ইউরোপীয় রেনেসাঁসের কালজয়ী এক শিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি। বহুমুখী প্রতিভাধর এই ব্যক্তিত্ব একাধারে ছিলেন চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, স্থপতি, সমরযন্ত্রশিল্পী এবং বিজ্ঞানী। বিশ শতকের অনেক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের নেপথ্য জনক পনেরো শতকের মাঝামাঝি সময়ে জন্ম নেওয়া এই বিশিষ্ট ব্যক্তি। আজ তাঁর ৫৬৮তম জন্মবার্ষিকী।
লিওনার্দো দা ভিঞ্চির জন্ম ১৪৫২ সালের ২৫শে এপ্রিল ইতালিতে – ফ্লোরেন্সের ভিঞ্চি নগরের এক গ্রামে। শৈশব থেকেই ভিঞ্চি ছিলেন অসাধারণ মেধাবী। সর্বোপরী অজানাকে জানার অপার কৌতূহল এবং নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কারের দুর্নিবার আগ্রহ ছিল তাঁর স্বভাবজাত। ভিঞ্চির প্রতিভার প্রথম প্রকাশ ঘটে চিত্রশিল্পে। এই অঙ্গনে তিনি কিছুকাল শিক্ষা নিয়েছিলেন হাতে-কলমে। জীবনের অধিকাংশ সময় তাঁর কেটেছে অক্লান্ত পরিশ্রম আর কঠোর কর্মসাধনার মধ্য দিয়ে। নিরন্তর তিনি নিমগ্ন থাকতেন অধ্যয়ন, গবেষণা আর মৌলিক উদ্ভাবনে। নিজ উদ্যোগেই তিনি শরীরতত্ত্ব, অঙ্গব্যবচ্ছেদবিদ্যা, অঙ্কশাস্ত্র, জীববিদ্যা, পদার্থবিদ্যা সহ বিচিত্র বিষয়ে জ্ঞান আহরণ করেন। অর্জিত জ্ঞান ও গবেষণালব্ধ বিষয় তিনি ফুটিয়ে তোলেন নিপুণ হাতে ছবি এঁকে। কেবল ছবিই নয়, প্রতিটি ছবির পাশে এর বিশদ বর্ণনাও থাকতো। এভাবেই তিনি নানা বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, শরীরবিদ্যার কিছু কিছু বিষয়, উড়োজাহাজ, সমরাস্ত্র ইত্যাদির মডেল এঁকে গেছেন। খড়িমাটি, কাঠ-কয়লা ও কালিকলম দিয়ে এসব নকশা তিনি এঁকেছেন তাঁর ব্যক্তিগত নোটবুকে। এই নোটবুকটি ভিঞ্চির একটি অসাধারণ শিল্পকর্ম। এর পৃষ্ঠা অসংখ্য। নিজের ব্যক্তিগত জীবন ও কর্মের বিচিত্র বিষয়ও লেখা রয়েছে এতে। চিত্রশিল্পী ভিঞ্চি এঁকেছেন শত শত ছবি। তেল রঙে আঁকা পৃথিবী বিখ্যাত ছবি ‘মোনালিসা’র জন্য ভিঞ্চি অমর হয়ে আছেন। তাঁর অন্যান্য চিত্রকর্মের মধ্যে ‘শেষ নৈশভোজ’, ‘সেন্ট অ্যান ও শিশু সহ ম্যাডোনা’, ‘ম্যাজাই প্রশস্তি’, ‘পর্বত পরিবৃতা মাতৃভূমি’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। শিষ্য পরিবেষ্টিত যিশু খ্রিষ্টের শেষ নৈশভোজের চিত্রটি আঁকা রয়েছে ইতালির মিলান শহরের এক গির্জার প্রাচীরে। ১৫১৯ সালের ২রা মে এই মহান শিল্পী প্রয়াত হন।