কালুরঘাটে নতুন ‘রেল কাম সড়ক সেতুর’ কাজ শুরু হবে আগামী বছর। এই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি কালুরঘাটে নতুন সেতুর। নতুন সেতুর কাজ আগামী বছরে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। গতকাল সোমবার কালুরঘাট নতুন সেতুর সংস্কার কাজ পরিদর্শনে এসে এই তথ্য জানান।
নতুন সেতুর নির্মাণ কাজ আগামী বছর শুরু হলে শেষ করতে ২০২৮ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে। তাই বাংলাদেশ রেলওয়ে পুরনো কালুরঘাট সেতুটি মেরামতের কাজ শুরু করেছে। সংস্কারের পর বর্তমান কালুরঘাট সেতুতে আরো ২০ বছর ট্রেন চলতে পারবে জানিয়ে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। গতকাল সোমবার কালুরঘাট সেতু মেরামতের কাজ পরিদর্শনে এসে রেলমন্ত্রী বলেন, দেশের অন্য অঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগের জন্য এই কালুরঘাট ব্রিজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি অতিক্রম করেই ট্রেন যাবে পর্যটন নগরী কঙবাজার। এটি অনেক পুরনো ব্রিজ। আমাদের যে লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) ছিল, সেগুলো ১২ টনের ছিল। এখন দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আধুনিক উচ্চগতির ১৫ টনের ইঞ্জিন এসেছে। এগুলো নিয়ে ট্রেন যাবে কঙবাজার।
রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইউশিন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন এবং দোহওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং যৌথ উদ্যোগে এ বছরের শুরুতে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন করেছে। অনুমান করা হচ্ছে, প্রকল্পের ব্যয় হবে ১ হাজার ৩৪২ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন ডলার বা ১৩ হাজার ৮২৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এর জন্য ৭১২ দশমিক ৫১ মিলিয়ন ডলার বা ৭ হাজার ৩৩৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা কোরিয়ান ঋণ পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং বাকিটা সরকার অর্থায়ন করবে।
রেলমন্ত্রী বলেন, নতুন সেতুতে এখানে ডাবল লাইন ডুয়েল গেজ থাকবে। সড়কও থাকবে ফোর লেইনের। নতুন সেতু না হওয়া পর্যন্ত এই ব্রিজটি (পুরনো কালুরঘাট সেতু) যাতে আমরা ব্যবহার করতে পারি, সেভাবে এটিকে তৈরি করা হচ্ছে।
জানা যায়, ২০১৯ সালে যখন সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর যখন নকশা তৈরি করা হয় তখন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ সেতুর উচ্চতা নিয়ে তাদের আপত্তির কথা তুলে ধরে। এরপর সেতুর অগ্রগতি আটকে যায়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের সাথে রেলওয়ের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের প্রস্তাব অনুযায়ী নৌযান চলাচলের জন্য ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স রাখা হয় ১২ দশমিক ২ মিটার। পরবর্তীতে ইডিসিএফের তহবিলে আরেকটি সম্ভাব্যতা যাচাই হয় ২০২১ সালে। সেই অনুযায়ী, সেতুর নকশা করা হয় দ্বিতল বিশিষ্ট। নকশাটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হলে প্রধানমন্ত্রী নতুন নকশা করার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী সেতুটিতে ডাবল লেন ডুয়েলগেজ রেললাইন ও ডাবল লেনের সড়ক করা নির্দেশ দেন। সেই হিসেবে ২০২২ সালের আগস্টে নতুন নকশা প্রধানমন্ত্রীকে দেখানে হলে তাতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দেন। সেই হিসেবে এখন ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন ও চার লেনের সড়ক হবে। এতে ব্যয় আগের তুলনায় অনকে বেড়ে গেছে। তবে দক্ষিণ কোরিয়া অর্থায়নে রাজি হয়েছে বলে প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে যখন ডিপিপি তৈরি করা হয়, তখন প্রস্তাবিত সেতুর দৈর্ঘ্য ছিল ৩ কিলোমিটার, যার মধ্যে মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ১ কিলোমিটার এবং বেড়িবাঁধের ২ কিলোমিটার। নৌযান চলাচলের জন্য ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ছিল ৭ দশমিক ৬২ মিটার।
নৌযান চলাচলের জন্য এখন ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স রাখতে হবে অন্তত ১২ দশমিক ২ মিটার। এর ফলে সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য বেড়ে হয়েছে ১১ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার। ১ কিলোমিটার মূল সেতুর পাশাপাশি উভয় পাশে ৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও উভয় পাশে ৫ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার বাঁধ তৈরি হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, এটাই ব্যয় বৃদ্ধির একটি বড় কারণ। চট্টগ্রামের বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার একাংশের মানুষের যাতায়াতের প্রধান উপায় কালুরঘাট সেতু। ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে কঙবাজারের পথে যেতে হলে ট্রেনকে প্রায় শতবর্ষী এই সেতুর ওপর দিয়েই কর্ণফুলী নদী পেরোতে হবে।
কঙবাজারের পথে রেল যোগাযোগ শুরুর আগে সংস্কার কাজের জন্য গত ১ আগস্ট তিন মাসের জন্য কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচল বন্ধ করা হয়।
২০১০ সালে শাহ আমানত সেতু উদ্বোধনের আগ পর্যন্ত কালুরঘাট সেতু দিয়ে ভারী যান চলাচলের কারণ সেতুটি আরও নাজুক হয়ে পড়ে।