৩০৩ দিন কারাগারে আটক থেকে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত বছরের ২ মে কাকরাইলে নিজ বাসা থেকে অজ্ঞাতপরিচয় ১৬-১৭ জন তাকে তুলে নিয়ে যায় বলে মুক্তির পর জানিয়েছেন কিশোর। গত বছরের ৫ মে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলায় কিশোরকে র্যাব হেফাজতে নেওয়া হয়। খবর বাংলানিউজের।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালের ৫ মে বেলা আড়াইটায় কাকরাইলের বাসা থেকে কার্টুনিস্ট কিশোরকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৩। তবে ২ থেকে ৫ মে পর্যন্ত কিশোরকে কারা কোথায় নিয়ে গিয়েছিল তা কেউই বলতে পারছেন না। ওই সময় কার্টুনিস্ট কিশোরের ওপর দফায় দফায় নির্যাতন চালানো হয় বলে জানিয়েছেন তিনি। কিশোরের অভিযোগ, অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নির্যাতনের পর র্যাব হেফাজত থেকে কারাগারে নেওয়ার পর দীর্ঘ ১০ মাসে সুচিকিৎসা পাননি তিনি।
গ্রেপ্তারের পর প্রথমে তাকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে, এরপর গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে রাখা হয়। একই কারাগারে ছিলেন লেখক মুশতাক আহমেদ। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে কারা হেফাজতে তার মৃত্যু হয়।
জামিনে মুক্ত কার্টুনিস্ট কিশোরের ভাই আহসান কবির বলেন, ৩০৩ দিন জেলে থাকার পর কিশোর বৃহস্পতিবার মুক্ত হয়েছে। আরও একজনের মুক্ত হবার কথা ছিল। তিনি মুশতাক আহমেদ। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। মুশতাক আহমেদের বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করছি। আমরা মুশতাককে কখনো ভুলব না।
তিনি বলেন, আমি যতদিন বেঁচে থাকব, ডিজিটাল আইনের কথা যত দিন মানুষের মনে থাকবে, বিনম্র শ্রদ্ধায় তারা মুশতাককে স্মরণ করবে। মুশতাক আহমেদ যেন ভালো থাকেন। নিপীড়নমূলক এই আইনটি যত তাড়াতাড়ি বাতিল করা হয় বাংলাদেশ ও জনমানুষের জন্য ততই মঙ্গল, বলেন কার্টুনিস্ট কিশোরের ভাই আহসান কবির।
কেমন আছেন কিশোর : বিডিনিউজ জানায়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাগারে থাকার ১০ মাসে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর ওজন হারিয়েছেন নয় কেজি, ডায়াবেটিসের মাত্রা বেড়েছে কয়েক গুণ, কানে পুঁজ জমে শুনতে সমস্যা হচ্ছে, ঠিকমতো হাঁটতে এবং চিন্তা করে কথা বলতেও তার সমস্যা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরপরই ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন কিশোর। চিকিৎসকরা সেখানে তার শরীর সারিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন; মনের ক্ষত কীভাবে সারবে, তা জানে না কিশোরের পরিবার। গত বছর যখন বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, তার আগে থেকেই ডায়াবেটিস ছিল কিশোরের, তবে তখন মাত্রা ছিল কম।
আহসান কবির জানান, সে সময় কিশোরের রক্তে চিনির পরিমাণ (র্যান্ডম ব্লাড সুগার) ১০ এর মতো থাকত, এখন তা ১৭ থেকে ২৫ এর মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসকরা কিশোরের কান ও চোখের পরীক্ষা দিয়েছেন। বাঁ পায়ের এঙরেও করতে বলেছেন। ওই পায়ে ব্যথার কারণে কিশোরের হাঁটতে কষ্ট হয়। মুক্তি পাওয়ার পর তার ভেতরে আরও কিছু সমস্যা তারা দেখতে পাচ্ছেন। কিছু জানতে চাইলে বলে আমি স্মরণ করে পরে বলছি। ঠিক ভুলে যাচ্ছে তা বলব না, তবে স্মরণ করতে সময় নিচ্ছে।