিন সহযোগিতা করেছে তারাই আজকে অনেক বড় বড় কথা বলছে।

হতাশা প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ইদানিং মাঝে মাঝে আমার কাছে একটা হতাশার ছায়া ঘোরাঘুরি করে। যেদিকে তাকাই দেখি বেশিরভাগ মানুষই আপনার নষ্ট হয়ে গেছে। দুর্নীতি, দুর্নীতি, দুর্নীতি। আপনি কোনো অফিস আদালতে যেতে পারবেন না। আমি এর আগেও কথা বলেছি, আমাকে একজন শিল্পপতি বলেছেন যে আগে কাজ উদ্ধারে এক লাখ টাকা দিতে হত, এখন হয় পাঁচ লাখ টাকা। ফখরুল বলেন, মানুষের মধ্যে নৈতিক যে পরিবর্তন কাম্য ছিল সেটা আসেনি।

জিনিসপত্রের দাম ফের চড়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আমার স্ত্রী সকালে ব্যাংকে ফোন করেছেন কিছু টাকা তোলার জন্যে। ব্যাংক বলেছে যে, সরি ম্যাডাম আমরা ৫ হাজার টাকার বেশি দিতে পারব না। তাহলে কোথায় আমরা? এই এক বছরের মধ্যে যদি আমরা পরিবর্তন আনতে না পারি তাহলে কিভাবে কি হবে? এইসব ঝামেলাগুলো এড়িয়ে যেতে পারত যদি তিন মাসের মধ্যে যদি নির্বাচনটা করতে পারত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফজলুর রহমানের বক্তব্যে দল বিব্রত : প্রিন্স
পরবর্তী নিবন্ধইঞ্জিন সংকট : চাহিদার চেয়ে কম চলছে পণ্যবাহী ট্রেন