কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন মানব সম্পদের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে

| মঙ্গলবার , ২১ অক্টোবর, ২০২৫ at ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ

অতি সম্প্রতি পালিত হলো বিশ্ব দারিদ্র্য নিরসন দিবস। এটি বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও বৈষম্য দূরীকরণের বার্তা বহন করে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, একসময় দারিদ্র্য নিরসনে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছিল, যার উদযাপন করতে জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টও ঢাকায় এসেছিলেন। কিন্তু সামপ্রতিক বছরগুলোতে সেই সাফল্য ম্লান হয়ে গেছে। বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সামপ্রতিক প্রতিবেদন এ বিষয়ে উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গত তিন বছর ধরে মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করায় সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে, ক্রয়ক্ষমতা নেমে গেছে নিচে। একদিকে মানুষ কম উপার্জন করছে, অন্যদিকে বেশি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছে। ফলস্বরূপ, দারিদ্র্যসীমার কিছুটা উপরে থাকা পরিবারগুলোও নেমে এসেছে দরিদ্রের কাতারে। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) গবেষণা অনুযায়ী, ২০২২ সালে দারিদ্র্যের হার ১৮.৭ শতাংশ থাকলেও ২০২৫ সালের মে মাসে তা দাঁড়িয়েছে ২৭.৯৩ শতাংশে। অতি দারিদ্র্যের হারও ৫.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯.৩৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকও পূর্বাভাস দিয়েছে, মূল্যস্ফীতির কারণে ২০২৫ সালে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ২১.২ শতাংশে পৌঁছাবে, যা হবে গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় আট লক্ষাধিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। কিন্তু এর মধ্যে প্রায় ৩৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পাসের পরও চাকরি পান না। এর অন্যতম কারণ হলো, শিক্ষার সঙ্গে প্র্যাকটিক্যাল স্কিলের ঘাটতি। বর্তমানে শুধু ডিগ্রি থাকলেই চাকরি মেলে না; দরকার বিষয়ভিত্তিক হার্ড স্কিল ও সফট স্কিলের সমন্বয়। উদাহরণস্বরূপ, কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষার্থী যদি প্রোগ্রামিং বা ডেটা অ্যানালাইসিসে দক্ষ না হয় তবে চাকরির বাজারে টিকে থাকা কঠিন।

বিডিজবস্‌এর ২০২৩ সালের এক জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৬৪ শতাংশ নিয়োগদাতা প্রার্থীর যোগাযোগ ও সমস্যা সমাধান দক্ষতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন। তাই সফট স্কিল, যেমনকমিউনিকেশন, টাইম ম্যানেজমেন্ট, লিডারশিপ ও টিমওয়ার্কসফল ক্যারিয়ারের জন্য অপরিহার্য। পাশাপাশি ইন্টার্নশিপ, ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর কার্যক্রম বা স্বেচ্ছাসেবী কাজে যুক্ত থাকা শিক্ষার্থীদের চাকরির সুযোগ দ্বিগুণ করে। বাস্তব অভিজ্ঞতা একজন প্রার্থীকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং নিয়োগদাতার কাছে মূল্যবান করে তোলে। এছাড়া ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা আজকের দিনে বিশেষ প্রয়োজনীয়, কারণ ফ্রিল্যান্সিং, সোশ্যাল মিডিয়া বা অনলাইন শিক্ষাদানের মাধ্যমে আয় করার সুযোগ এখন বহুল বৃদ্ধি পেয়েছে। আইসিটি ডিভিশনএর ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে প্রায় সাত লাখ পঞ্চাশ হাজার ফ্রিল্যান্সার কাজ করছেন। সুতরাং, বিশ্ববিদ্যালয় পাস করার পর বেকার না থাকতে হলে হার্ড ও সফট স্কিল অর্জন, ইন্টার্নশিপ করা এবং ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রস্তুতিগুলো একজন শিক্ষার্থীকে আত্মনির্ভর, দক্ষ ও সফল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

অর্থনীতিবিদরা বলেন, অর্থনীতির প্রকৃত উন্নয়ন দেখতে হলে বণ্টন ব্যবস্থায় ন্যায্যতা থাকতে হবে। একই সঙ্গে দেশের আর্থিক খাতে সুশাসন ফেরাতে বাজারে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বর্তমান অবস্থা থেকে আর্থিক উত্তরণে অর্থনীতিবিদরা ইতোপূর্বে কয়েকটি পথের সন্ধান দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, আর্থিক মন্দা থেকে প্রভাবমুক্ত হতে হলে সরকারের ব্যয় সংকোচন, সরকারিবেসরকারি ঋণ পুনর্গঠন, ধনীর সম্পদ গরিবদের মধ্যে পুনর্বণ্টন ও নগদ টাকা ছাপানো যেতে পারে। এ চার কর্মপদ্ধতি অর্থনীতির তুলনামূলক মসৃণ উত্তরণ ঘটানোর শ্রেষ্ঠ পথ।

এখন অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে যেখানে বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কিন্তু সেখানেও সুষম কর্মসংস্থান নিশ্চিতের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো গড়ে তুলতে হবে সুষমভাবে। বেসরকারি খাতের উপযোগী কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন মানব সম্পদের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। কাজের বাজারের চাহিদার সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থাকেও সংগতিপূর্ণ করা দরকার। প্রয়োজনে কারিগরি ও বিশেষায়িত শিক্ষার সমন্বয় করতে হবে।

তবে অর্থনীতির উন্নয়নে দীর্ঘ মেয়াদী মাস্টার প্ল্যান করার উদ্যোগ গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবার পর, বাংলাদেশের জন্য অসংখ্য সম্ভাবনা তৈরি হবে। ব্যবসা বাণিজ্য ও রপ্তানি খাতে চাহিদা তৈরি হবে নতুন পণ্যের। অর্থনীতির আকারও বড় হবে। সরকারের নেওয়া নানা অবকাঠামো প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ হলে বিদেশী বিনিয়োগও বাড়বে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে