কক্সবাজারের চকরিয়ায় যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বিপরীত দিক থেকে আসা ওষুধ কোম্পানি স্কয়ার ফার্সাসিউটিক্যালসের একটি কাভার্ড ভ্যানের। এতে দুই গাড়ির সামনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে গিয়ে যাত্রীবাহী বাসটি সড়ক থেকে খাদে ধানক্ষেতে গিয়ে পড়ে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নের উত্তর হারবাং লাল ব্রিজের কাছে আরএফএল’র ডিপোর পাশে ঘটে এই দুর্ঘটনাটি। এ সময় কাভার্ড ভ্যানের দুই চালকসহ ঘটনাস্থলেই তিনজন প্রাণ হারান। আশঙ্কাজনক অবস্থায় যাত্রীবাহী বাসের চালককে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে কর্ণফুলী এলাকায় মারা যান তিনি। এ নিয়ে ভয়াবহ এই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন চারজন। তদ্মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন।
ঘটনাস্থলে নিহতরা হলেন– চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকার নুরুল আমিনের পুত্র ওষুধ কোম্পানির কাভার্ড ভ্যান চালক আব্দুস শুক্কুর মুন্না (৪১), চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী দক্ষিণ হাশিমপুর গ্রামের রশিদ আহমেদের পুত্র বশির আহমদ (৩৫) ও চকরিয়া পৌরসভার পালাকাটা গ্রামের আবদুল আলীর কন্যা রুবিদা আক্তার (২৬)। এছাড়াও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান যাত্রীবাহী বাসের চালক আবদুল মান্নান (৩৫)। তিনি চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নের হারবাং গ্রামের শামসুল ইসলামের পুত্র। অপরদিকে বাসের আরও পাঁচজন যাত্রী সামান্য আহত হলে তারা চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরেন।
মহাসড়কের বানিয়ারছড়াস্থ চিরিঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যাত্রীবাহী ঈগল পরিবহনের বাসটি (চট্টমেট্রো–জ–১১–০১৩৬) চকরিয়া থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সকাল ১০টার দিকে বাসটি চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার উত্তর হারবাং লালব্রিজের কাছে আরএফএল’র ডিপোর সামনে গেলে বিপরীত দিক থেকে দ্রুতগতিতে আসা স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এর কাভার্ড ভ্যানের (ঢাকামেট্রো–ম–১১–৬৭২০) সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় মহাসড়ক থেকে ছিটকে পাশের খাদে ধানক্ষেতে গিয়ে পড়ে যাত্রীবাহী বাসটি। এতে হতাহতের ঘটনাটি ঘটে।
এদিকে ভয়াবহ এই সড়ক দুর্ঘটনার পর মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে চিরিঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় যাত্রীবাহী বাস থেকে হতাহতদের উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। এ সময় ক্রেন দিয়ে কাভার্ড ভ্যানটি সরিয়ে নিয়ে প্রায় আধঘণ্টা পর মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফখরুল ইসলাম, চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. রকীব উর রাজা, চকরিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী, চিরিঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি মাহবুবুল হক ভূঁইয়া ও হারবাং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মেহরাজ উদ্দিন।
চিরিঙ্গা হাইওয়ে থানার উপ–পরিদর্শক (এসআই) বেনু ভূষণ দাশ জানান, দ্রুতগতির গাড়ি দুইটির সংঘর্ষ এতই ভয়াবহ ছিল যে, যাত্রীবাহী বাসটি সড়ক থেকে খাদে ধানচাষের জমিতে গিয়ে পড়ে। এতে দুই গাড়ির সম্মুখভাগ দুমড়ে–মুচড়ে যায়। দুর্ঘটনায় দুই গাড়ির চালকই নিহত হয়েছেন। এছাড়াও এক নারীসহ বাসের আরও দুই যাত্রী নিহত হন।
মহাসড়কের বানিয়ারছড়াস্থ চিরিঙ্গা হাইওয়ে থানা পুলিশের ওসি (ইন্সপেক্টর) মাহবুবুল হক ভূঁইয়া দৈনিক আজাদীকে জানান, ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় নিহত চারজনের পরিচয় শনাক্তের পর আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট আইনে থানায় মামলা রুজু এবং দুর্ঘটনায় পতিত গাড়ি দুটি জব্দ করা হয়েছে।