কাপ্তাই প্রজেক্টে অত্যন্ত নিরাপদ এলাকায় পাহাড়ের উপরে অবস্থিত বিদ্যুৎ ভবনের রেস্ট হাউস। ভবনে রয়েছে কাঁচের দরজা–জানালা। এর ভেতরে বসলে সমগ্র কাপ্তাই প্রজেক্ট এলাকা বিশেষ করে কাপ্তাই বাঁধ স্পষ্ট দেখা যায়। সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সরকারি কাজে কাপ্তাই আসলে তারা এই ভবনে অবস্থান করেন। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে সেখানে হানা দেয় একদল বন্য হাতি। তারা ভবনের কাঁচের দরজা–জানালা ভেঙে সেখানে প্রবেশ করলে অতিথিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, বন্য হাতির দল প্রায় সময় বিদ্যুৎ ভবন এলাকায় এসে পড়ে। আগে একাধিকবার বিদ্যুৎ ভবনের পাশে এসে তাদের দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। কিন্তু এবার হাতির পাল বিদ্যুৎ ভবনে হানা দিয়ে দরজা জানালা ভেঙে ফেলে। এসময় বিদ্যুৎ ভবনে উপস্থিত অতিথি এবং কর্মচারীরা ভীত–সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে দ্রুত কাপ্তাই দমকল বাহিনীর সদস্যরা বিদ্যুৎ ভবনে আসেন।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, বন্য হাতি আক্রমণ চালিয়ে বিদ্যুৎ ভবনের দরজা জানালাসহ অন্যান্য স্থাপনা ভেঙে ফেলার খবর পেয়েছি। এর আগেও কয়েকবার বন্য হাতি বিদ্যুৎ ভবন এলাকায় আসে। তখন কোনো ক্ষয়–ক্ষতি না করলেও এবার তারা ভবনের দরজা জানালা ভাঙচুর করেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বন বিভাগের কাপ্তাই রেঞ্জ কর্মকর্তা এএসএম মহিউদ্দিন বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় ১০–১২টি বন্য হাতি দল বেঁধে কাপ্তাই প্রজেক্টের বক্স হাউজে এসে পড়ে বলে আমরা খবর পাই। সাথে সাথে দমকল বাহিনী এবং পুলিশ সদস্যদের সাথে নিয়ে কৌশলে হাতিগুলো তাড়িয়ে দিই। কিন্তু ভোরে বন্য হাতির দল বিদ্যুৎ ভবনে এসে হামলা চালায়। তাদের আক্রমণে বিদ্যুৎ ভবনের দরজা জানালার কাঁচ ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে তিনি আরো বলেন, আসলে বন্য হাতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার কোনো সুযোগ নেই। হাতি লোকালয়ে এসে পড়লে তাদের কিভাবে তাড়াতে হবে সেটা অনেকেরই জানা নেই। স্থানীয়দের নিয়ে বন বিভাগের পক্ষ থেকে ২টি স্বেচ্ছাসেবী টিম গঠন করার প্রক্রিয়া চলছে। এই ২টি টিমকে বন্য হাতি তাড়ানোর উপায় এবং বন্য হাতি যাতে সহজে লোকালয়ে আসতে না পারে সে ব্যাপারে বন বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। লোকালয়ে যাতে বন্য হাতি আসতে না পারে সেজন্য অনেক আগেই সোলার ফেঞ্চিং বসানো হয়েছিল। সেই সোলার ফেঞ্চিংকে আরো আধুনিকায়ন এবং আরো কার্যকর করার ব্যাপারেও বন বিভাগের পক্ষ থেকে কাজ করা হচ্ছে।
কাপ্তাই রেঞ্জের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, বন্য হাতি কিন্তু তার জায়গাতেই আছে। বরং আমরা বন্য হাতির জায়গা দখল করে অফিস–আদালত, কল–কারখানা, আবাসিক ভবন, বিশ্রামাগার প্রতিষ্ঠা করে আরামে বসবাস করছি। বন সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়ায় বনে হাতি পর্যাপ্ত খাবার পচ্ছে না। তাই বন্য হাতি লোকালয়ে এসে পড়ছে। তিনি সবাইকে সতর্কতার সাথে এলাকায় বসবাস করার পরামর্শ দেন।