কাল ভোট, কে যাচ্ছেন হোয়াইট হাউজে

জনসমর্থনে হ্যারিস-ট্রাম্পের ব্যবধান কমে ১ পয়েন্টে

| সোমবার , ৪ নভেম্বর, ২০২৪ at ৭:৫৯ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বের সবচেয়ে পরাক্রমশালী রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল মঙ্গলবার। একেবারে শেষ সময়ে এসে জনসমর্থনের দিক থেকে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসের সঙ্গে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যবধান মাত্র এক শতাংশ পয়েন্টে নেমে এসেছে। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত রয়টার্স/ইপসোস জরিপের ফলে দেখা যায়, হ্যারিস পেয়েছেন ৪৪ শতাংশ সমর্থন আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৩ শতাংশ সমর্থন। তিনদিনের এই জরিপ শেষ হয় গতকাল রোববার। এতে ৫ নভেম্বরের নির্বাচনের আগে দুই প্রার্থীর অবস্থান প্রায় সমান সমান দেখা যাচ্ছে। খবর বিডিনিউজের।

হ্যারিস গত জুলাইয়ে নির্বাচনি দৌড়ে সামিল হওয়ার পর থেকে নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্যে সমর্থনের দিক থেকে ট্রাম্পের তুলনায় এগিয়ে ছিলেন। এরপর সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে হ্যারিসের সমর্থন ধীরে ধীরে কমেছে। গত ১৬ থেকে ২১ অক্টোবরে পরিচালিত রয়টার্স/ইপসোস জরিপে দেখা গেছে, হ্যারিস ট্রাম্পের চেয়ে ২ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন। নতুন জরিপটি চালানো হয়েছে দেশজুড়ে ১ হাজার ১৫০ জনের ওপর। এর মধ্যে নিবন্ধিত ভোটার ছিলেন ৯৭৫ জন। এই জরিপে দেখা গেছে, ভোটারদের মনে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নির্বাচনি বিষয়ে হ্যারিসের চেয়ে ট্রাম্প অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। অর্থনীতি, বেকারত্ব এবং কর্মসংস্থানের প্রশ্নে ট্রাম্প ৪৭ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পেয়েছেন আর হ্যারিস পেয়েছেন ৩৭ শতাংশ সমর্থন। আবার রাজনৈতিক উগ্রবাদ এবং গণতন্ত্রে হুমকি মোকাবেলার প্রশ্নে হ্যারিস পেয়েছেন ৪০ শতাংশ ভোটারের সমর্থন আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৩৮ শতাংশ সমর্থন। রয়টার্স/ইপসোস জরিপসহ জাতীয় জরিপগুলোতে ভোটারদের দৃষ্টিকোণ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সংকেত পাওয়া যায়। তবে নির্বাচনে প্রতিটি রাজ্যের ভোট এবং ইলেকটোরাল কলেজে নির্ধারণ হয় বিজয়ী কে হবেন। রাজ্যগুলোর মধ্যে দোদুল্যমান রাজ্যগুলোই জয়পরাজয় নির্ণায়ক হয়ে ওঠে। ফলে ট্রাম্পের সঙ্গে হ্যারিসের ব্যবধান মাত্র ১ পয়েন্ট হলেও এবং ৫ নভেম্বর পর্যন্ত হ্যারিসের অবস্থান একই থাকলেও নির্বাচনে জয়ের জন্য তা যথেষ্ট নাও হতে পারে।

কমলার সমর্থনে সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার : নির্বাচনি দৌড়ে হ্যারিস সামিল হওয়ার পর থেকেই শক্ত ট্রাম্পের বিপরীতে তাকে সমর্থন দিতে এক কাতারে দাঁড়াচ্ছেন স্যোশাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররাসহ তারকারা। স্যোশাল মিডিয়ায় হ্যারিস হয়ে উঠেছেন জনপ্রিয়। কমলা হ্যারিস তার নির্বাচনি প্রচার শুরুর পর এক সপ্তাহেই শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা থেকে শুরু নানা শ্রেণির মানুষ তাকে সমর্থন জানাতে জুম কল করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। আর এসব বড় বড় জুম কলে অল্প সময়ের মধ্যেই হ্যারিসের নির্বাচনি তহবিল বেড়ে পৌঁছে যায় রেকর্ড পর্যায়ে। হ্যারিসের ভার্চ্যুয়াল নির্বাচনী সমাবেশগুলোতেও দেখা গেছে তারকাদের মেলা। সমাবেশ সঞ্চালনা করেছেন মার্কিন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, অভিনেত্রী ও সঞ্চালক অপরাহ উইনফ্রের মতো ব্যক্তিত্ব। আর সমাবেশে যোগও দিয়েছিলেন জেনিফার লোপেজ, মেরিল স্ট্রিপ, ক্রিস রক, বেন স্টিলার ও জুলিয়া রবার্টসের মতো খ্যাতনামা সব হলিউড তারকা। ইন্টারনেট এবং স্যোশাল মিডিয়ার কথা বলতে গেলে কমলা হ্যারিস সেখানে অত্যন্ত জনপ্রিয় বললেও অত্যুক্তি হবে না। ব্যবহারকারীরা হ্যারিসের পাশাপাশি তার রানিং মেট টিম ওয়ালজ এরও গুনমুগ্ধ। নির্বাচনি দৌড়ে হ্যারিসকে তর তর করে সামনে এগিয়ে দেওয়ার চাবুক হিসাবে কাজ করেছে এই স্যোশাল ইনফ্লুয়েন্সার বাহিনী। ভোটারদের কাছে পৌঁছতে হ্যারিসের জন্য তারা সহায়ক হয়েছে। ২০১৯ সালে হ্যারিসের নির্বাচনি প্রচারের তুলনায় এবার পুরো বিপরীত চিত্র দেখা গেছে।

কমলা হ্যারিসের প্রতিপক্ষ রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পেরও স্যোশাল মিডিয়ায় জনসমর্থন অনেক বেশি ছিল, যখন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নির্বাচনী দৌড়ে ছিলেন। কারণ, বাইডেন এবং ট্রাম্পের মধ্যে পরেরজন পপকালচার দর্শকশ্রোতার মধ্যে বেশি পছন্দনীয় ছিলেন। কিন্তু পরে বাইডেনের জায়গায় হ্যারিস নির্বাচনি দৌড়ে চলে আসায় এখন তরুণযুবাদের কাছে সবকিছুই বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আর সেটি হয়েছে অনলাইনে হ্যারিসের টিকটক মিম এবং এমন আরও অনেককিছুর কারণে।

অনলাইনে ইনফ্লুয়েন্সারদের যে প্রভাব আছে সেটিও সাফল্যের চাবিকাঠি হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করেতরুণ জনগোষ্ঠীকে স্ক্রিনের পেছন থেকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে। আর কমলা হ্যারিস নিজেও স্যোশাল মিডিয়ায় খুবই সক্রিয় হওয়ার কারণে তিনি প্রতিদিনের ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন। তাই স্যোশাল মিডিয়া তারকা এবং রকস্টারের মতো জনপ্রিয়তা শেষ পর্যন্ত হোয়াইট হাউজে পৌঁছেও দিতে পারে হ্যারিসকে।

এদিকে নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসতেই গুজব, বিভ্রান্তিকর সব অভিযোগ এবং ভোটার ও ভোট জালিয়াতি নিয়ে সবৈর্ব মিথ্যা অনলাইনে নজিরবিহীন মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ছে। ভোটে কথিত এই অনিয়মের অভিযোগে একাট্টা করা শত শত ঘটনা ছড়াচ্ছে বিভিন্ন ব্যক্তিসহ স্বতন্ত্র ও রিপাবলিকানসমর্থক গোষ্ঠীগুলো। ডেমোক্র্যাটদের কাছ থেকেও অল্প সংখ্যক পোস্ট আসছে। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া জালিয়াতি, অনিয়মের অভিযোগের এই ঝড় নির্বাচনি কর্মকর্তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি তাদেরকে গুজব মোকাবেলা করা এবং ভোটারদের আশ্বস্ত করতে হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে অনলাইনের পোস্টগুলোতে রিপাবালিকান প্রার্থী ট্রাম্পের প্রচারশিবিরের মিথ্যা দাবিকে সমর্থন করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতেছিলেন। এবার ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে তাকে আবারও প্রতারণা করে পরাজিত করা হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা উদ্বিগ্ন যে, নির্বাচনের ঠিক দুদিন আগে এমন মিথ্যা, ভ্রান্ত তথ্যের প্রচারে নির্বাচনের ফল নিয়ে মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ন হতে পারে। তাছাড়া নির্বাচনের দিন এবং এর পরও পরিস্থিতি হুমকি এবং সহিংসতার দিকে চলে যেতে পারে। যেমনটি আগেও ঘটেছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৩ বছর ধরে স্কুলে না গিয়েও বেতন তুলতেন আওয়ামী লীগ নেতা
পরবর্তী নিবন্ধসাগরে রয়েছে ৪৯৮ প্রজাতির সামুদ্রিক শামুক ও ঝিনুক