কাপ্তাই হৃদের পানির পরিমাপের হিসাব রাখার রুলকার্ভ অনুযায়ী গতকাল হ্রদে পানি থাকার কথা ৮৫ মিটার এমএসএল (মিন সি লেভেল)। কিন্তু গতকাল পানি ছিল ৭৭ মিটার এমএসএল। স্বাভাবিকের চেয়ে ৮ মিটার এমএসএল পানি কমে যাওয়ার প্রভাব প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরের বন্দর নগরীতে প্রভাব ফেলছে। হ্রদে পানি কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। ওয়াসার পানিতে লবণাক্ততা বাড়ছে। গ্যাসের পাশাপাশি পানির অভাবে নগরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা তছনছ করে দিচ্ছে। হ্রদে পানি কমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র শুধুমাত্র ‘নামকাওয়াস্তে’ চালু রয়েছে।
অপরদিকে হ্রদের পানি কমে যাওয়ার ফলে ভাটার সময় ওয়াসা কর্ণফুলী নদী থেকে পানি নিতে পারছে না। এতে ওয়াসার পানি উৎপাদনও দৈনিক প্রায় দশ কোটি লিটার কমে গেছে।
সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরের কাপ্তাই হ্রদ নগরীর বিদ্যুৎ এবং পানির অন্যতম নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। কাপ্তাই হ্রদের পানির উপর কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরি নির্ভরশীল। হ্রদে পর্যাপ্ত পানি থাকলে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট চালু থাকে এবং এখানে উৎপাদিত ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ সরবরাহ নেটওয়ার্কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ৭২৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের কাপ্তাই হ্রদের পানির উপর নির্ভর করে ওয়াসার পানি উৎপাদনের বড় অংশ। হ্রদ থেকে ছাড়া পানির পরিমাণ কমে গেলে সাগরের লোনা পানি কর্ণফুলীর উজানে চলে আসে। তখন লবণাক্ততার জন্য ওয়াসা কর্ণফুলী নদী থেকে পানি উত্তোলন করতে পারে না। ফলে বন্ধ হয়ে যায় ওয়াসার পানি উৎপাদন। কাপ্তাই হ্রদ থেকে পানি ছাড়া হলে কর্ণফুলীতে লবণাক্ত পানির প্রবাহ থাকে না। তখন ওয়াসার পানি উত্তোলন প্রক্রিয়া সচল থাকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, গতকাল রুলকার্ভ অনুযায়ী কাপ্তাই হ্রদে ৮৫ মিটার এমএসএল পানি থাকার কথা, অথচ তা কমে ৭৭ মিটার এমএসএলে ঠেকেছে। বৃষ্টি না হওয়ায় হ্রদে পানি কমে গেছে। পানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শুধুমাত্র একটি ইউনিট আংশিক উৎপাদনে রয়েছে। ওই ইউনিট স্বাভাবিক সময়ে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেও এখন পানি কম ছাড়ার ফলে উৎপাদন করছে মাত্র ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। স্বাভাবিকের তুলনায় কম পানি ছাড়ার ফলে কর্ণফুলী নদীর প্রবাহে তেমন ভূমিকা রাখতে পারছে না। ফলে লবণাক্ত পানি বেশ উজান পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। এই অবস্থায় চট্টগ্রাম ওয়াসা ভাটার সময় নদী থেকে পানি নিতে পারছে না। ফলে ওয়াসার পানি উত্তোলন প্রক্রিয়া হুমকির মুখে পড়েছে। দৈনিক প্রায় ৫০ কোটি লিটার পানি উৎপাদনের স্থলে ওয়াসার পানি উৎপাদন ৪০ কোটি লিটারে নেমে এসেছে। শুধুমাত্র হ্রদের স্বাভাবিক পানি না থাকায় ওয়াসাকে এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
হ্রদে পানি কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ এবং পানি উৎপাদন কমে যাওয়ায় তা নগরজীবনে মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। বিদ্যুতের লাগামহীন লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানির অভাবও প্রকট হয়ে উঠেছে। পাহাড়ে ভারী বৃষ্টি না হলে এই অবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে না বলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গতকাল দৈনিক আজাদীকে জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম গতকাল আজাদীকে বলেন, কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় আমাদেরকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। ভাটার সময় পানি নিতে পারছি না। ফলে পানি উৎপাদন এবং সরবরাহ কমেছে। লবণাক্ততা ঠেকানোর জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। তিনি জানান, হ্রদে পানি বাড়লে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তবে এর জন্য ভারী বৃষ্টিপাতের অপেক্ষা করতে হচ্ছে।