কোরবানি ঈদের আর বেশিদিন বাকি নেই। কোরবানিকে কেন্দ্র করে কামারপাড়ায় এখন শোনা যাচ্ছে লোহা পেটানোর ‘টুং–টাং’ শব্দ। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লোহা পিটিয়ে কামাররা তৈরি করছেন দা, বটি, ছুরি ও চাপাতি। এসব জিনিস দুই ধরনের লোহার উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয়। একটি স্প্রিং লোহা (পাকা লোহা) আরেকটি কাঁচা লোহা। স্প্রিং লোহার তৈরি সরাঞ্জাম খুব ভালো। তাই দামও একটু বেশি নেকামাররা। কামাররা জানান, লোহা ও কয়লার দাম গত বছরের চেয়ে এবার বেড়েছে। তাই গত বছরের চেয়ে এসব জিনিসের দামও বেশি। অন্যদিকে অনেক ক্রেতা পুরনোগুলোতে শান দিতেও নিয়ে আসছেন। তবে শান দেয়ার ব্যস্ততা এখন খুব বেশি নেই বলে জানান কয়েকজন কামার। এদিকে মাংস কাটার কাজে ব্যবহৃত কাঠের খাইট্টা (তেঁতুল গাছের টুকরো) ভ্যান গাড়িতে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। তবে এখন পর্যন্ত ক্রেতাদের খুব বেশি সাড়া মিলছে না। কোরবানির দু’তিন আগে এইসব কিনতে ক্রেতারা ভিড় করে বলে জানা গেছে।
গতকাল শুক্রবার নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার ও মোগলটুলি কামার পাড়া ঘুরে দেখা গেছে, দূর থেকেই পাওয়া যাচ্ছে হাপরের হাঁসফাঁস আর লোহা পেটানোর টুংটাং শব্দ। এর সাথে ছড়াচ্ছে আগুনের স্ফুলিঙ্গ। অনেক ক্রেতা কামারদের কাছে এনে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে। এর মজুরিও লোহাভেদে নির্ধারণ করা হয় হয় বলে জানা গেছে। অন্যদিকে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী দা, বটি, ছুরি ও চাপাতি তৈরিতে দম ফেলার ফুরসত নেই কামারদের। তবে বেশিরভাগ লোক কামারদের কাছ থেকেই লোহা কিনে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে। এছাড়া অনেকে রেডিমেট বানানো সরাঞ্জাম নিয়ে ঘরে ফিরে। এছাড়া অনেকে আসছেন পুরনো দা, ছুরি, বটি ও চাপাতি শান দিতে। কোরবানি ঈদের দু’তিনদিন আগে পুরোপুরিা ব্যস্ততা শুরু হবে জানান অজিত নামের এক কামার।
কয়েকজন কামার জানান, স্প্রিংয়ের দা, ছুরি, বটি ও চাপাতি ওজনের ভিত্তিতে বিক্রি করা হয়। তবে পিস হিসেবে কিনতে গেলে একটি ভালো মানের চাপাতির দাম পড়বে ৭০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। জবাই করার চুরি ৮০০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা, চামড়া ছাড়ানোর ছুরি পাওয়া যাবে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায়, বটি ৫০০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকায়। ফিরিঙ্গি বাজারে কামারপাড়ার সুনীল কর্মকার বলেন, কয়লা ও লোহার দাম প্রতি বছরই বাড়ছে। প্রতি কেজি লোহা কিনতে হচ্ছে ১২০–১৩০ টাকায়। এছাড়া কয়লার বস্তা কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকায়। তাই এসব সরাঞ্জাম বানাতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
দা–বটি কিনতে আসা ক্রেতা মারুফ চৌধুরী বলেন, ঈদের দু’তিন আগে কামাররা খুব ব্যস্ত থাকে। তাই তারা কোরবানির এসব সরাঞ্জাম ভালোভাবে না বানিয়ে ক্রেতাদের ডেলিভারি দেয়। তাই একটু আগেই এসেছি যাতে ভালোভাবে বানিয়ে নেয়া যায়।
মোগলটুলি এলাকার কামার বিনয় পাল বলেন, সারাবছর আমাদের প্রায় বসেই দিন কাটাতে হয়। বছরে একবার কোরবানি এলেই কাজের চাপ বেশি হয়। ঈদ চলে গেলে আমাদের সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়। তাই বাধ্য হয়ে তারা অন্য কাজ করতে হয়। বাপ–দাদার আমল থেকে এই কাজ করছি। তাই ছাড়তেও পারছি না।
অপরদিকে কোরবানির মৌসুম আসলেই পশুর মাংস কাটার কাজে ব্যবহৃত খাইট্টার প্রচুর চাহিদা থাকে। তাই মৌসুমী ব্যবসায়ীরা নগরীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ভ্যান গাড়িতে এইসব খাইট্টার পসরা সাজিয়ে বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন মাপের এসব খাইট্টা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৭০০ টাকার মধ্যে। বিক্রেতা রেজাউল ইসলাম বলেন, কাঠের মধ্যে তেঁতুল গাছের কাঠ অত্যন্ত শক্ত। কোরবান উপলক্ষে বিভিন্ন করাত মিল থেকে এইসব গাছের গুঁড়ি সংগ্রহ করে সাইজ মতো কেটে বিক্রি করি। তেঁতুল গাছে দা–চাপাতির কোপ পড়লেও তেমন একটা ক্ষতি হয় না। অন্যদিকে সাধারণ গাছের গুঁড়িতে কোপ পড়লে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টুকরা উঠে মাংসে লেগে থাকে। যা পরে মাংস থেকে ছড়াতে বেশ বেগ পেতে হয়। কিন্তু তেঁতুল গাছের কাঠ শক্ত ও মজবুত হওয়ায় সাধারণত এমন হয় না। তাই কোরবানির পশুর মাংস কাটতে এই তেঁতুল কাঠের খাইট্টা কিনে থাকেন। এখন পর্যন্ত বেচাকানা শুরু হয়নি। তবে কোরবানি ঈদের দু’তিন দিন আগে থেকে বেশ ভালো বিক্রি হয়।











